এফএনএস আন্তার্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। মঙ্গলবারের এক দিনের হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩২ জন ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে রয়েছে শিশু ও নারী। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর ২০২৩ থেকে চলমান আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ২৬৬ জনে, আর আহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৯১-এ।
মঙ্গলবার ইসরায়েলি বাহিনী গাজার খান ইউনিস শহরে একটি আবাসিক ভবনে হামলা চালায়। আগুনে পুড়ে মারা যান এক পরিবারের ১১ সদস্য। একইদিনে গাজা শহরের পশ্চিমাঞ্চলে বোমাবর্ষণে নিহত হয়েছেন সাতজন, যারা নিজ বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরেও হামলায় প্রাণ গেছে তিনজনের, যাদের মধ্যে ছিল দুই শিশু।
ইসরায়েলি বাহিনী গাজা শহরের আল-ডোরা পেডিয়াট্রিক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রেও গোলাবর্ষণ করেছে। হাসপাতালের সৌরপ্যানেল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় সংকট আরও গভীর হয়েছে। ধ্বংসস্ত‚পের নিচে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিও টার্গেট করে ধ্বংস করা হয়েছে। এই নিরস্ত্র এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ থাকলেও কার্যকর প্রতিরোধ বা নিন্দা চোখে পড়ছে না।
জাতিসংঘের হিসাব বলছে, গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ ইতোমধ্যে বাস্তুচ্যুত, এবং ৬০ শতাংশ অবকাঠামো সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়েছে। গাজার ভেতরে ঢোকার অপেক্ষায় থাকা প্রায় তিন হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক ইসরায়েলের অনুমতির অভাবে সীমান্তে আটকে আছে। খাদ্য, পানি, জ্বালানি ও ওষুধের অভাবে জনগণের দুর্দশা চরমে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদনকারী ফ্রানচেস্কা আলবানিজে একে “যুদ্ধাপরাধ” বলে আখ্যায়িত করেছেন।
১৯ জানুয়ারি কার্যকর হওয়া সাময়িক যুদ্ধবিরতি ইসরায়েলের পুনরায় আক্রমণে ধ্বংস হয়ে গেছে। গত ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই নতুন ধাপে প্রায় ১,৯০০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৫ হাজার। এই বর্বরতা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) দৃষ্টি এড়ায়নি। এরই মধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।