এফএনএস আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের গুজরাট রাজ্যে গত শনিবার ভোর রাত থেকে শুরু হওয়া কথিত ‘বাংলাদেশি’ অনুপ্রবেশকারীদের ধরপাকড় অভিযানে নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়েছে সেখানকার মুসলিম অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে। পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত প্রায় ৬,৫০০ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে শুধুমাত্র ৪৫০ জনের ক্ষেত্রে তাদের বাংলাদেশি পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এই অভিযানের পেছনে মূল যুক্তি হিসেবে গুজরাট পুলিশ বলছে, সন্দেহভাজনদের পরিচয়পত্র যাচাই করা হচ্ছে এবং সীমান্তবর্তী রাজ্য থেকে দল পাঠিয়ে নথির সত্যতা খতিয়ে দেখা হবে। তবে এই অভিযানে ভারতীয় নাগরিকদেরও ব্যাপকভাবে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে, যার বেশিরভাগই পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাওয়া মুসলিম পরিযায়ী শ্রমিক।
গুজরাটের সুরাটে এমব্রয়ডারির কাজ করেন পশ্চিমবঙ্গের বীরভ‚ম জেলার সুলতান মল্লিক। তার স্ত্রীর বর্ণনা অনুযায়ী, রাত ৩টার দিকে পুলিশ হানা দিয়ে পরিবারের নথি দেখতে চায়। নথি দেখানোর পরও তাকে এবং দুই ভাগ্নেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের কাছে পাসপোর্ট, জমির দলিলসহ সমস্ত নথি থাকা সত্তে¡ও তিনদিনেও মুক্তি মেলেনি। সুলতানের স্ত্রী সাহিনা বিবি বলেন, “শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে গেছেন, মেয়েটা মূর্ছা গেছে, এখন কোথায় যাব জানি না।”
আহমেদাবাদে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মহারাষ্ট্র থেকে এসেছিলেন ফারজানার আত্মীয়রা। বাংলাভাষীও নন তারা। তবু বরযাত্রীদের পুলিশের সন্দেহে আটক করা হয়। রাত ১০টার দিকে নথি যাচাই করে ছাড়া দেওয়া হলেও তাদের আতঙ্ক ও অপমানের অভিজ্ঞতা সহজে ভুলবার নয়।
আহমেদাবাদের আলম আরা পাঠান জানিয়েছেন, তার ছেলে ও পুত্রবধূকে শ^শুরবাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। ২৩ বছর ধরে একই এলাকায় বাস করছেন তারা, নথিপত্রও সম্পূর্ণ। তবু দিনভর পুলিশের দপ্তরে বসে থাকতে হয়েছে মুক্তির আশায়।
‘পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ’ জানিয়েছে, শুধু গুজরাটেই নয়, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাজ্যেও পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান পরিযায়ী শ্রমিকরা ‘বাংলাদেশি’ অপবাদে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।
ক্স ১৮ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের কুশিনগরে ২৩ জন ফেরিওয়ালাকে মারধর করে স্থানীয়রা।
ক্স ২১ এপ্রিল ওড়িশার জসিপুরে ৬০ জন শ্রমিককে ফিরতে বাধ্য করা হয়।
ক্স ঈদের পরে মুর্শিদাবাদের এক ফেরিওয়ালাকেও ভদ্রক টাউনে হেনস্তা করা হয়।
সংগঠনের দাবি, যাদের আটক করা হয়েছে তাদের অনেককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে পেশ না করেই আটক রাখা হচ্ছে, যা ভারতের আইনের লঙ্ঘন।
চান্দোলা লেক এলাকায় ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিচ্ছে প্রশাসন। মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের জরিপে ‘অবৈধ নির্মাণ’ চিহ্নিত করে প্রায় ৫০টি বুলডোজার ও ২ হাজার পুলিশ মোতায়েন করে ঘর ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে।
পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের প্রধান আসিফ ফারুক বলেন, “২০১৪ সাল থেকে এসব ঘটছে, কিন্তু সম্প্রতি এসবের সংখ্যা বেড়েছে। কথায়, ধর্মে বা পোশাকে মিল থাকলেই কাউকে বাংলাদেশি ট্যাগ দিয়ে হেনস্তা করা হচ্ছে। আমরা কি ভারতের নাগরিক নই? তাহলে কেন শুধু বাংলাভাষী মুসলিম হলেই প্রশ্নবিদ্ধ হতে হবে?”। বিবিসি বাংলা