এফএনএস বিদেশ : ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট কলম্বিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে গেরিলাদের হামলায় ১১ সেনা নিহত হওয়ার ঘটনায় শনিবার থেকে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন। কলম্বিয়ায় উৎপাদিত কোকেন পাচারের সাথে জড়িত উভয় দেশেই সহিংসতা বৃদ্ধির মধ্যে শুক্রবারে এই হামলা হয়। কিটো থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে। ইকুয়েডরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় ৮০ জন সৈন্যের একটি দল ইকুয়েডরের আমাজনে অবৈধ খনির বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সময় তাদের উপর এ হামলা হয়। হামলায় ১১ সেনা ও একজন হামলাকারী নিহত হন এবং আরও একজন সেনা আহত হন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দেশটির সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার কলম্বিয়ার ভিন্নমতাবলম্বী এফএআরসি গেরিলারা বিস্ফোরক, গ্রেনেড ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে অতর্কিত এ হামলা চালায়। ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ বলেন, ‘আমরা দোষীদের খুঁজে বের করব এবং তাদের নির্মূল করব।’ প্রেসিডেন্সির পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিহত সেনাদের সম্মানে শনিবার থেকে শুরু হওয়া জাতীয় শোক সোমবার পর্যন্ত চলবে। নিহতদের একজনের আত্মীয় জার্মান ফের্নান্দো এএফপিকে বলেন, এ ঘটনায় আমি দুঃখিত কিন্তু একই সঙ্গে গর্বিত। কারণ তিনি দেশকে রক্ষার দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই প্রাণ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং অপরাধীদের অবস্থান শনাক্ত করা হোক। রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলির দফতর জানায়, নিহতদের লাশ কিটোতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে রাজধানীর একটি সামরিক স্কুলে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্মরণসভার আয়োজন করা হবে। প্রসিকিউশনের মতে, পূর্বাঞ্চলীয় ওরেল্লানা প্রদেশে সংঘটিত এই হামলার জন্য এফএআরসি-এর একটি ভিন্নমতাবলম্বী গোষ্ঠী ‘কমান্ডোস দে লা ফ্রোন্তেরা’ (সীমান্ত কমান্ডো) দায়ী। লাতিন আমেরিকার এক সময়ের বৃহত্তম গেরিলা গোষ্ঠী এফএআরসি ২০১৬ সালে কলম্বিয়া সরকারের সঙ্গে ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করলেও, এর কিছু অংশ এখনো অস্ত্র ধরেই অবৈধভাবে খনি খনন ও মাদক পাচারের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তারা বর্তমানে কলম্বিয়া ও ইকুয়েডরের সীমান্ত অঞ্চলে মাদক পাচারে বেশ সক্রিয়। শান্তি ও পুনর্মিলন ফাউন্ডেশনের গবেষক লরা বোনিয়া এএফপিকে বলেন, ‘২০১৭ সালে এফএআরসি’র নিরস্ত্রীকরণের পর প্রায় দেড় বছরের মধ্যে এই গোষ্ঠী আবার অস্ত্র ধারণ করে এবং তাদের প্রভাব দ্রæত বাড়তে থাকে।’ তিনি বলেন, ‘না কলম্বিয়া, না ইকুয়েডর কোনো দেশই এসব অঞ্চলে যথাযথ নিরাপত্তা বা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারেনি।’ কলম্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এক্স-এ বলেন, ‘শুক্রবারের এই হামলা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সংগঠিত হুমকি তুলে ধরে। তাদের অপরাধমূলক সহিংসতা অগ্রহণযোগ্য এবং রাষ্ট্রের পূর্ণ শক্তি দিয়ে এর মোকাবিলা করতে হবে।’ ইকুয়েডরের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ‘দায়ীদের আইনের সামনে বিচার না করা এবং জবাবদিহি না করা পর্যন্ত তারা বিশ্রাম নেবে না।’
প্রতি ঘণ্টায় এক হত্যা : এক সময় শান্তিপূর্ণ ইকুয়েডরে চলতি বছরের শুরুতে গড় প্রতি ঘণ্টায় একটি হত্যাকাÐ ঘটেছে, যা প্রমাণ করে—কোকেন পাচারের পথ দখলকে কেন্দ্র করে সংঘবদ্ধ অপরাধ চরমে পৌঁছেছে। চরম আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সত্তে¡ও প্রেসিডেন্ট নোবোয়ার কড়াকড়ি নীতির অধীনে ইকুয়েডর এখন লাতিন আমেরিকার সর্বোচ্চ হত্যার হারযুক্ত দেশ। প্রেসিডেন্টের দেওয়া তথ্যমতে, দেশটিতে বর্তমানে ৪০ হাজার গ্যাং সদস্য রয়েছে, যা কলম্বিয়ার ২২ হাজার মাদক পাচারকারী ও বিদ্রোহীর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। কলম্বিয়ায় ‘সীমান্ত কমান্ডো’ গোষ্ঠী বর্তমানে সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় রয়েছে, তাদের সাথে পরবর্তী ধাপের বৈঠক চলতি মাসের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।