বিলাল হুসাইন নগরঘাটা থেকে ঃ মোটা চাউলের ভাত আর তাঁতের শাড়ি ছিলো এক সময়ের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। নববধূর জন্য কিনতে হত উন্নতমানের নকশি করা তাঁতের শাড়ী। বরপক্ষ নববধূর পছন্দের তাঁতের শাড়ি ক্রয় করতে বের হতে হতো বিভিন্ন গ্রামে । ঘরে ঘরে তাঁত বোনার খটখট শব্দে মুখরিত ছিলো এক সময় গ্রাম জুড়ে। কারিগররা রাত জেগে শুঁতা আটানো, রং করা, কাপড়ে মাড় দেওয়াসহ নানান কাজে ব্যস্ত সময় পার করতে হতো তাদের। এরপর সকাল হলেই কারিগররা বুনতে বসতো তাঁত। শাড়ি, গামছা এবং লুঙ্গি এই ৩ ধরনের কাপড় বুনতে দেখা যেতো তাদের। তাই অন্য কোনো কাজের ব্যবস্থা না থাকায় এই তাঁত শিল্পের প্রতি ছিলো তাদের বেশ মনোনিবেশ। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক শিল্পের সাথে তাল মিলিয়ে উঠতে না পেরে এ শিল্পটি আস্তে আস্তে গ্রাম থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কারিগররা জানান এক সময় তাদের একমাত্র আয়ের উৎস ছিলো এই তাঁতশিল্পটি। যেটা দিয়ে তাদের সংসার খরচ মিটিয়ে ছেলে মেয়েদের পড়া লেখার খরচ জুগিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে এই তাঁতশিল্পের কাজে তেমন একটা লাভবান না হওয়ায় এ পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে সবাই। প্রকারন্তরে তারা বেঁচে নিয়েছে নানান ধরনের পেশা । তবে বাপ -দাদার এ পেশাকে আকড়ে ধরে রাখতে না পারলেও এ শিল্পের সকল পরিত্যাক্ত সরঞ্জামাদি ঘরের আঙিনায় ঝুলিয়ে রেখেছে স্মৃতি হিসেবে । দৈনিক দৃষ্টিপাতের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের মোঃ আরশাদ হোসেন জানান, এক সময় এই রাজনগর গ্রাম জুড়ে ছিলো তাঁতশিল্পের এক মহা উৎসব। কিন্ত সময়ের পালাক্রমে আস্তে আস্তে গ্রাম থেকে এ তাঁতশিল্পটি একেবারে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এছাড়া বল্দিপাড়া,মোকন্দপুর,নগরঘাটা,পাঁচপাড়া,বাশদহ,পরানদাহ,ভাদিয়ালি,ঝাউডাঙা, মাধবকাটি,চুপড়িয়া, ঘোনা, হাজিপুর,পাথরঘাটা,মুরালিকাটি,গোপিনাথপুর, মাহমুদপুুর,হাজরাপাড়া,ভারশাহ,তৈলকুপি,ঝুগিপুকুর,বারাত, মীর্জাপুর এবং নলতা গ্রামে এই তাঁতশিল্পের ব্যাপক প্রচলন ছিলো। কিন্তু এখন আর আগের মত সেই ভাবে গ্রামে গ্রামে তাঁত শিল্পের ব্যাপকতা দেখা যায় না । তবে নলতার গামছা এক সময়ে ব্যাপক পরিচিতি ছিলো । কারিগররা জানান বর্তমানে রং এবং শুঁতার মূল্য বৃদ্ধির কারণে এ শিল্পের প্রতি পড়েছে চরম খড়গ। ফলে লাভের পরিবর্তে লোকসানের দিকটা ভারী হওয়ায় এ শিল্পের মূখ থুবড়ে পড়েছে। এছাড়া তিনি জানান গার্মেন্টস শিল্পের তৈরির পোশাক বাজারজাত করা কারণে এ শিল্পটির ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তবে একই গ্রামের মোঃ আব্দুল গনি জানান তাঁতশিল্পের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে আমাদেরকে ২ বার লোন দেওয়া হয়েছে। একবার সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে এবং দ্বিতীয়বার সাবেক প্রেসিডেন্ট এ,এইচ,এম এরশাদের শাসনামলে। তবে তিনি অত্যন্ত দৃড়তার সাথে জানান বর্তমানে সরকারের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তোবা এ শিল্পটি নতুন করে দাঁড় করানো সম্ভব বলে তারা মনে করেন।