মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ১১:৪১ পূর্বাহ্ন

ঘূর্ণিঝড় রিমেলের প্রভাবে ভাল নেই চিংড়ী

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ৩ জুন, ২০২৪

দৃষ্টিপাত রিপোর্ট ॥ ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় রিমেলের আঘাতে দেশের বৈদেশিকমুদ্রা উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম চিংড়ী শিল্পে তার তান্ডবের প্রমান রেখে গেছে। সম্ভাবনাময় এই শিল্পকে ক্ষত,বিক্ষত বিপর্যস্থ করে গেছে। হাজার হাজার চিংড়ী ঘের তলিয়ে গেছে সেই সাথে ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে নদীর সাথে একাকার হয়েছে উপকুলীয় এলাকার চিংড়ী ঘেরগুলো। দেশের সাতক্ষীরা, খুলনা এবং বাগেরহাট জেলায় শতশত কোটি টাকার চিংড়ীর ক্ষতি সাধন হয়েছে। হজারো চিংড়ী ও ঘের ব্যবসায়ীরা সর্বশান্ত হয়ে লোকসানের সাথে আরও একাকার সম্পৃক্ত হয়েছে। দেশের বৈদেশিকমুদ্রা উপার্জনের অন্যতম খ্যাত হিসেবে সর্বাধিক এগিয়ে থাকা এ অঞ্চলের চিংড়ী চাষীরা গত বছর ভাইরাস, রেনু মুল্য বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ীর দামহ্রাস পাওয়ায় ব্যাপক ভিত্তিক ক্ষতির মুখে তার উপর সদস্য ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমেলের প্রভাবে দ্বিতীয় দফায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস এর প্রবাব এতটুকু বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যে চিংড়ী ঘের গুলোর সিংহভাগ কেবল নদীর সাথে একাকার হয়েছে তা নয় চিংড়ী ঘেরের বাসাবাড়ী সহ অবকাঠামোগত ক্ষতি সাধিত হয়েছে। একাধিক ঘের ব্যবসায়ী জানান চিংড়ী মৌসুম শুরু হওয়ার প্রাক্কালে বড় ধরনের ধাক্কা খেতে হলো। অধিকাংশ চিংড়ী ঘেরের উৎপাদিত চিংড়ী ধরা ও বাজার জাতকরন দৃশ্যতঃ শুরু হয় মেমাসের মাঝামাঝিসময়ে আবার মে মাসের শেষ দিকেও চিংড়ী বাজারজাত করনের সময় এসে উপস্থিত হয়, এক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় রিমেল মোখ্যম সময়ে আক্রমন চালিয়েছে। বছরের শুরুতে এ বছর রেনু পোনার আকাশচুম্বী মূল্য এবং অপ্রতুলতার কারনে ঘের ব্যবসায়ীরা অধিক অর্থ ব্যয় করে ঘেরেচিংড়ী রেনু অবমুক্ত করেন। এমনিতেই জজমির হারির মূল্য শ্রমিক মুজুরীূ,নৈশ প্রহরী পরিচর্যা খরচ,চিংড়ীখাদ্যের মুল্য বৃদ্ধি সহ বহুবিধ খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় চিংড়ী ওঘের ব্যবসায়ীরা ভাল নেই সেই মুহুর্তে ঘূর্ণিঝড়ের কল্যানে চিংড়ী শিল্পে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের বিপর্যয়। চিংড়ীর পাশাপাশি হাজার হাজার সাদা প্রজাতির মাছের ঘেরের মাছ ভেসে গেছে ঘূর্ণিঝড় রিমেলের কারনে। সাতক্ষীরার বিস্তীর্ণ জলা ভূমিতে সাদামাছ চাষ হয়ে আসছে এবং উক্ত উৎপাদিত সাদা প্রজাতির মাছ সাতক্ষীরার চাহিদা পুরন পরবর্তি রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার চাহিদা পুরন করছে। সাতক্ষীরার বাস্তবতায় চিংড়ী ঘেরের পাশাপাশি ছোট বড় শতশত সাদা মাছের ঘের গুলোতে মিঠা পানির উপস্থিতিতে মাছ চাষহয়ে আসছে। ঘূর্ণিঝড় রিমেলের কল্যঅনে সাদা প্রজাতির ঘের গুলো তলিয়েও ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার পাশাপাশি মিষ্টি পানির সাদামাছের ঘেরগুলোতে লবনাক্ত পানি প্রবেশ করায় সর্বাধিক ক্ষতি ও লোকসানের মুখে ব্যবসায়ীরা। মিষ্টি পানিতে লবনাক্ত পানির সংমিশ্রন ঘটায় শতশত সাদা মাছের ঘেরে মাছ মরেছে। ঘূর্ণিঝড় রিমেল এতটুকু বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে এবং ঘের গুলো চিংড়ী শুন্যতার দিকে নিয়েছে ঝড়ের পরে পূর্ণিমা গোনের সময়গুলেঅতেঘেরের চিংড়ী ধরা পড়ায় চিংড়ী শুন্যতার দিকেই ধাবিত হয়েছে এমনটি আশঙ্কা করছেন ঘের ব্যবসায়ীরা।জেলার মৎস্য আড়ত ও ডিপোগুলোতে এই সময়ে চিংড়ীতে পরিপূর্ণ থাকে। ভ্যান কি ভ্যান, ব্যাগ কি ব্যাগ ভর্তি চিংড়ী নিয়ে ঘের ব্যবসায়ীরা বাজারজাত করনের জন্য আসলেও বর্তমানে সেই চিরচেনা দৃশ্যের অনুপস্থিতি বলেই দিচ্ছে ঘূর্ণিঝড় রিমেল চিংড়ী শিল্পকে মারাত্মক ভাবে আহত করেছে। জেলার দেবহাটার পারুলিয়া গ্রামের ঘের ব্যবসায়ী একরামুল কবির জানান আমার চিংড়ী ঘেরের আয়তন দুই একর ইতিমধ্যে তিন চালান রেনু ঘেরে অবমুক্ত করেছি, এই মাসের মধ্য মেতে বাজারজাত করনের সময় ছিল কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রিমেল এর আঘাতে চিংড়ী ঘেরের চিংড়ীকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতি সাধন করেছে। দেশের সাতক্ষীরা,খুলনা ও বাগেরহাট জেলার সর্বাধিক চিংড়ী উৎপাদিত হয় এবং আমাদের রপ্তানী করা চিংড়ীর সিংহ ভাগ এই তিন জেলার। কিন্তু এবার ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসতে পারে এমন আশঙ্কা ঘের মালিক,চিংড়ী ব্যবসায়ী সহ এই পেশার সাথে সংশ্লিষ্টদের। গত আট বছর ২০২২-২৩ এই তিন জেলায় এক লাখ পঁচিশ হাজার টন চিংড়ী উৎপাদন হয়েছিল, সেই ধারাবাহিকতায় রিমেলের প্রবাবে উৎপাদন হ্রাস পাবে এমনটি সহজেই অনুমেয়, অধিকাংশ চিংড়ীরা ঋন দেনা করে, ব্যাংক ঋন এনজিও ঋন ও মহাজনের সুদের টাকায় চাষাবাদ করছে বিধায় রিমেলের প্রভাবে তাদের যে লোকসানের মুখো মুখি হতে হয়েছে এ থেকে পরিত্রান পেতে চিংড়ীচাষীদেরকে বিনা সুদে অথবা সহনীয় লাভে ঋন প্রদানের বিকল্প নেই। ঋন পেলে চিংড়ী চাষীরা নতুন ভাবে চাষাবাদ করে নিশ্চয়ই ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com