এফএনএস: ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী যে বর্বর গণহত্যা চালাচ্ছে এর প্রতিবাদে ডাকা ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি গণজমায়েতের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ জনতার উপস্থিতিতে গাজাবাসীর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে ঘোষণাপত্র পাঠ শেষে মোনাজাতের মাধ্যমে এই কর্মসূচি সম্পন্ন হয়। সবার পক্ষে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। এরপর বিকাল সোয়া ৪টার দিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আব্দুল মালেকের মোনাজাতের মাধ্যমে এই কর্মসূচি সম্পন্ন হয়। এর আগে বিকাল সোয়া ৩টার দিকে বিখ্যাত কারী আহমদ বিন ইউসুফের কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে এই কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশের আয়োজনে এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক। গণজমায়েতে আস—সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, আমাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা—মত পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু স্বাধীন ফিলিস্তিন সেখানকার মানুষের অধিকার। গাজার মানুষের ওপর জুলুম বন্ধের দাবিতে আমরা প্রত্যেক বাংলাদেশি ধর্ম—বর্ণ নির্বিশেষে তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি। এ সময় ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী স্লোগানে স্লোগানে ফিলিস্তিনের ভাইদের প্রতি সংহতি প্রকাশের আহ্বান জানান। ঘোষণাপত্রে ইসরায়েলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে মুসলিম বিশ্বের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানানো হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার কর্মসূচিতে অংশ নেন। পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি জেনারেল রেজাউল করিম ও দক্ষিণের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুল ইসলাম মাসুদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, নিরাপদ সড়ক চাই—এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, সকাল থেকেই মার্চ গাজা কর্মসূচিতে অংশ নিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাত্রা করেন লাখো মানুষ। এক পর্যায়ে মানুষে পরিপূর্ণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জায়গা না পেয়ে হাজারো মানুষ রমনা পার্কে অবস্থান নেন। রমনা পার্কে অবস্থান করা আমজাদ হোসেন বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনেক মানুষ হয়েছে। আমি ঢুকতে চাইলেও পারিনি। তাই এখানে আছি। অনেকে দেয়াল টপকে ঢুকেছে, আমি আর সেই চেষ্টা করিনি। এখনে হাজারখানেক মানুষ হবে। মার্চ ফর গাজায় অংশ নিতে আসা আব্দুর রজমান নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমি বনশ্রী থেকে এসেছি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে যেতে পারিনি। তাই রমনায় এসে বসেছি। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি শেষে হাজারো মানুষ পায়ে হেঁটে রওনা দেন বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে। এতে সড়কে তৈরি হয় জনস্রোত। গতকাল শনিবার বিকাল ৪টার দিকে সরেজমিন শাহবাগ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সড়কে এই জনস্রোত দেখা যায়। এর আগে, এই কর্মসূচিকে ঘিরে গণজামায়াত শুরু হয় সকাল থেকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। দুপুর ২টার পর রাজধানীর কিছু পয়ন্টে মানুষের ঢল নামে। এতে করে চারিদিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচলের চেষ্টা করছে। কোথাও কোথাও সড়কের এক পাশে যানবাহন চলাচল করলেও, অন্য পাশ এখনও বন্ধ।