এফএনএস বিদেশ : ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে নিসান প্রায় ১০ হাজার অতিরিক্ত কর্মী ছাঁটাই করতে পারে — এমন খবরে গতকাল মঙ্গলবার দিনের শুরুতে জাপানের এই সমস্যাগ্রস্ত গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ৫.৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। বিক্রির দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ ১০ গাড়ি নির্মাতার অন্যতম এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে চরম ঋণগ্রস্ত। গতকাল মঙ্গলবার দিন শেষে প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বার্ষিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। টোকিও থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে। এ বছরের শুরুর দিকে হোন্ডার সঙ্গে প্রস্তাবিত একীভূতকরণ চুক্তি ভেঙে যাওয়া নিসান সোমবার এনএইচকেসহ স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছাঁটাই সংক্রান্ত খবরের বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। গণমাধ্যমে প্রকশিত প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, গত নভেম্বর মাসে ৯ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেওয়ার পর এবার নিসান তার মোট কর্মীসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ হ্রাস করতে চাচ্ছে। অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের মতো, নিসানও চীনের ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য শুল্কের চাপেও নিসানের প্রফিট মার্জিন কমে যাচ্ছে। হোন্ডা গত ফেব্রুয়ারিতে একটি যৌথ হোল্ডিং কোম্পানি গঠনের পরিবর্তে নিসানকে তাদের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যুক্ত করার প্রস্তাব দিলে একীভুতকরণের এ আলোচনা ভেঙ্গ যায়। এরপর গত মাসে নিসান একটি বড় ধরনের মুনাফা হুঁশিয়ারি জারি করে জানায়, ২০২৪—২৫ অর্থবছরে তাদের বার্ষিক নিট ক্ষতি ৭০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার কোটি ইয়েন। (৪.৮ থেকে ৫.১ বিলিয়ন ডলার) হতে পারে। নিসানের আগের সবচেয়ে বড় বার্ষিক ক্ষতি ছিল ১৯৯৯—২০০০ সালে ৬৮ হাজার ৪শত কোটি ইয়েন, যে সময়ে তারা ফরাসি নির্মাতা রেনোর সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ অংশীদারিত্বে যায়। প্রতিষ্ঠানটি আরও নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছে—এর মধ্যে ২০১৮ সালে তৎকালীন প্রধান কার্লোস ঘোসনের গ্রেপ্তার এবং পরে একটি সাউন্ড বক্সে করে নাটকীয়ভাবে জাপান থেকে পালিয়ে যাওয়াও রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের মার্চে নতুন সিইও নিয়োগ দেয়ার পর থেকে গত এক বছরে নিসানের শেয়ার প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে। ক্রেডিট রেটিং সংস্থাগুলো নিসানকে ‘জাঙ্ক’ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে মূল্যায়ন করেছে। মুডিস বলেছে, নিসানের লাভজনকতা দুর্বল এবং তাদের মডেলগুলোও পুরনো। এছাড়া কঠিন ব্যবসায়িক পরিবেশের কারণে চলতি মাসে নিসান দক্ষিণ জাপানে ১০০ কোটি ডলারের একটি ব্যাটারি কারখানা তৈরির পরিকল্পনা বাতিল করেছে। যা তারা স¤প্রতি চূড়ান্ত করেছিল। আরেকটি বড় সমস্যা হলো যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক সব আমদানি গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ। ব্লম্নমবার্গ ইন্টেলিজেন্স বিশ্লেষক তাতসুও ইয়োশিদ এএফপিকে জানান , জাপানের বড় গাড়ি নির্মাতাদের মধ্যে নিসানই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নিসানের ক্রেতারা তুলনামূলকভাবে দামের প্রতি বেশি সংবেদনশীল, তাই তারা টয়োটা বা হোন্ডার মতো সহজে অতিরিক্ত খরচ গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না। এতে করে নিসানের বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।