এফএনএস: চালে আর্সেনিকের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। গবেষকরা বলছেন, আর্সেনিক একটি বিষাক্ত পদার্থ। সেচের পানি অথবা বালাই নাশকের সঙ্গে আর্সেনিক ফসলে প্রবেশ করে। ধান চাষে যে ভ‚গর্ভস্থ পানি ব্যবহৃত হচ্ছে তার মাধ্যমেই বেশিরভাগ আর্সেনিক শস্যে প্রবেশ করে। মানব জাতির অবস্থান খাদ্য শৃঙ্খলের চ‚ড়ায়। ফলে আর্সেনিকের শেষ ঠিকানা মানুষের শরীর। দীর্ঘদিন ধরে মানবদেহে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতির কারণে ডায়াবেটিস, ক্যানসার, হৃদরোগসহ আরও অনেক জটিল রোগ সৃষ্টি করতে পারে। পৃথিবীর প্রায় ৮০টি দেশের প্রায় ২০০ মিলিয়ন মানুষ আর্সেনিক দ্বারা আক্রান্ত। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় ৮০ মিলিয়ন মানুষ আর্সেনিক ঘটিত রোগে আক্রান্ত। ৯০ এর দশকে বাংলাদেশে প্রথম আর্সেনিক শনাক্ত হয়। মাটির তলার পানি তুলে সেচের ফলে দিনে দিনে মাটিতে আর্সেনিকের মাত্রা বাড়ছে। গবেষণা বলছে, প্রতি বছর হেক্টর প্রতি প্রায় ১০ কেজি আর্সেনিক মাটির তলা থেকে উপরে উঠে আসছে। বর্তমান বাংলাদেশের পানি ও কৃষি ফসল উৎপাদন এবং চাষাবাদ ব্যবস্থায় আর্সেনিকের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র এবং সুইডেনের লিনিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ে জীব ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আরিফিন সন্ধি। গবেষণাপত্রটি এরইমধ্যে ‘স্প্রিঙারে‘ প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল শনিবার তিনি বর্তমান সময়ে পানি ও কৃষি ফসলে আর্সেনিকের প্রভাব এবং আর্সেনিক থেকে উত্তরণের উপায় আলোচনা করেছেন। ড. আরিফিন সন্ধি বলেন, আর্সেনিক মূলত একপ্রকার রাসায়নিক পদার্থ। পরিবেশের সর্বত্র (বিশেষত: মাটি, পানিতে) আর্সেনিক বিদ্যমান। সাধারণত ভ‚গর্ভস্থ জলাধারে আর্সেনিক মাটি ও বালুর সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় থাকে। পানিতে স্বল্প মাত্রায় আর্সেনিক সব সময়ই থাকে। কিন্তু যখনই এ মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি হয়ে যায়, তখনই তা পানকারীর শরীরের নানা রকম রোগের উপসর্গ তৈরি করে এবং পরবর্তীতে সেসব রোগব্যাধিকে মারাত্মক পর্যায়ে নিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী ১ লিটার পানিতে ১০ মাইক্রোগ্রাম (১০ পিপিবি বা পার্টস পার বিলিয়ন) এর বেশি আর্সেনিক থাকলে সেই পানি দূষিত। সেখানে বাংলাদেশের মান অনুযায়ী ১ লিটার পানিতে ৫০ মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক (৫০ পিপিবি) থাকলে সেই পানিকে নিরাপদ বলা হয়। আর্সেনিক শুধু পানির মাধ্যমেই মানুষের শরীরে প্রবেশ করে না বরং কেউ যদি আর্সেনিক সমৃদ্ধ খাবার খায় সেক্ষেত্রে খাবারের মাধ্যমেও আর্সেনিক ঘটিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আর্সেনিকের বর্তমান অবস্থা নিয়ে এ গবেষক বলেন, বাংলাদেশে এখন আর্সেনিক শুধু পানীয় জলের দূষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। অগভীর নলক‚পের মাধ্যমে কৃষি ক্ষেতের সেচ বিতরণের কারণে অনেক জায়গায় উচ্চফলনশীল ধান গাছে প্রচুর পরিমাণ আর্সেনিক পাওয়া গেছে। যার কারণে দেখা যায়, শুধু আর্সেনিক আক্রান্ত এলাকায় না থেকেও এর প্রভাব চালের মাধ্যমে ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশের অন্য এলাকাগুলোতেও। যা একটা বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি। এ থেকে উত্তরণের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এ পদক্ষেপগুলোর মধ্যে হতে পারে, পানীয় জলের এবং সেচের উৎস হিসাবে ভ‚গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমানো, স্বল্প সেচ সক্ষম ফসল উৎপাদনে বেশি মনোযোগ দেওয়া এবং সেই ধরনের নতুন জাত এর উদ্ভাবনে আরও বেশি সচেষ্ট হওয়া। অলটারনেটিভ ওয়েট অ্যান্ড ড্রাই মেথড ব্যবহার করার মাধ্যমে কৃষিজমিতে সেচ দেওয়া, উপরিভাগের পানি যেমন নদী, খাল বিলের পানির ব্যবহার বাড়ানো এবং মানুষের মাঝে এ বিষয়ে সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে।