মাছুদুর জামান সুমন \ দেশের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত এবং জাতীয় অর্থনীতিতে সুসংহত করার মহাক্ষেত্র চিংড়ী শিল্পের বাজার দর পতনের কারনে চরম সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে এই শিল্প। সাতক্ষীরা জেলার হাজার হাজার চিংড়ী চাষির আশা, আকাংখা, উচ্ছ¡াস এক কথায় তাদের হাসি ম্লান হতে চলেছে। বিশ্ব বাজারে দেশের রপ্তানী যোগ্য চিংড়ীর সিংহভাগ সাতক্ষীরা জেলা হতে যোগান দেওয়া হয়। অন্যদিকে আমাদের দেশে যে পরিমান চিংড়ী উৎপাদন হয় তার উলেখযোগ্য অংশ এই জেলাতে উৎপাদন হয় বিধায় সাতক্ষীরার অর্থনীতি দৃশ্যতঃ চিংড়ী কেন্দ্রীক। বাজারজাত করনের চিংড়ীর মূল্য এমনই আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে যে চিংড়ী চাষিরা ঘেরের চিংড়ী বাজার জাত করনে অনিহা প্রকাশ করছে। ২০/৩০ গ্রেডের চিংড়ীর স্বাভাবিক বাজার দর ছিল কেজি প্রতি ১০০০ হতে ১২০০ সেই চিংড়ী বর্তমান সময়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০০০/৭০০০ টাকায় এবং ক্ষেত্র বিশেষ সে অপেক্ষায় অনেক অনেক কম, অপেক্ষাকৃত ছোট, ক্ষুদ্র অর্থাৎ গ্রেড বিহিন চিংড়ীর বাজারদর পূর্বের ন্যায় না থাকলেও কিছুটা সহনীয়। ক্ষুদ্র চিংড়ী বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৪০০/৫০০ টাকায়। চিংড়ী উৎপাদনকারী, আড়ৎদার, ডিপো মালিক ও রপ্তানীর সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানাগেছে বৈশ্বিক কারনে চিংড়ীর এই দরপতন। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ভূ রাজনীতির বিরুপ প্রভাব চলমান বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যার প্রেক্ষাপটে অন্যতম চিংড়ী আমদানী কারক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন সহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভূক্ত দেশগুলো আমদানী কমিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি সন্দেহের তীর এক শ্রেনির ডিপো ও রপ্তানীর সাথে সংশ্লিষ্টদের দিকে রাশিয়া, ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাই দিয়ে দেশীয় বাজারে চিংড়ীর মূল্য কমিয়ে দিতে পারে। তবে আশার কথা দেশের অভ্যন্তর ভাগে ব্যাপক ভাবে চিংড়ীর চাহিদা পরিলক্ষিত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট সহ অপরাপর বড় বড় শহর গুলোতে চিংড়ী চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার আশাশুনীর বুধহাটা, শোভনালী, মহেশ্বরকাটি, উপজেলা সদর, পারুলিয়া, গাজীর হাট, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগরের বংশীপুর, ইশ্বরীপুর, ভেটখালি সহ বিভিন্ন এলাকা হতে ককসিট ভর্তি চিংড়ী দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। দিনে দিনে বাড়ছে চাহিদাও। বিশ্ব বাজারে যেমন মূল্য ছিল বর্তমান সময়ে দেশীয় বাজারে তেমন মূল্য না পেলেও চরম বিপর্যয়ের কবল হতে রক্ষা পাচ্ছে এই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা। চাপড়ার চিংড়ী ব্যবসায়ী মামুন জানান ইতিপুর্বে জমির হারি, চিংড়ী খাদ্য, ঘের প্রস্তুত শ্রমিক, নৈশ প্রহরী, রেনু পোনার মূল্য সবই বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু উৎপাদিত চিংড়ীর মূল্য প্রতিনিয়ত নিন্মমুখি বিধায় চিংড়ী চাষিরা বড় ধরনের লোকসানের মুখে। খোজ নিয়ে জানাগেছে অধিকাংশ চিংড়ী চাষিরা ব্যাংক ঋন সহ এনজিও ঋন নিয়ে চিংড়ী ঘেরে বিনিয়োগ করেছে বিধায় ঋন পরিশোধে দুর্শ্চিন্তায় ভুগছে। চিংড়ী বাজার দরের অনাকাঙ্খিত দর পতন এই সময় গুলোতে সরকারের মৎস্য দপ্তরকে বাজার মনিটরিং করা জরুরী। বাজারে তদারকি থাকলে চিংড়ীর বাজার দর নিয়ে অশুভ এবং অনৈতিকতা ঘটলে তার প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ পাবেন চিংড়ী চাষিরা। চিংড়ীর মূল্য হ্রাসের এই চরম দুঃসময় গুলোতে চিংড়ী চাষিদের লোকসান পুষিয়ে নিতে এবং নতুন উদ্যমে চিংড়ী চাষ করতে প্রনোদনা এবং সুদ বিহীন ঋনের ব্যবস্থা সময়ের দাবী।