এফএনএস: ২০১৫ সালের তুলনায় ২০২০ সালে দেশে মানুষের চিকিৎসা খাতে ব্যক্তিগত ব্যয় বা আউট অব পকেট এক্সপেনসেস (ওওপি) আরও বেড়েছে। এ অতিরিক্ত ব্যয় ২০১৫ সালে ছিল ৬৭ শতাংশ, যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ শতাংশে। ২০২০ সালে বাংলাদেশে মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বা ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় হয়েছে ব্যক্তির নিজ খরচে। আর স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয় ছিল ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০১৫ সালের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। এ ছাড়া এ খাতে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা কর্তৃক ব্যয়ের পরিমাণ ৫ শতাংশ। গতকাল বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের আয়োজনে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস-ষষ্ঠ রাউন্ডের চ‚ড়ান্ত ফলাফল অবহিতকরণ কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস সেলের ফোকাল পারসন ডা. সুব্রত পাল ষষ্ঠ রাউন্ডের প্রাপ্ত ফলাফল তুলে ধরেন। এসময় তিনি বলেন, নিজ পকেট থেকে ব্যয় (ওওপি) সবসময় সরকারের ব্যয় বা সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ এরইমধ্যে উন্নয়নের মহাসড়কে প্রবেশ করেছে। মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথচলায় দেশে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুক‚ল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, এর ফলে মানুষের খরচ করার প্রবণতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, মোট ব্যক্তি পর্যায়ে খরচের ৫৪ শতাংশই খরচ করে থাকেন দেশের শীর্ষ ধনীরা। অন্যদিকে দরিদ্র শ্রেণির জনগণের নিম্ন দুই ভাগ মোট নিজ খরচের যথাক্রমে ৪ শতাংশ এবং ৮ শতাংশ খরচ করে থাকেন। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যের ওপর নিজ খরচের উচ্চ অংশটি জনসংখ্যার ধনী অংশ দ্বারা চালিত হয় জানিয়ে ডা. সুব্রত পাল আরও জানান, ওওপির বিশ্লেষণে আরও দেখা যায় যে জনসংখ্যার সর্বনিম্ন সমাংশ মাথাপিছু ২০০ টাকা স্বাস্থ্যের জন্য নিজ থেকে ব্যয় করে থাকে। যেখানে জনসংখ্যার শীর্ষ ধনী সমাংশ খরচ করে এর তুলনায় ৮ গুণ বেশি টাকা অর্থাৎ ১ হাজার ৭১৪ টাকা। একই এলাকা বা গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে মাথাপিছু খরচের তুলনায় দেখা যায় যে, সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলো দরিদ্রদের তুলনায় ৫ গুণ বেশি ব্যয় করেছে। তিনি জানান, গ্রামাঞ্চলে শীর্ষ দুই ধনী সমাংশ খরচ করে মোট ব্যক্তি পর্যায়ে খরচের ৫৭ শতাংশ, যেখানে দরিদ্রতম দুই সমাংশ খরচ করে ২৫ শতাংশ। কিন্তু শহরাঞ্চলে এই খরচ যথাক্রমে ৭৬ শতাংশ এবং ১২ শতাংশ। সিটি করপোরেশনভুক্ত স্থানে এই হার যথাক্রমে ৮৭ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যের ওপর নিজ খরচের উচ্চ অংশটি জনসংখ্যার ধনী অংশ দ্বারা চালিত হয়। তিনি বিশেষভাবে উলেখ করেন যে, করোনাকালীন সময়ে করোনা মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত ভ্যাসসিন ক্রয়সহ অন্যান্য ব্যয়ের হিসাব এ গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বিভিন্ন সময়ে সম্পাদিত গবেষণা প্রতিবেদনে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি ব্যয় অনেকাংশে বৃদ্ধির কথা উঠে এসেছে যা প্রকারান্তরে সরকারি ব্যয়ের অংশ বৃদ্ধি করেছে। এতে ব্যক্তি পর্যায়ে খরচ অনেকাংশে কমেছে বলে ধারণা করা হয়। পরবর্তী বিএনএইচএর গবেষণায় বিষয়টি বিস্তৃতভাবে তুলে ধরা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব জনাব মো. সাইফুল হাসান বাদল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু এনডিসি, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বাংলাদেশ রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. বর্দন জং রানা প্রমুখ।