শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
সাতক্ষীরা যাত্রী ও পন্য পরিবহন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত সাতক্ষীরায় এনএস আইয়ের গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সুলতানপুর বড় বাজারে অভিযান ॥ ১৯৯ বস্তা চিনি জব্দ সাতক্ষীরায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলামের রষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন জাতিসংঘের যুদ্ধ বিরতি মানছে না ইসরাইল সাতক্ষীরার ঈদ বাজারে ক্রেতাদের ভিড় অসহায় পরিবারের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ কপিলমুনিতে মহান স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত আশাশুনি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী শহিদুল ইসলামের গণসংযোগ কলারোয়ায় বসতভিটা দখল ও গাছ-গাছালি কাটার প্রতিবাদ করায় বাড়িঘর ভাংচুরসহ মারপিট করার অভিযোগে কয়রায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন

চিনি উধাও দাম চড়া টি-স্টলে বিপর্যয়

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৩

জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ সুস্বাদু খাবার রান্না থেকে শুরু করে চায়ের দোকান সর্বত্রই চাহিদা রয়েছে চিনির। কিন্তু এই চিনি এখন দুষ্প্রাপ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে। রমজান মাস আসন্ন। এর আগেই বাজার থেকে উধাও চিনি। কিছু মিললেও দাম চড়া। চিনির অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে চা বিক্রেতাদের (টি-স্টলে) মধ্যে নেমে এসেছে বিপর্যয়। কারণ এক কেজি চিনি ১১০-১১৫ টাকায় কিনতে গিয়ে তাদের নাভিশ্বাস। আর পারছে না সাধারন মানুষসহ ক্ষুদে দোকানীরা। তাদের ব্যবসায়িক মুনাফা খেয়ে খেলছে বর্ধিত চিনির মূল্য। একই ভাবে ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সমন্বয় না হওয়ায় লোকসানের কবলে এ শ্রেণির ক্ষুদ্রু ব্যবসায়ীরা। আবার দাম সমন্বয় করতে গিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে চলছে বাক-বিতন্ডা। না বাড়ালেও লোকসানের কবলে পড়ে দোকান গুটানোর পর্যায়ে অনেক দোকানী। মাত্র এক বছর আগেও প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাধার পর থেকেই বাড়তে থাকে চিনির দাম। এই যুদ্ধের সঙ্গে চিনির দাম বাড়ার আদৌ কোনো সম্পর্ক আছে কি না এ নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। তবে প্রতিনিয়ত বাড়ছে এটাই বাস্তবতা। মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, তা অকপটে স্বীকার করেছেন ব্যবসায়ী থেকে শুরু চা দোকানের বিক্রেতা। পুষ্টিবিদ রবিয়া রতি বলেন, চিনির বিকল্প যত কিছুই আসুক না কেন চিনির মতো প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি বস্তু মানবদেহের জন্য খুবই জরুরি। বাংলাদেশের মানুষ এমনিতেই নানা রকম অপুষ্টিতে ভোগে। তাই চিনির অভাব হলে শরীরে অনেক রকম ঘাটতি হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সব কথার মূল কথা চিনির বাজারের আগুন নেভাতে হবে। দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতেই হবে, উৎপাদন বাড়িয়ে হোক কিংবা আমদানি বাড়িয়ে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, চিনির দাম বাড়ার তেমন কোনো কারণ আছে বলে সাধারণ মানুষের জানা নেই। যারা বাড়িয়েছেন তারাও জানেন কি না সন্দেহ। বাংলাদেশে ১৫টি সরকারি চিনিকল আছে। এসব কলে বছরে কয়েক হাজার টন চিনি উৎপাদন হয়। এই চিনি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানিও করার কথা। চিনিকলগুলোর অবস্থা আসলে এতটাই নাজুক যে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। যেসব কলে প্রচুর চিনি উৎপাদিত হচ্ছে সেসব চিনিও জানা-অজানা নানা কারণে দেশের বাজারে ছাড়া হচ্ছে না। গুদামে পড়ে থেকে থেকে পচছে। নিজেদের চিনি গুদামে নষ্ট হচ্ছে আর মানুষ তিনগুণ দামে চিনি কিনছে, বিষয়টি সত্যিই বেদনাদায়ক বলে স্বীকার কালশীর বিসমিল­াহ জেনারেল স্টোরের মালিক মনির হোসেন। আমরা খুচরা ব্যবসায়ীরা চিনি কিনতে গেলে আড়ৎদাররা বলেন, চিনি সংকট রয়েছে। কিন্তু বেশি টাকা দিলেই বস্তায় বস্তায় চিনি মেলে। এগুলো বড় ব্যবসায়ীদের কারসাজি। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টের কয়েকজন চা-দোকানীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। মিরপুর পল­বীর চা বিক্রেতা সাব্বির বলেন, চিনির দাম বাড়ার পরও এখনও চায়ের দাম এ এলাকায় বাড়ায়নি। রং চা ৫টা এবং দুধ চা ১০ টাকায় আছে। তবে অন্য জায়গায় বাড়িয়েছে বলে শুনেছি। এর ফলে দাম না বাড়ানোয় লাভতো হচ্ছে না। আমি যে শ্রম দিচ্ছি সেটাই লস। কারণ চা-য়ের থেকে কোনো বেনিফিট পারছি না। আর কাস্টমার তো কমবই। কারণ আয়ের উপরে সব কিছু। আরেকটি চায়ের দোকানীর কাছে চিনির দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বলে কোন লাভ হবে না। আমার যা বিপর্যয় তা হবেই। কালশীর চা-বিক্রেতা বশির বলেন, গ্যাস ও চিনির দাম বাড়ায় আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। আমাদের কাস্টমার কমে গেছে। আগে ৬টাকায় চা বিক্রি করলেও দুই টাকা বাড়িয়ে ৮টা করেছি। এর পর ব্যবসায় ধস নেমেছে। দৈনিক ৪০০ কাপ চা বিক্রি করলেও তা বর্তমানে অর্ধেকে নেমেছে। এই ক্ষতি পুষানোর সুযোগ নেই। এভাবে চললে ব্যবসায় বন্ধ করে দিতে হবে। বলেন, ৬০ টাকার চিনি একবছরে ১১৫ টাকায় কিনছি। এখানে বড় ঘাটতি। যার প্রভাব পড়েছে সংসার খরচেও। পণ্যের অযাচিত মূল্য বৃদ্ধির কারণে বড় অভাবে আছি। সরকার কি করবে তা আমাদের জানা নেই। রিফাত নামে চা-বিক্রেতা বলেন, আগে চা ৫টাকায় বিক্রি করলেও চিনির কারণে ৬টা করেছি। তাও লাল চা। ওই বিক্রেতা বলেন, ক্রেতা বলছে; আগে ৫টাকায় এককাপ চা বিক্রি করলেও তাতে তোমাদের লাভ হয়েছে। অনেক ক্রেতা চা না খেয়ে চলে যাচ্ছে। এই বিক্রেতা আরও বলেন, অনেক ক্রেতা এসে আবদার দেখিয়ে বলে চা এর পরিমাণ কমিয়ে ৫টাকা সমপরিমাণ দেও। এতে আমার লস। না দিলে খারাপ কথা বলে ভেগে যায়। কি আর করব। চা-য়ের দাম বাড়ানোয় আমরা মহা বিপদে আছি। নুরুল ইসলাম নামে এক চা-বিক্রেতা বলেন, ৫টাকার চা ৬টাকা করা হলেও অনেকে চা খেয়ে ৫টাকা দিয়েই হেঁটে চলে যায়। চা ব্যবসা শিল্পে বিপর্যয় নেমে এসেছে। আগে দৈনিক ২০ কাপ চা খেলেও এখন কমিয়ে সারাদিনে ৫ কাপও খাকছেন না বলে জানান হাবিবুর রহমান নামে একজন ব্যক্তি। আর ইলেকট্রিকের কাজের সঙ্গে যুক্ত আলমগীর নামে একজন ব্যক্তি বলেন, চিনির সঙ্গে অনেক কিছুর সম্পর্ক। চায়ের দাম বাড়ায় মহা সমস্যায় আছি। কারণ কেউ এক টাকা বাড়িয়েছে কেউ বাড়িয়েছে ৭ টাকা। এটা নিয়ে ভেজাল হয়। বলেন, ১০টাকা দিয়ে একটি সিগারেট একটি চা খেতাম। এখন ১০ টাকার সঙ্গে দুইটাকা বাড়তি গুণতে হচ্ছে। এটাও বড় সমস্যা। এ কারণে অনেক সময় চা খাই না। একটি সিগারেট নিয়ে চলে যায়। ক্ষুদ্রু ব্যবসায়ী বিসমিল­াহ জেনারেল স্টোরের মালিক মনির হোসেন বলেন, চিনির দাম বাড়াতে অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। ক্রেতারা অনেক সময় অভিযোগ করে বলেন আপনারা ইচ্ছা করেই দাম বাড়িয়ে নিচ্ছেন। আবার বেচাকেনাও কম। আগে চিনির দাম কম ছিল। বিক্রি বেশি হত। এখন কম হচ্ছে। কিছুদিন আগেও ৮০টাকা ছিল এখন ১০৭ টাকা পাইকারি কিনতে হচ্ছে। বিক্রি করছি ১১৫ টাকায়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. খলিকুজ্জামান বলেন, অন্য দেশে রমজান এলেই দ্রব্যের দাম অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। আর এখানে পুরো উল্টো। এখানে পণ্যের সরবরাহ থাকলেও দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। সরকারের নজরদারির অভাব রয়েছে। এটা বাড়াতে হবে। চিনির সঙ্গে চা-য়ের সম্পর্ক আছে এটা ঠিক। একজন দাম বাড়ালেই সকলেই বাড়িয়ে দেন। কোথাও কোনো সমন্বয় করা হয় না; এটাই বড় সমস্যা। মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে উঠছে; এটাই বড় শঙ্কার কথা। পাইকারি পর্যায়ে ভোগ্যপণ্য বিক্রেতাদের নেতা মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা এ প্রসঙ্গে বলেন, চিনির দাম বাড়ার প্রধান কারণ ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও আমদানী পণ্যের উপরে সরকারের অতিরিক্ত করারোপ। আগের তুলনায় ৩৫টাকা বেশি কর দিতে হচ্ছে। বলেন, আমরা চিনি উৎপাদন করি না। মিল মালিকরা যেভাবে চালাবেন, আমাদের সেভাবেই চলতে হবে। বলেন, আমাদের কোনো বিকল্প উৎস্য নেই। সরকার থেকে কোনো ভর্তুকি পাই না। আর ট্রান্সপোর্ট খরচ দিতে হচ্ছে কয়েকগুন বেশি। এসব ক্ষতি পুষিয়ে তারপর আমাদের লাভ করতে হয়। চিনির মূল্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্ব্যভোগী কারা তাদের খুজে বের করেন। সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ বিভাগ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, হোলসেল মার্কেট থেকে বেশি দামে চিনি কিনে বেশি দামে বিক্রি করার সুযোগ নেই। অভিযানের ভয়ে চিনি থাকা সত্তে¡ও অনেকে বিক্রি করছেন না, এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এই পরিচালক বলেন, বিষয়টি আসলে এমন নয়। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী সংকট পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে বেশি দামে চিনি বিক্রি করছেন। তাই রমজানের আগেই আমাদের অভিযান চলমান আছে; আরও জোরদার করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com