খুলনা প্রতিনিধি ॥ চুকনগর নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন সুপার মার্কেট, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে জেলা পরিষদের দীর্ঘকাল পরিত্যক্ত ৫৬শতক জমির উপর নির্মিত হচ্ছে একটি দৃষ্টিনন্দন সুপার মার্কেট। মার্কেটটি নির্মিত হলে এর সুফল ভোগ করবে এ বাজারের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। এটি খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোর জেলার সংযোগস্থল ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক নগরী ও খুলনার প্রবেশদ্বার নামে খ্যাত চুকনগর বাজারের যতিন কাশেম রোডের ভদ্রা নদীর গা ঘেষে নিরিবিলি পরিবেশে তৈরি হচ্ছে। মার্কেটটি নির্মিত হলে বাণিজ্যিকভাবে অনেক সুফল পাবে তিন জেলার মানুষ। তাদের বিভিন্ন ধরনের কেনাকাটা করার জন্য জেলা শহর খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোরে যাওয়া লাগবে না। এক মার্কেটের সবকিছু পাওয়া যাবে। এখানে এক মার্কেটে মোট ১২৬টি ঘর নির্মিত হচ্ছে। চুকনগর বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, বর্তমানে চুকনগর বাজারে একটি ঘর ভাড়া নিতে গেলে ২০/২৫ লাখ টাকা জামানত ও ১৫/২০ হাজার টাকা প্রতি মাসে ভাড়া দিতে হচ্ছে। তারপরও দোকান বন্ধ করে রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারছি না। এখানে অধিকাংশ দোকানের চাল টিনশেট হওয়ায় বিভিন্ন সময় চুরির ঘটনা ঘটছে। ঘর গুলো টিনশেট হওয়ায় চোরেরা এ চুরির সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। তবে মার্কেটটি ছাঁদ দিলে ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে বাড়িতে নিরাপদে ঘুমাতে পারবে। এদিকে পর্যাপ্ত ভাড়া ও জামানত দেওয়ার পর ঘর মালিকের সাথে সামান্য মনোমালিন্য হলে তাকে ঘর থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। এরকম ঘটনা ইতিমধ্যে একাধিকবার ঘটেছে বলে একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন। সেক্ষেত্রে জেলা পরিষদের জায়গা বরাদ্দ নিলে ব্যবসায়ীদের এ ধরনের কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। ব্যবসায়ীরা বলেন, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র চুকনগর। ৩টি জেলা তথা খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোর এবং শিল্পাঞ্চল হিসেবে খ্যাত নওয়াপাড়ার সংযোগস্থল হওয়াই বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে চুকনগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলা বেনাপোল স্থল বন্দর ও ভোমরা স্থল বন্দরের সাথেও অবাধ চলাচল ব্যবস্থার সুযোগ রয়েছে। সবদিক থেকে যোগাযোগের সহজলভ্যতা থাকায় অনেক দূর দুরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা চুকনগরে ব্যবসা করতে আসেন। এর ফলে চুকনগর বাজারে ব্যবসা বাণিজ্যের একটি অনন্য স্থান হিসাবে খুলনা বিভাগসহ বাংলাদেশে সুপরিচিতি লাভ করেছে। খুলনা জেলার গত দুই অর্থ বছরের সেরা করদাতা চুকনগর বাজারের ব্যবসায়ী জয়দেব মন্ডল বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে চুকনগর বাজারে ব্যবসা করি । আমার ব্যবসার যে পরিধি সেখানে বর্তমানে ঘরের সংকট রয়েছে। যার জন্য আমার ব্যবসা করতে অসুবিধা হচ্ছে। জেলা পরিষদের মার্কেট হলে সেখানে দোকান বরাদ্দ নিতে পারলে আমার ব্যবসা করতে সুবিধা হবে। চুকনগরসহ আশেপাশের সাধারণ জনগণ এই জেলা পরিষদ মার্কেট হওয়াই খুশি। কারণ জেলা পরিষদ মার্কেটের মাধ্যমে এই এলাকার অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ যেখানে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মহাসড়কে সেখানে চুকনগরের মত বাণিজ্যিক এলাকায় আগের আমলের সেমি পাকা ঘর চিন্তা করা যায় না। এছাড়া চুকনগর পুরাতন বাজার হলেও সংস্কারের অভাবে অনেক দোকানপাট জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। অনেক হাঁট বাজারে সরকার কয়েক তলাবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন চাঁদনী তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে জেলা পরিষদ মার্কেটটি ছাঁদ যুক্ত হলে এই ঐতিহাসিক চুকনগর বাজারটির শ্রী বৃদ্ধি পাবে এবং দৃষ্টিনন্দন একটি মার্কেট হবে। আদর্শ বস্ত্রালয় ও আদর্শ মটরস এর সত্ত্বাধিকারী জয়দেব আঢ্য বলেন, চুকনগর বাজারে পরিত্যক্ত জেলা পরিষদের জায়গায় এমন একটি সুপার মার্কেট নির্মাণ করছেন জেলা পরিষদ। যা দেখলে সবার মন জুড়িয়ে যাবে। এ জাতীয় মার্কেট ইতিপূর্বে আমি কোথাও দেখিনি। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত স্থান নোংরা ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকবে এটা কখনো হতে পারে না। চুকনগর বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি প্রহ্লাদ ব্রহ্ম ও সাধারণ সম্পাদক সরদার ওহিদুল ইসলাম বলেন, বাজারের ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে খুলনা জেলা পরিষদ চুকনগর বাজারে একটি দৃষ্টিনন্দন মার্কেট নির্মাণ করছে, এজন্য কর্তৃপক্ষকে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কারণ সরকারের ৫৬শতক জমি দীর্ঘকাল ধরে ফেলানো বলে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এখানে একটি সুপার মার্কেট হওয়ায় চুকনগর বাজারের ব্যবসায়ীরা অনেক সুফল ভোগ করবে। জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস এম মাহাবুবুর রহমান বলেন, চুকনগর বাজারে ব্যবসায়ীদের অনেক চাহিদা। এটি অনেক বড় বাজার। প্রয়োজনের তুলনায় দোকান অনেক কম। তাছাড়া জেলা পরিষদের জায়গাটি দীর্ঘদিন ফেলানো ছিল। এখানে মানুষ ময়লা আবর্জনা ফেলতো। এতে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দূর্গন্ধের কারণে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারতো না। অন্যদিকে বিভিন্ন সময় মাদকসেবীরা মাদক সেবন করতো এখানে। এসব বিষয়ে নানা অভিযোগ আমাদের কাছে আসতো। তাছাড়া জায়গাটি মার্কেট করলে সরকার প্রতি বছর ২০/২৫ লাখ টাকা রাজস্ব পাবে বলে।