মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০১:৪৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

চ্যালেঞ্জ সামলে ধরে রাখতে হবে মোংলার সক্ষমতা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৮ মে, ২০২৩

জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ নানামূখী চ্যালেঞ্জ সামলে ধরে রাখতে হবে গভীর সমুদ্র বন্দরের তকমা পাওয়া মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে তাদের সক্ষমতা। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সফলতা দেখাতে পারলে, – এই বন্দরটি সবসময় দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখায় বড় অবদান রাখতে পারবে। গত দশ (২০০৮-৯ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত) বছরে জাহাজ ভেড়ানোর হার, কার্গো হ্যান্ডেলিং, পণ্যবাহী কন্টেইনারের সংখ্যা, গাড়ী ও রাজস্ব আয় বেড়েছে বলে বন্দরের এক তথ্যে পাওয়া গেছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বন্দরে জাহাজের সংখ্যা বেড়েছে ১৭ দশমিক ৪০ শতাংশ, কার্গো ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ, কন্টেইনার ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ, গাড়ি ১৪ দশমিক ০৩ শতাংশ এবং রাজস্ব আয় ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম যাতে সবসময় অব্যাহত থাকে, – সেজন্য ১৬ বছর মেয়াদী ভবিষৎ পরিকল্পনা হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। এদিকে, পদ্মা সেতুর সুফল পেতে শুরু করেছে মোংলা বন্দর। চ্যানেলের ড্রেজিং কার্যক্রম চ্যালেঞ্জের সঙ্গে মোকাবেলা করায় সফলভাবে ভিড়েছে আট ফিটের জাহাজ, যা কয়েক মাস আগেও কল্পনাতে ছিল না। সম্প্রতি বন্দরের ৫ নম্বর জেটিতে পানামা পতাকাবাহী ‘এমসিসি টোকিও’ নামের জাহাজটি ভেড়ানো হয়। জাহাজটিতে কন্টেইনারের সংখ্যা ছিল ৩৭৭ টিউজ। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, নাব্য কম থাকায় সাত বা সাড়ে সাত মিটারের অধিক গভীরতার জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারত না। এ কারণে আট, সাড়ে আট বা নয় মিটারের গভীর পণ্যবাহী জাহাজ পশুর নদীর মাঝে নোঙর করা হতো। সেখানে থেকে মালামাল খালাস করতে হতো। বন্দর ব্যবহারকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে খননকাজ শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ড্রেজিংয়ের পর এখন মোংলা বন্দরে আট মিটার ড্রাফটের জাহাজ আসতে পারছে। বন্দর ব্যবহারকারী এস এম মোস্তাক মিঠু বলেন, পদ্মা সেতুর সুফল হিসেবে মোংলা বন্দরে কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে। জেটি এলাকায় ড্রেজিংয়ের ফলে এ বন্দরের গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বন্দরে জাহাজের আসাও বাড়বে। ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ তরফদার বলেন, কনটেইনার নিয়ে প্রথমবারের মতো ৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বন্দর জেটিতে ভিড়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে খননের ফলে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই জাহাজের মাল খালাস করা হয়। বন্দরের এক নথির তথ্যমতে, ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে আন্তজার্তিক বাণিজ্য সম্পাদনে এই বন্দর গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখলে রেখেছে। নেপাল, ভূটান ও ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চল পশ্চাৎভূমি হিসেবে বর্তমানে বিবেচনা চলছে। পাশপাশি মিয়ানমার ও চীনের ল্যান্ড লক এলাকা পণ্য পরিবহনেও মোংলা বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। ভারতীয় পণ্য পরিবহনের জন্য ৪টি ট্রায়াল রান সম্পন্ন হবে; যার প্রথমটি গত বছরের ৮ আগস্ট সম্পন্ন হয়েছে। এ ধারাহিকতা বজায় থাকলে মোংলা বন্দর ব্যবহার বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং এটি একটি আঞ্চলিক হাব হিসেবে পরিগণিত হবে। বন্দরের এই সক্ষমতা ধরে রাখতে কয়েক ধরণের চ্যালেঞ্জ সর্বদা সামলাতে হবে; যার মধ্যে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ১৪৫ কিলোমিটার চ্যানেলের নাব্যতা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ, নিরাপদ ও দুষণমুক্ত পরিবেশ বান্ধব চ্যানেল সর্বদা বজায় রাখা, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন কার্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভবিষৎ চাহিদা পূরণের জন্য বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো (জেটি, ইয়ার্ড, আবাসিক স্থাপনা ও অন্যান্য অবকাঠামো), পুরাতন সহায়ক জলযান প্রতিস্থাপন এবং নতুন জলযান সংগ্রহ, মেরামত ও সুবিধা সৃষ্টি এবং দক্ষ ও পর্যাপ্ত জনবল সৃষ্টি। প্রাপ্ত তথ্যমতে, মোংলা বন্দর ঘিরে আরও মহাপরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে সরকার। ভবিষৎ এই পরিকল্পনার (আগামী ২০২৭-২০৪৩) মধ্যে পশুর চ্যানেলের রামপাল বিদুৎ কেন্দ্র থেকে ফেয়ারওয়ে বয়া পর্যন্ত ১৪৫ কিলোমিটার চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেইনেন্স ড্রেজিং, হিরণ পয়েন্ট থেকে বোর পয়েন্টে পাইলটিং স্টেশন স্থানান্তর, আধুনিক কন্টেইনার ও কার্গো হ্যাল্ডলিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, নেভিগেশনের এইডস সংগ্রহ, মোংলা বন্দরের জন্য ২টি ট্রেইলিং সাকশান হপার ড্রেজারসহ মোট ৬টি ড্রেজার সংগ্রহ, আকরাম পয়েন্টে ভাসমান জেটি এবং জয়মনির গোলে কন্টেইনার টার্মিনাল স্থাপন, আধুনিক কন্টেইনার ও কার্গো হ্যাল্ডলিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, জয়মনিরগোলে কার ইয়ার্ড নির্মাণ, জয়মনিরগোলে মাল্পি-পারপাস জেটি নির্মাণ, নদী শাসন কার্যক্রম গ্রহণ, যাবতীয় সুবিধাদিসহ হ্যালিপ্যাড ও হ্যাঙগার নির্মাণ ও হেলিকপ্টার ক্রয়, সহায়ক জলযান সংগ্রহ, পানি শোধনাগার নির্মাণ (প্রকল্প-২), জয়মনিরগোলে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মায় (২য় পর্যায়) ও ভিটিএমআইএস সমাপ্রসারণ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com