এফএনএস বিদেশ: প্রথমবারের মতো আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত এক অতি বিশাল কৃষ্ণগহŸরের (ব্ল্যাকহোল) ছবি তোলা হয়েছে। স্যাগিটারিয়াস এ* নাম দেওয়া বস্তুটির ভর আমাদের সূর্যের চলিশ লাখ গুণ বেশি। এখানে দেওয়া ছবিতে যা দেখা যায় তা হচ্ছে মাঝখানে একটি অন্ধকার অঞ্চল। সেখানেই কৃষ্ণগহŸরটির অবস্থান। এর চারপাশে রয়েছে অতি উত্তপ্ত গ্যাস থেকে তৈরি আলোর গোলক। মাত্রা বোঝানোর জন্য বললে কালো বৃত্তটির আকার মোটামুটি আমাদের নক্ষত্র সূর্যের চারপাশে বুধগ্রহের কক্ষপথের সমান। এর বিস্তার প্রায় চার কোটি মাইল। সৌভাগ্যবশত, এই দানবাকৃতির গহŸরটি বহুদূরে- প্রায় ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরত্বে। তাই আমাদের পৃথিবীর কখনোই অন্তত এর দিক থেকে বিপদ আসার কোনো আশঙ্কা নেই। আলো প্রতি সেকেন্ডে প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার মাইল বেগে চলে। সেই গতিতে টানা এক বছর চলার পর যতদূর যাওয়া যায় তা-ই এক আলোকবর্ষ। প্রসঙ্গত, কৃষ্ণগহŸর বা ব্ল্যাকহোল হচ্ছে মহাকাশের সেই অংশ, যেখানে মহাকর্ষ শক্তি এত প্রবল যে কিছুই সেখান থেকে বের হতে পারে না। এমনকি আলোও না। কিছু বৃহৎ তারকার ধ্বংস থেকে কৃষ্ণগহŸরের সৃষ্টি হয়। কিভাবে এটি হয় তা এখনো স্পষ্ট না। তবে বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে নিশ্চিত যে কৃষ্ণগহŸর মহাকাশে শক্তির সঞ্চার করে এবং এর বিবর্তনে প্রভাব ফেলে। ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (ইএইচটি) সহযোগিতা নামে একটি আন্তর্জাতিক দল দীর্ঘ সময় ও শ্রমসাপেক্ষ ছবিটি তৈরি করেছে। ২০১৯ সালে মেসিয়ার ৮৭ বা এম৮৭ নামের আরেকটি ছায়াপথের (গ্যালাক্সি) কেন্দ্রে বিশালাকার কৃষ্ণগহŸরের একটি ছবি প্রকাশ করার পর এটি তাদের দ্বিতীয় এই ধরনের ছবি। সেই বস্তুটি ছিল এক হাজার গুণেরও বেশি বড়, যার ভর আমাদের সূর্যের সাড়ে ছয় শ কোটি গুণ। ‘কিন্তু এই নতুন চিত্রটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি আমাদের একান্ত নিজের সুবিশাল কৃষ্ণগহŸর’, বলেছেন অধ্যাপক হেইনো ফাল্কে। ইএইচটি প্রকল্পের পেছনে প্রধান ইউরোপীয় গবেষকদের অন্যতম তিনি। নেদারল্যান্ডসের রাডবুড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হেইনো ফাল্কে বলেন, ‘এটি যেন একেবারে আমাদের বাড়ির উঠোনে। কৃষ্ণগহŸর ও এর কাজ ভালো করে বুঝতে চাইলে এটিই আপনাকে সাহায্য করবে। কারণ আমরা তা অতি বিশদভাবে দেখতে পাচ্ছি।’ জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ স্যাগিটারিয়াস এ* এর চারপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করবে। পৃথিবী থেকে ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরত্বে অবস্থিত কৃষ্ণগহŸর স্যাগিটারিয়াস এ* সংক্ষেপে (এসজিআর এ*) আকাশে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক কণার মতো। এই ধরনের লক্ষ্যবস্তুর অস্তিত্ব বোঝার জন্য অবিশ্বাস্য মাত্রার রেজল্যুশনের টেলিস্কোপের প্রয়োজন। ইএইচটি কাজটা করেছে একটি বিশেষ কৌশলে, যার নাম ‘ভেরি লং বেসলাইন অ্যারে ইন্টারফেরোমেট্রি’ (ভিএলবিআই)। এ পদ্ধতিতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে থাকা আটটি শক্তিশালী রেডিও অ্যান্টেনার একটি নেটওয়ার্ককে এক করে কার্যত গোটা পৃথিবীর সমান একটি টেলিস্কোপ তৈরি করা হয়েছে। এই বিন্যাসটির মাধ্যমে ইএইচটি আকাশের এমন একটি সূ² কোণ তৈরি করতে সক্ষম, যা মাইক্রো-আর্কসেকেন্ডে পরিমাপ করতে হয়। তাদের টেলিস্কোপের দৃষ্টি এত শক্তিশালী যে চাঁদের বুকে একটি বার্গার রাখা হলে তা-ও দেখতে সক্ষম। তারপরেও সংগৃহীত বেশ কয়েক পেটাবাইট (১ পিবি সমান দশ লাখ গিগাবাইট) ডাটা থেকে একটি চিত্র তৈরি করতে পারমাণবিক ঘড়ি, স্মার্ট অ্যালগরিদম এবং অগণিত ঘণ্টার সুপারকম্পিউটিং দরকার হয়। সূত্র : বিবিসি।