সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৩৪ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
শুল্কমুক্ত সুবিধায় হাজার হাজার টন চাল আমদানিতেও বাজারে প্রভাব পড়েনি বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ শীতজনিত রোগীর চাপ রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি হাসপাতালে বাড়ছে সাতক্ষীরা পৌর—মেয়রের বরখাস্তের আদেশ অবৈধ: হাইকোর্ট স্কুল থেকে ফেরার পথে ট্রেনে কাটা পড়ে শিশুর মৃত্যু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিএনপি নেতা নিহত মোবাইল—ইন্টারনেটে কর প্রত্যাহার না হলে এনবিআর ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি ভারত থেকে এলো ২৭ হাজার মেট্রিক টন চাল টিউলিপের উচিত ক্ষমা চাওয়া: ইউনূস বিজিবি—জনগণ ‘শক্ত অবস্থান’ নেওয়ায় ভারত পিছু হটেছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

জনগণের আস্থা-বিশ্বাসই আমার একমাত্র শক্তি: শেখ হাসিনা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০২৩

এফএনএস: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা জনগণের সঙ্গে আছি, জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। জনগণের আস্থা-বিশ্বাসই আমার একমাত্র শক্তি। আমার তো হারাবার কিছু নেই। বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি, আমার কী হারাবার আছে! আমরা দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। গতকাল সোমবার বিকেলে সদ্য সমাপ্ত ত্রিদেশীয় সফর নিয়ে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আমাদের দুর্বলতা খোঁজে আর অর্থের হিসাব নেয়। মানিলন্ডারিং তো করেছে খালেদা জিয়া আর তার দুই ছেলে। ৪০ কোটি টাকা তো উদ্ধার করে নিয়ে আসছি। এখনো বিএনপির বহু নেতার টাকা বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে জমা আছে, কারও কারও টাকা ফ্রিজ করা আছে। আওয়ামী লীগ বেশি কাজ করে, তাই তারা পেছনে লেগে থাকে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে, অনেকের সেটা পছন্দ হবে না। স্বাধীনতাবিরোধী, গণহত্যা সমর্থনকারী ও জাতির পিতার হত্যাকারীদের এগুলো পছন্দ হবে না। তারা আমার বিরুদ্ধে শত্রæতা করেই যাবে। আমি তো বোমা প্রæফ হয়ে গেছি, বোমা দিয়ে মারতে পারেনি, সরাসরি গুলি করে মারতে পারেনি, গ্রেনেড হামলা করেছে তাও মরি নাই। তিনি বলেন, যতই চেষ্টা করুক, আল্লাহতায়ালা মানুষকে একটা কাজ দেয়, ওই কাজটা শেষ না পর্যন্ত আল্লাহই রক্ষা করে। আর আমার নেতাকর্মীরাও তো বারবার আমাকে রক্ষা করেছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সরকার কোনো ‘ভয়ে নেই’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন আসছে বলে ভয় পাবো! কেন ভয় পাবো! আমি জনগণের জন্য কাজ করেছি, জনগণ যদি ভোট দেয় আছি, না দিলে নাই। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এক প্রশ্নে সরকারপ্রধান বলেন, ওয়েস্ট-ইস্ট অব ডেমোক্রেসি আমরা ফলো করি। দেখুন, ব্রিটেনে কীভাবে ইলেকশন হয়, তারা কীভাবে করে, আমরা সেভাবেই করবো। এরমধ্যে আমরা এটুকু উদারতা দেখাতে পারি, পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য যারা আছেন তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছে প্রকাশ করেন যে নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারে আসতে চান, আমরা নিতে রাজি আছি। এটুকু উদারতা আমাদের আছে, আগেও আমরা নিয়েছি। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালে আমি খালেদা জিয়াকেও আহŸান (নির্বাচনকালীন সরকারে আসার) করেছিলাম। তারা তো আসেনি। আর এখন তো তারা নাইও পার্লামেন্টে। কাজের ওটা নিয়ে চিন্তারও কিছু না। বিএনপির আন্দোলন বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা মাইক লাগিয়ে আন্দোলন করেই যাচ্ছে। সরকার হটাবে। আমরা তো তাদের কিছু বলছি না। আমরা যখন অপজিশনে ছিলাম আমাদের কি নামতে দিয়েছে? গ্রেনেড হামলা করে হত্যা করার চেষ্টা করেছে। আমাদের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারছে। নির্বাচন ঠেকাতে ৫০০ স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে। সাড়ে তিন হাজার লোককে আগুনে পোড়ানো হয়েছে। তিন হাজার ৮০০ গাড়ি, ২৭টি রেল, ৯টি লঞ্চ, ৭০টি সরকারি অফিস পুড়িয়েছে। তারা তো জ¦ালা-পোড়াওই করে গেছে। আমি বলে দিয়েছি, আন্দোলন করুক, মানুষ ছাড়ুক কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু জ¦ালা-পোড়াও যদি করতে যায়, কোনো মানুষকে যদি আবার এরকম করে পোড়ায়, তাকে ছাড়বো না। মানুষের ক্ষতি আর করতে দেবো না’- যোগ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাদের ২০ দলীয় ঐক্যজোট। সিট পেয়েছে মাত্র ২০টি। তারা আবার বড় বড় কথা বলে। আর দালালি…। কার পয়সায় আন্দোলন করছে, কোথা থেকে টাকা পাচ্ছে? বাংলাদেশের মানুষ কি এত অন্ধ হয়ে গেছে, চোখে দেখে না। হাজার হাজার কোটি টাকা তো লুট করে নিয়েই গেছে, আর কাদের মদতে করছে সেটা একটু খোঁজ নেন। এত লোক নিয়ে আসে আর প্রতিদিন মাইক লাগিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে, এগুলো তো বিনা পয়সায় হচ্ছে না। রিজার্ভ নিয়ে দেশে তেমন কোনো সংকট নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন মাসের খাদ্য কেনার মতো ডলার যেন আমাদের হাতে থাকে, সেটা নিয়েই আমাদের চিন্তা। রিজার্ভ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। তিনি বলেন, আমরা রিজার্ভ নিয়ে বলতে বলতে সবার মাথায় এটা ঢুকে গেছে। আমাদের রিজার্ভ এখনো যা আছে তাতে অন্তত এটুকু বলতে পারি, আমাদের এমন কোনো সংকট এভাবে নাই। তবে আমরা সবসময় রিজার্ভ ধরে রাখারই চেষ্টা করি। দেশে চলমান ডলার সংকট বিষয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। আমাদের বিনিয়োগ বাড়ছে, উৎপাদন বাড়ছে। কাজেই ডলারের ওপর চাপ তো বাড়বেই। স্যাংশন কাউন্টার স্যাংশন। যার ফলে আজ সারা বিশ্বে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। পরিবহন পরিচালন ব্যয় বেড়ে গেছে। যে কারণে ডলার সংকট এখন সমগ্র বিশ্বেই রয়ে গেছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের আগামী নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণাই হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। যদিও এটা আগে বলে দিয়েছি, তবে এটাই হবে আমাদের মেইন, অর্থাৎ বাংলাদেশকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। বাংলাদেশে কোনো দারিদ্র্য থাকবে না, দেশের সব মানুষ উন্নত জীবন পাবে। বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত ভর্তুকি দেওয়া আসন্ন বাজেটে সরকারকে বিপদে ফেলছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ভর্তুকিটাই আমাদের বাজেটে সবচেয়ে বেশি বিপদে ফেলছে। পৃথিবীর কোনো দেশে এরকম দেয় না। জ¦ালানি, বিদ্যুৎ সব খাতে ভর্তুকি দিচ্ছি। বিদ্যুতে ভর্তুকি দিয়ে লাভ কী? যে সবচেয়ে বেশি এয়ারকন্ডিশন চালায় তার লাভ সবচেয়ে বেশি। আমার গরিব মানুষের তো লাভ হয় না। আসলে ভর্তুকিতে লাভবান হচ্ছে বিত্তশালীরা। বর্তমানে জ¦ালানি তেল ও গ্যাসের দাম যে হারে বেড়েছে সেটা সরকারের পক্ষে টানা সম্ভব নয় বলেও জানান সরকার প্রধান। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর পাশাপাশি বেসরকারি খাতের চাকুরেদের বেতন বাড়ানোর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা তাদের বিষয়। এটা সরকারের ব্যাপার না। বেসরকারি খাত করোনা ভাইরাসের সময় যেন বিপদে না পড়ে তার জন্য প্রণোদনা দিয়েছি। তাদেরকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমরা ভর্তুকিও দিয়েছি। এই ভর্তুকিটা বাজেটকে বিপদে ফেলেছে। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে আমরা যখন বেতন ভাতা বৃদ্ধি করি, আমরা একটা গবেষণায় দেখেছিলাম যে ইনফ্লেশনের (মুদ্রাস্ফীতি) সাথে সাথে একটা পারসেন্ট হারে বেতন বাড়বে। প্রতি বছরের হিসাব মতে ইনফ্লেশন যত বাড়বে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা বেতন বাড়াই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু ইনফ্লেশন কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা সেই জায়গায় আবার কতটুকু পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া যায় সেই চিন্তা-ভাবনা করছি। কমিশন করো, এটা করো, সেটা করো, এতে খুব বেশি লাভ হয় না। কিছু লোক বঞ্চিত হয়ে যায়, আর কিছু লোক লাভবান হয়। এজন্য প্রতি বছরের হিসাব মতো ইনফ্লেশন যত বাড়বে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা বেতন বাড়াব। তাছাড়া অনেক সুযোগও দিয়েছি। বৈশাখী ভাতা থেকে শুরু করে ফ্ল্যাট কেনার লোন, গাড়ি কেনার লোনসহ অনেক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বেতন যেভাবে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম সেটা কিন্তু সবার জন্যই। তাই আমাদের মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। যেহেতু ইনফ্লেশন বেড়ে গেছে, তাই ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন যেন বাড়তে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্য ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com