এফএনএস বিদেশ : জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রথমবারের মতো ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। গত বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ওআইসি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন যৌথভাবে এই রেজুলেশনটি চালু করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়,এই বছরের রেজোলিউশনটি ১০৯টি দেশসহ স্পন্সর করেছে, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। রেজুলেশনটি মূলত রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এতে রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করা, রাখাইন রাজ্যে স্বতঃস্ফ‚র্ত, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুক‚ল পরিবেশ তৈরি করা এবং মিয়ানমারে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতসহ জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদানের আহŸান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে, এটি আসিয়ান কর্তৃক সর্বসম্মতভাবে গৃহীত পাঁচ দফা সুপারিশের দ্রুত বাস্তবায়নের উপর জোর দিয়েছে। রেজোলিউশনটি চলমান বিচার এবং জবাবদিহিতা প্রক্রিয়ার উপর সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্যও আহŸান জানিয়েছে। এটি মিয়ানমারে নবনিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতকে স্বাগত জানায় এবং মিয়ানমারকে সম্পৃক্ত করে তার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে। রেজুলেশনে রাখাইন রাজ্যে বাস্তু চ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য একটি সক্ষম পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমার, ইউএনএইচসিআর ও ইউএনডিপির মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারকটির পুনর্নবীকরণ ও কার্যকর বাস্তবায়নের কথা উলেখ করা হয়েছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা জানান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে ২০১৭ সালে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেন। কিন্তু এটা দুঃখজনক যে রোহিঙ্গাদের স্ব-প্রণোদিত, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুক‚ল পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমারের ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। রেজুলেশনটি গৃহীত হওয়ার সময় প্রদত্ত বক্তব্যে বাংলাদেশের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স মোঃ মনোয়ার হোসেন জানান, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের প্রত্যাবর্তন না হওয়া পর্যন্ত আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের সংহতি দাবি না করা পর্যন্ত ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। এই মানবিক সাড়াদান প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত অর্থায়ন। তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার ইস্যুতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ওআইসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জাতিসংঘের এই প্রস্তাব রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংহতির এক অনন্য উদাহরণ। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে মিয়ানমারের পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বিলম্ব হচ্ছে। এমতাবস্থায় রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান খুঁজতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টা জোরদার করতে প্রস্তাবটি উৎসাহব্যঞ্জক।