এফএনএস: স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনে আইন—শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের সংস্থাগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এজন্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করার আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিদেরকে সামনে নিয়ে আসা উচিত। গত সোমবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের তৃতীয় দিনের স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত ষষ্ঠ কার্য—অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা বা জাতীয় নির্বাচনের আগে হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নেন জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, এটা একটা সমস্যা, আমাদের অফিসাররা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করছেন। তারা প্রতিনিয়তই বলছেন প্রশাসক বা নির্বাচন দিয়ে জনপ্রতিনিধি দেন। বিভাগীয় কমিশনারের সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব আর জেলা প্রশাসকদের উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এক জনকে যখন দুই তিনটা দায়িত্ব পালন করতে হয়, তখন তিনি কোনো দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারেন না। সেই জায়গা থেকে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিদেরকে নিয়ে আসা উচিত। এ বিষয়ে আলোচনা চলমান, চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। খুব দ্রুত কোনো একটা সিদ্ধান্ত আসবে, হয় স্থানীয় সরকার নির্বাচন না হয় প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় সংস্থাগুলো পরিচালনা করবো। আপনি কি মনে করেন জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে ভালো হয় এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি অবশ্যই ভালো হয়। দেশকে তো সামনে এগিয়ে নিতে হবে। আপনারা মনে করছেন স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রয়োজন, তাহলে কেন অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়ার চিন্তা করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবার আগে হচ্ছে জনগণ। আমাদের কাছে যে কমন অভিযোগ আসে ওয়ারিশ সনদ, জন্মসনদের জন্য গিয়ে ঘুরতে হয় কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ আমাদের যে অফিসার তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সেটা দেখাশুনা করেন, নিজের কাজ সামলে তো অতিরিক্তটা করবেন। এই ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে। জনগণের কথা চিন্তা করে, সেবায় যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার যেহেতু ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে, তাই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলা এই সরকারের অন্যতম মেনডেট। সেই জায়গা থেকে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে আমরা সম্মান ও শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখছি। ডিসিরা কি স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ সজীব বলেন, তারা সেখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে চান না, কারণ নিজেদের দায়িত্ব পালনে সমস্যা হচ্ছে। প্রত্যেক বিভাগীয় কমিশনার কোনো না কোনো সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে আছেন। সে জায়গা থেকে তারা জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে আমাদের জানিয়েছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা—কর্মীরা অংশগ্রহণ করলে বা জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিলে আপনাদের অবস্থান কেমন থাকবে— জানতে চাইলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, সারা বিশ্বে ফ্যাসিস্টদের যে নজির, আওয়ামী লীগেরও তেমন হওয়া উচিত। আমরা ইউরোপের দেশগুলোকে গণতন্ত্রের মডেল হিসেবে ধরি। জার্মানি ও ইতালিতে ফ্যাসিস্টদের কী হয়েছিল, আমাদের সামনে সেই নজির রয়েছে। তিনি বলেন, যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে এই গণহত্যা ডকুমেন্টেড হয়েছে, সেই জায়গা থেকে আমরা মনে করি, দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের এক ধরনের শাস্তি নিশ্চিত হওয়া জরুরি। কোন প্রক্রিয়ায় কী শাস্তি হতে পারে সে বিষয়েও সবার মতামত নেওয়া সরকার প্রয়োজন মনে করেন, আশা করি তারপর একটা সিদ্ধান্ত সরকার নিতে পারবে। বিক্ষিপ্তভাবে যদি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে সরকারের অবস্থানটা কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, যারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদ সরকারের সঙ্গে জনগণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমে জড়িত ছিল, তাদের অধিকাংশ এখন পলাতক। তিনি বলেন, গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এই বিষয়ে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এরইমধ্যে বলেছেন, যারা আওয়ামী লীগ করতো, কিন্তু কোনো প্রকার অন্যায়, হত্যা বা অপরাধের সাথে জড়িত ছিল না, তারা জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে আবার মূলধারায় ফিরে আসতে পারবে। সেই জায়গা থেকে কেউ যদি নির্বাচন করে তাতে কোনো বাধা নেই। কেউ যদি গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকলে তারা কোনো অবস্থাতেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।