শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৪৮ পূর্বাহ্ন

জাতীয় দলের অনুশীলনে ‘জিপিএস ভেস্ট’

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩

এফএনএস স্পোর্টস: মিরপুরে শনিবার এশিয়া কাপের দল ঘোষণার ঘণ্টাদুয়েক পরের ঘটনা। বৃষ্টির বাগড়া শেষে ম্যাচ পরিস্থিতির আদলে অনুশীলনের জন্য তৈরি ক্রিকেটাররা। সবার চেয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা গেল তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদকে। তাদের অনুশীলন জার্সির ওপরে দেখা গেল কালো জিপিএস ট্র্যাকিং কিট। যা এখন থেকে নিয়মিতই দেখা যাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের গায়ে। এশিয়া কাপের আগে আনুষ্ঠানিক অনুশীলন শুরুর দিন পরীক্ষামূলকভাবে শুধু তাসকিন ও হাসানই পরেন কাঁধ থেকে বুক পর্যন্ত নেমে আসা এই জিপিএস কিট। এর ব্যবহারবিধি বুঝিয়ে দিতে একজন বিশেষজ্ঞকেও দেখা যায় মাঠে। প্রথম দিনে শুধু তাসকিন, হাসান ব্যবহার করলেও বাকি ক্রিকেটাররা নিয়মিতই এই জিপিএস কিট পরে অনুশীলন ও ম্যাচ খেলবেন বলে জানান বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার শাহরিরার নাফীস। ফিটনেসে উন্নতির মাধ্যমে পারফরম্যান্সের মানোন্নয়নে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে দীর্ঘ দিন ধরেই চলছে জিপিএস প্রযুক্তির ব্যবহার। শুরুর দিকে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে এটির ব্যবহার দেখা যায় বেশি। পরে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারতের মতো দেশগুলো ক্রিকেটেও শুরু করে এর ব্যবহার। এবার প্রধান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে ও বিসিবির হেড অব প্রোগ্রাম ডেভিড মুরের চাওয়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেটও এবার ঝুঁকল জিপিএস প্রযুক্তির দিকে। প্রস্তাবটা প্রথম দেন মুর। বিশ্ব ক্রিকেটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ফিটনেসে বাড়তি মনোযোগ দিতে জিপিএস প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে প্রধান কোচের সঙ্গে আলোচনা করেন এই অস্ট্রেলিয়ান। পরে তাদের পরামর্শেই আনা হয় জিপিএস কিট। যে কোনো খেলায় পারফরম্যান্স ও ফিটনেসের রয়েছে সরাসরি সংযোগ। অনেক সময়ই পারফরম্যান্সের বড় অংশ নির্ভর করে ফিটনেসের ওপর। আর এই ফিটনেস ঠিক রাখার জন্যই ক্রিকেটে এখন গুরুত্বের সঙ্গে ওয়ার্কলোড ম্যানেজ করা হয়। অনুশীলন ও ম্যাচ মিলিয়ে কোনো ক্রীড়াবিদ কতটা ধকল নিতে পারবেন, সেটি ঠিক করার পদ্ধতিই মূলত ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট। আর এই কাজটি নিখুঁতভাবে করবে জিপিএস, জানালেন নাফীস। “জিপিএসের কাজটা খুবই সাধারণ। আমি সারা দিনে কতটুকু কাজ করলাম, আরও কতটুকু করা সম্ভব, কতটুকু করলে আমার জন্য ক্ষতি হতে পারে, অথবা অল্প কাজ করেই আমি যদি বলি যে অনেক কাজ করে ফেলেছি- এইসব কিছুই জিপিএস দিয়ে হিসেব করা যাবে।” “এটি মূলত একজন খেলোয়াড় মাঠে কতটা দৌড়েছে, গতি কেমন ছিল, কতটা হেঁটেছে, হৃৎস্পন্দনের হার কেমন, রক্ত চলাচল কেমন, শরীরে স্ট্রেস কতটা পড়েছে- এরকম আরও সরবরাহ করবে তথ্য ট্রেনার ও ফিজিওকে। সেগুলো পর্যালোচনা করে যে কোনো ক্রিকেটারের অনুশীলনের পরিকল্পনা সাজানো যাবে। এটি দিয়ে নির্দিষ্টভাবে একজন খেলোয়াড়ের ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টটা বোঝা যায়।” বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য আনা এই ভেস্ট জিপিএসের সঙ্গে আরও কিছু সেন্সরের সমন্বয়ে ফিটনেসের সামগ্রিক অবস্থা বোঝার জন্য নানান তথ্য সরবরাহ করবে। প্রত্যেক ক্রিকেটারের জন্য আলাদা আলাদা প্রোফাইল থাকছে এই জিপিএসের সিস্টেমে। যার তত্ত¡াবধানে থাকবেন মূলত ফিজিও ও ট্রেনার। তবে কোচ ও ক্রিকেটাররাও সহজেই নিজেদের যে কোনো তথ্য পেয়ে যাবেন এই সিস্টেম থেকে। নামের পাশে থাকা সবুজ, হলুদ ও লাল চিহ্ন দেখে বোঝা যাবে খেলোয়াড়দের সার্বিক অবস্থা। সে অনুযায়ী ট্রেনার ও ফিজিওরা অনুশীলনের জন্য পরিকল্পনা সাজাতে সাহায্য করবেন। দেশের ক্রিকেটে এর আগেও হয়েছে জিপিএস ট্র্যাকারের ব্যবহার। ২০০৮-০৯ সালের দিকে তখনকার ট্রেনার গ্র্যান্ট লুডেনের পরামর্শে আনা হয় সেটি। এখন উন্নত প্রযুক্তিতে বন্ধনীর মতো কিট ব্যবহার করা হলেও, তখন একটি ব্যান্ড লাগিয়ে দেওয়া হতো ক্রিকেটারদের বুকে। প্রায় দেড় দশক আগে ওই ট্র্যাকার ব্যবহারের নিজের অভিজ্ঞতাও শোনালেন নাফীস। “(গ্র্যান্ট) লুডেন যখন এনেছিলেন জিপিএস, আমিও ব্যবহার করেছি। সেটির তুলনায় এখনকার কিট অনেক উন্নত। এখন আরও অনেক বেশি তথ্য পাওয়া যায়। আমাদের বুকে তখন একটা ব্যান্ডের মতো লাগিয়ে দেওয়া হতো। আমরা সেটি পরেই সব করতাম। এখন তো ভেস্টের মতো কিট ব্যবহার হয়।” নাফীসের মতো ওই জিপিএস ট্র্যাকার ব্যবহার করেছেন আবদুর রাজ্জাকও। এটি ব্যবহার করার বিশেষ কোনো অভিজ্ঞতা নেই সাবেক বাঁহাতি স্পিনারের। তবে ক্রিকেটারের ফিটনেসের উন্নতিতে এটির ব্যবহার ইতিবাচক প্রভাব রাখবে মনে করেন এই জাতীয় নির্বাচক। “আমাদের সময় সবাই একসঙ্গে ব্যবহার করত না। ফিজিও বা ট্রেনার যাদের প্রয়োজন মনে করত, তাদের পরিয়ে দিত। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আসলে দেখা যেত, সবাই ব্যবহার করেছি। আমাদের কাজ ছিল শুধু এটা পরে অনুশীলন করা। বাকি সব ফিজিও, ট্রেনারই হিসেব করত।” “এখন তো প্রযুক্তি অনেক এগিয়েছে, বর্তমানের জিপিএস কিট ব্যবহার করে আরও অনেক বেশি তথ্য পাওয়া যায়। যে কোনো ক্রীড়াবিদের জন্য ফিটনেস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ফিটনেস ভালো থাকলে পারফরম্যান্সও স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। এই কিট ব্যবহার করলে ফিটনেস লেভেলটা বাড়ানো সহজ হয়।” আপাতত জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে এই জিপিএস ট্র্যাকারের ব্যবহার। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বুঝে বাংলাদেশ টাইগার্স, হাই পারফরম্যান্স ইউনিটেও এটি পাঠানো যেতে পারে বলে জানান নাফীস। দলের সব ক্রিকেটারের রোববার থেকেই জিপিএস কিট পরে অনুশীলনের কথা ছিল। তবে বৃষ্টির কারণে বাতিল হয়ে যায় এ দিনের অনুশীলন। ফলে পূর্ণাঙ্গভাবে জিপিএস প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য অপেক্ষা বাড়ল আরেকটু।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com