এফএনএস স্পোর্টস: ঠিক যেন প্রথম ইনিংসেরই পুনরাবৃত্তি। আরও একবার ভারতের স্পিন বিষে নীল হলো শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং। আবারও তারা গুটিয়ে গেল দুইশর নিচে। রবীন্দ্র জাদেজার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে মোহালি টেস্ট তিন দিনেই জিতল স্বাগতিকরা। টেস্ট ক্রিকেটে রোহিত শর্মার নেতৃত্বের পথচলা শুরু হলো বড় জয় দিয়ে। ইনিংস ও ২২২ রানে জিতে দুই ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল ভারত। ম্যাচের তৃতীয় দিন গতকাল রোববার দুই ইনিংস মিলিয়ে শ্রীলঙ্কা হারায় ১৬ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ১৭৪ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর ফলোঅনে পড়ে তাদের দ্বিতীয় ইনিংস থমকে যায় ১৭৮ রানে। ভারত তাদের একমাত্র ইনিংস ঘোষণা করেছিল ৮ উইকেটে ৫৭৪ রান তুলে। টেস্ট ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ব্যাট হাতে ১৫০ বা এর বেশি রানের ইনিংস খেলা ও ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার সম্ভাবনা জগিয়ে অল্পের জন্য হয়নি জাদেজার। অপরাজিত ১৭৫ রানের ইনিংস খেলার পর ম্যাচে তার প্রাপ্তি ৯ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ৪১ রানে ৫ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬ রানে জাদেজার শিকার ৪টি। অনুমিতভাবেই ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠেছে বাঁহাতি এই স্পিনিং অলরাউন্ডারের হাতে। এই নিয়ে মোহালিতে ভারতের সবশেষ তিন টেস্টেই ‘ম্যান অব দা ম্যাচ’ হলেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট নেন অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনও। প্রথম ইনিংসে তার প্রাপ্তি ২টি। টেস্টে তার মোট উইকেট হলো ৪৩৬টি। ছাড়িয়ে গেলেন স্যার রিচার্ড হ্যাডলি, রঙ্গনা হেরাথ ও স্বদেশি কপিল দেবকে। ভারতের হয়ে তার চেয়ে বেশি উইকেট আছে এখন কেবল অনিল কুম্বলের, ৬১৯টি। ম্যাচটি ছিল বিরাট কোহলির শততম টেস্ট। অসাধারণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সব আলো কেড়ে নিলেন যদিও জাদেজাই। পাঞ্জাব ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে অনুমিতভাবে এদিনও স্পিনাররা পেয়েছেন সহায়তা। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটে ১০৮ রান নিয়ে নামা শ্রীলঙ্কা দিনের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারাতে পারতো। তবে অশ্বিনের বলে পাথুম নিসানকা বেঁচে যান রোহিত কিছুটা কঠিন ক্যাচ নিতে না পারায়। অশ্বিনের পরের ওভারে তার ক্যাচ ফেলেন শ্রেয়াস আইয়ারও। দুইবার জীবন পেয়ে চারিথ আসালাঙ্কাকে সঙ্গে নিয়ে দলকে কিছুটা এগিয়ে নেন নিসানকা। বেশিক্ষণ অবশ্য টিকতে পারেনি তাদের জুটি। পানি পানের ঠিক আগে আসালাঙ্কাকে অফ কাটে এলবিডব্লিউ করে জুটি ভাঙেন জাসপ্রিত বুমরাহ। এরপরই ধসে পড়ে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং। পরের ৪২ বলের মধ্যে ১৩ রান তুলতেই তারা হারায় বাকি ৫ উইকেট! জাদেজা একই ওভারে ফিরিয়ে দেন নিরোশান ডিকভেলা ও সুরঙ্গা লাকমলকে। বেশ কয়েক বার সুইপ করার ব্যর্থ চেষ্টার পর একই শটেই স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন কিপার-ব্যাটসম্যান ডিকভেলা। এর মাঝেই নিসানকা তুলে নেন ফিফটি। লাসিথ এম্বুলদেনিয়াকে বাউন্সারে বিদায় করেন মোহাম্মদ শামি। জাদেজা পরপর দুই বলে বিশ্ব ফার্নান্দো ও লাহিরু কুমারাকে ফিরিয়ে লঙ্কানদের ইনিংস গুটিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পূর্ণ করেন পাঁচ উইকেট। ইতিহাসের ষষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে একই টেস্টে ব্যাটিংয়ে দেড়শ ছাড়ানো ইনিংস ও বোলিংয়ে ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন জাদেজা। নিসানকা অপরাজিত থাকেন ৬১ রানে। ৪০০ রানের লিড পাওয়া ভারত আবার ব্যাটিংয়ে পাঠায় শ্রীলঙ্কাকে। শুরু থেকেই সফরকারীরা উইকেট হারায় নিয়মিত বিরতিতে। তৃতীয় ওভারে অশ্বিনের বলে রোহিতের দারুণ ক্যাচে লাহিরু থিরিমান্নে বিদায় নেন শূন্য রানে। অশ্বিনের বলেই নিসানকা এবার থামেন ৬ রানে। ভারত উইকেটটা পায় রিভিউ নিয়ে। অধিনায়ক দিমুথ করুনারতেœ প্রায় ঘণ্টা খানেক উইকেটে কাটিয়ে শামির বলে রিশাভ পান্তের দারুণ ক্যাচে ফেরেন ২৭ রান করে। ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। ৩০ রানে ধনঞ্জয়াকে ফিরিয়ে ১৬ ওভার স্থায়ী ৪৯ রানের জুটি ভাঙেন জাদেজা। ২টি করে ছক্কা-চারে ২০ রান করে দ্রুতই বিদায় নেন আসালাঙ্কা। এরপর জাদেজা একই ওভারে ফিরিয়ে দেন ম্যাথিউস (২৮) ও লাকমলকে। পরে যখন অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি ফেরান এম্বুলদেনিয়াকে, ম্যাচে ১০ উইকেটের জন্য চাই আর একটি। কিন্তু বিশ্ব ফার্নার্ন্দোকে শামি ফেরানোর পর শেষ উইকেটটি নেন অশ্বিন। তাতে জাদেজার ঔজ্জ্বল্য অবশ্য একটুও কমেনি। ডিকভেলা অপরাজিত থাকেন ফিফটি করে। আগামী শনিবার বেঙ্গালুরুতে শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট। এবারের লড়াইটা গোলাপি বলে। সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত ১ম ইনিংস: ১২৯.২ ওভারে ৫৭৪/৮ ডিক্লে. শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: (আগের দিন ১০৮/৪) ৬৫ ওভারে ১৭৪ (নিসানকা ৬১*, আসালাঙ্কা ২৯, ডিকভেলা ২, লাকমল ০, এম্বুলদেনিয়া ০, ফার্নান্দো ০, কুমারা ০; শামি ১২-৫-২৭-১, বুমরাহ ১৪-৩-৩৬-২, অশ্বিন ২০-৭-৪৯-২, জয়ন্ত ৬-২-১৫-০, জাদেজা ১৩-৪-৪১-৫)। শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস (ফলোঅন): ৬০ ওভারে ১৭৮ (থিরিমান্নে ০, করুনারতেœ ২৭, নিসানকা ৬, ম্যাথিউস ২৮, ধনাঞ্জয়া ৩০, আসালাঙ্কা ২০, ডিকভেলা ৫১*, লাকমল ০, এম্বুলদেনিয়া ২, ফার্নান্দো ০, কুমারা ৪; অশ্বিন ২১-৫-৪৭-৪, শামি ৮-১-৪৮-২, জাদেজা ১৬-৫-৪৬-৪, জয়ন্ত ১১-৩-২১-০, বুমরাহ ৪-১-৭-০)। ফল: ভারত ইনিংস ও ২২২ রানে জয়ী। সিরিজ: দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি শেষে ভারত ১-০ তে এগিয়ে। ম্যান অব দা ম্যাচ: রবীন্দ্র জাদেজা।