স্পোর্টস ডেস্ক \ ঘানার বিপক্ষে ২-০ গোলে জিতেও গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিল উরুগুয়ে। ম্যাচে তখন ৮৫ মিনিটের মতো চলে। হঠাৎ করেই বিহ্বল দেখাল উরুগুয়ের খেলোয়াড়দের। লুইস সুয়ারেস, দারউইন নুনেসদের চোখ ভরে এলো জলে। হতাশা, উৎকণ্ঠা বোঝা গেল স্পষ্ট। অন্য ম্যাচে যে পর্তুগালের বিপক্ষে এগিয়ে গেছে দক্ষিণ কোরিয়া! বেঞ্চ থেকে সুয়ারেস যেন সতীর্থদের বলতে চাইলেন, যেভাবেই হোক আরেকটি গোল দাও। সেই গোল আর এলো না, তাই বিদায়ও এড়াতে পারল না উরুগুয়ে। আল ওয়াকরার আল জানোব স্টেডিয়ামে শুক্রবার ‘এইচ’ গ্রুপের ম্যাচের প্রথমার্ধের ২-০ গোলে জিতেছে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু পয়েন্ট টেবিলের জটিল হিসেবে তা যথেষ্ট নয়। অন্য ম্যাচে পর্তুগালকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছে এশিয়ার দেশটি। উরুগুয়ের সমান ৪ পয়েন্ট তাদের। গোল পার্থক্যও সমান। টাইব্রেকের দ্বিতীয় শর্ত গোল বেশি করার সুবাদে তাদের বিদায় করে শেষ ষোলোয় জায়গা করে নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। শেষ রাউন্ড শুরুর আগে এই গ্রুপ থেকে শেষ ষোলোয় রোনালদো-ফের্নান্দেসদের সঙ্গী হওয়ার সম্ভাবনায় এগিয়ে ছিল ঘানা। দারুণ চেষ্টা করেও হার এড়াতে পারেনি তারা। দুর্দান্ত কিছু সেভ করে তাদের স্বপ্ন ভাঙেন উরুগুয়ে গোলরক্ষক। ৩ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে থেকে বিদায় নিল আফ্রিকার দলটি। তবে রেখে গেল নিজেদের ছাপ। শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ছিল ঘানা। গুছিয়ে নিতে একটু সময় নেয় উরুগুয়ে। তাতে প্রথম দিকের খেলা হয় এলোমেলো। ২১তম মিনিটে দারুণ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি ঘানা; আন্দ্রে আইয়ুর দুর্বল স্পট কিক ঠেকিয়ে উরুগুয়ের ত্রাতা সের্হিও রোচেত। মোহাম্মেদ কুদুসকে তিনিই ফাউল করায় ভিএআরের সাহায্য নিয়ে পেনাল্টি দিয়েছিলেন রেফারি। শুরুতে অবশ্য অফসাইডের জন্য ঘানার আবেদনে সাড়া দেননি রেফারি। পরে ভিএআর হাজির হয় দৃশ্যপটে। মনিটরে গিয়ে কয়েকবার রিপ্লে দেখে পেনাল্টি দেন রেফারি। এই সময়ে মেজাজ হারিয়ে তাকে কিছু একটা বলে হলুদ কার্ড দেখেন নুনেস। পরের মিনিটেই জালের দেখা পেয়ে যেতে পারতেন লিভারপুলের এই স্ট্রাইকার। তার দুর্বল চিপ ছুটে গিয়ে গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন মোহাম্মেদ সালিসু। গোলের জন্য এরপর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি উরুগুয়েকে। ডি-বক্স থেকে সুয়ারেসের শট ঝাঁপিয়ে ব্যর্থ করে দেন গোলরক্ষক লরেন্স আটি-জিগি। তবে বিপদমুক্ত করতে পারেননি, ছুটে গিয়ে হেড করে আলগা বল জালে পাঠান জর্জিয়ান আররাসকায়েতা। আসরে এটাই উরুগুয়ের প্রথম গোল। ছয় মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ফ্লামেঙ্গোর এই মিডফিল্ডার। এই গোলেও অবদান সুয়ারেসের। তিনিই ডি-বক্স থেকে উঁচু করে বাড়ান বল। দারুণ ভলিতে দূরের পোস্ট দিয়ে জাল খুঁজে নেন আররাসকায়েতা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্যবধান কমানোর সুযোগ হারায় ঘানা। বিরতির সময় আন্দ্রে আইয়ুর জায়গায় নামা ওসমান বুকারির ক্রসে একটুর জন্য পা ছোঁয়াতে পারেননি কুদুস। ৬৫তম মিনিটে ফাকুন্দো পেলিস্ত্রির বুলেট গতির শট একটুর জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। এরপরই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই মিডফিল্ডারের সঙ্গে মাঠ ছাড়েন সুয়ারেস। ৭১তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে কুদুসের জোরাল শট যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। ৯ মিনিট পর দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেন আন্তোনি সেমেনিয়ো। বিপজ্জনক জায়গা থেকে তার আড়াআড়ি শট দূরের পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। ৮১তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে কুদুসের বুলেট গতির শট ঝাঁপিয়ে কোনোমতে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন উরুগুয়ে গোলরক্ষক। বল যায় পোস্ট ঘেঁষে! এর একটু পরেই উরুগুয়ের খেলোয়াড়রা খবর পান, ওদিকে এগিয়ে গেছে দক্ষিণ কোরিয়া। সুয়ারস, নুনেস, আররাসকায়েতারা ততক্ষণে উঠে যাওয়ায় গোলের জন্য কাভানি ছাড়া নির্ভরযোগ্য কেউ ছিলেন না। তারা দারুণ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্দান্ত দুটি সেভে তাদের হতাশায় পোড়ান ঘানার গোলরক্ষক। ঘানার সামনেও আসে গোলের সুযোগ। কিন্তু রোচেত যেন ছিলেন চীনের প্রাচীর হয়ে। অসাধারণ দুটি সেভে দলের আশা বাঁচিয়ে রাখেন তিনি। কিন্তু আরেকটি গোল এনে দিতে পারেননি সতীর্থরা। ম্যাচের শেষ দিক বিষণ্ন হয়ে পড়েছিলেন উরুগুয়ের খেলোয়াড়রা। জয়ের পরও তারাই ভেঙে পড়লেন বেশি। শেষ বাঁশি বাজার পর তাদের কেউ কেউ রেফারির দিকে উত্তেজিত ভঙ্গিতে ছুটে গেলেন। সুয়ারেস বসে রইলেন স্থানুর মতো।