শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন

জেলা পরিষদ ভোট আজ সব কিছু নজরদারি করবে ইসি

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২২

জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ জেলা পরিষদের ভোট আজ সোমবার। নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে সব ধরণের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে টানা ২টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক (ডিসি)। এ নির্বাচনের সব ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ও সব কেন্দ্রে গোপন ক্যামেরায় (সিসিটিভি)। এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে নির্বাচনী কর্মকর্তা, ভোটার, প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের গতিবিধি। ইসির বিশেষ টিমও নির্বাচনী এলাকায় গোপনে পর্যবেক্ষণ করবে; যার তথ্য সামাজিক মাধ্যমে পৌঁছে যাবে সিইসিসহ কমিশনারদের কাছে। নির্বাচনে কোন অনিয়ম বরদাশত করবে না কমিশন। তবে জেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে থাকছে না সাধারণ ছুটি। কারণ স্থানীয় সরকারের জন-প্রতিনিধিরাই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যদের। এ নির্বাচনে কোন চাপ অনুভব করছে না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এদিকে, ভোট আয়োজনের সামগ্রী কেন্দ্রওয়ারী যথাসময়ে পৌঁছে যাবে বলে কমিশন থেকে জানানো হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলার বাহিনী থাকবেন সতর্ক অবস্থায়। অঞ্চলভিত্তিক শোডশেডিংয়ের এই সময়ে উপজেলা সদরেও যাতে ভোট চলাকালিন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন বহাল রাখা হয় সেজন্য কর্তৃপক্ষকে আগাম পত্র দিয়েছে ইসি। ইসির প্রাপ্ত তথ্যমতে, তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলায় ভোট আয়োজনে তফসিল দিয়েছিল ইসি। তবে, আদালতের নিদের্শনায় চাপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলার ভোট স্থগিত রাখা হয়েছে। আর ভোলা ও ফেনি জেলায় সব প্রার্থী বিনা-প্রতিদ্ব›দ্বীতায় নির্বাচিত হওয়ায় ৫৭ জেলায় ভোট হবে সোমবার। এখন পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদে ২৬, মহিলা সদস্য ১৮ জন ও সাধারণ সদস্য ৬৫। আজ সোমবার ভোটে বিএনপিসহ সমমনা দল প্রার্থী না দেয়ায় মূল প্রতিদ্ব›দ্বীতা হবে আওয়ামী লীগের নৌকা সমর্থিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী লড়াইয়ে চেয়ারম্যান পদে ৯২ জন, সাধারণ সদস্য পদে ১ হাজার ৪৮৫জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৬০৩ জন। নির্বাচন হওয়ায় ১০ বিভাগের জেলাগুলো হচ্ছে, রংপুর বিভাগের ৭ জেলায়, রাজশাহী বিভাগের ৭ জেলায়, খুলনার ১০ জেলা, বরিশালের ৫ জেলা, ময়মনসিংহের ৬ জেলা, ঢাকার ৬ জেলা, ফরিদপুরের ৫ জেলা, সিলেট ও কুমিল্লার ৪টি করে জেলা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের ২ জেলা। জেলা পরিষদে তিন পদে ২ হাজার ১৮০ প্রার্থীর জন্য ভোটকেন্দ্র ৪৬২ এবং ভোটকক্ষ ৯২৫টি। মোট ভোটার ৬০ হাজার ৮৬৬জন। যার মধ্যে নারীর চেয়ে পুরুষ ভোটার বেশি। ইসির তথ্যনুযায়ী, নির্দলীয় এ নির্বাচনে সব ভোট হবে যন্ত্রের সহায়তায় অর্থাৎ আলোচিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। তবে, নির্বাচনে দেশের আরেকটি বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনে প্রার্থী না দেয়ায় মূল প্রতিদ্ব›দ্বীতা হবে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের সঙ্গে দলীয় বিদ্রেহী প্রার্থীদের মধ্যে। কয়েকটি আসনে জাতীয় পার্টিসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তারাও নৌকার দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে কোনঠাসা। এ কারণে এই নির্বাচনে জোবর-দখল ও কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় থাকবে ক্ষমতাসীন সমর্থিত প্রার্থীরা বলে মনে করছে কমিশন। তাই জেলা পরিষদ নির্বাচনে তড়িঘড়ি সব কেন্দ্রেই সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি। কারণ ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা উপনির্বাচনে সিসি ক্যামেরা থাকায় কমিশন ভোট বাতিল করতে সক্ষম হয়েছিল। এ নির্বাচনের ভোটে অনিয়মের শিক্ষা থেকে জেলা পরিষদে সিসিটিভি স্থাপনের জন্য গত বুধবার নিদের্শনা দিয়েছে ইসি। চিঠিতে বলা হয়েছে, সিসিটিভি স্থাপনের জন্য কার্যাদেশ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে সার্বিক সহায়তা, নিদের্শনা প্রদান করার জন্য সকল সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হয়। পাশাপাশি, গোপন কক্ষের গোপনীয়তা রক্ষায় পৃথক আরেকটি নিদের্শনা দিয়েছে ইসি। এ চিঠিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষায় সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কোনো ভোটার যাতে মোবাইল নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। আর ভোটের গোপন কক্ষে অবৈধভাবে অবস্থান করে কোনো ভোটারের গোপনীয়তা স্বার্থে ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার বাধাগ্রস্ত করলে আইনানুযায়ী তাৎক্ষণিক তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। গত ১৩ অক্টোবর নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, কোন নির্বাচনী কর্মকর্তা দায়িত্ব গ্রহণে বা পালনে অপরাগতা বা অস্বীকৃতি প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) ১৯৯১ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেযা হবে। আগের আইন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট জেলার অধীনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সদস্যরাই জেলা পরিষদ সদস্যদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতেন। অর্থাৎ সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র এবং কাউন্সিলর বা সদস্যরা ভোট দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও পাঁচজন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত করতেন। কিন্তু সংশোধিত আইনে জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলার সংখ্যার সমান। আর নারী সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলা চেয়ারম্যানদের মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ, তবে দুইজনের কম নয়। অর্থাৎ একেক জেলা পরিষদের সদস্যের সংখ্যা হবে একেক রকম, সংশোধনের আগে যেটা ২১ জন নির্দিষ্ট করে দেওয়া ছিল। এদিকে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমরা কোনো চাপ অনুভব করছি না। আমরা আমাদের কাজ করছি। রবিবার (১৬ অক্টোবর) জেলা পরিষদ নির্বাচনের মনিটরিং সেল পর্যবেক্ষণের পর নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের কাছে সিইসি এ মন্তব্য করেন। নির্বাচন ভবনের মনিটরিং সেল থেকেই সিসি ক্যামেরায় মাঠের ভোট পর্যবেক্ষণ করে ইসি। গত ১২ অক্টোবরও এখান থেকে ভোট পর্যবেক্ষণে অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় প্রথমে ৫১ কেন্দ্র, পরে পুরো নির্বাচন বন্ধ করে দেয় ইসি। এরপর ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় ইসিকে। এ নিয়ে কোনো চাপ আছে কিনা, জানতে চাইলে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা কোনো চাপ অনুভব করছি না। আমরা আমাদের কাজ করছি। সিইসি বলেন, সিসি টিভির প্রচলনটা সা¤প্রতিক। আমরা এটার মাধ্যমে এখান থেকে নির্বাচন মনিটরিং করতে পারি। এটা একটা ভালো দিক। তিনি বলেন, আমাদের তো কোনো পক্ষ নেই। আমরা চাই ভোটাররা যেন তাদের ভোটটা দিতে পারেন। সে লক্ষ্যেই আমরা সিসি টিভির ব্যবহার করছি। সংসদ নির্বাচনে কিভাবে এতগুলো কেন্দ্র সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, তখন ৪০ বা ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রের ৪ লাখ ভোটকেন্দ্র থাকবে। আমাদের কারিগরি টিম জানিয়েছে সেখানে সিসি টিভি ব্যবহার করা যাবে। তবে তখন কেবল আমরা পাঁচ নির্বাচন কমিশনার নই, আরও লোকবল মনিটরিংয়ের জন্য নিয়োগ করা হবে। ইসির কর্মকর্তারা নিয়োজিত থাকবেন। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, গাইবান্ধার নির্বাচনের মতোই ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচনেও প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com