শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৮:২৩ পূর্বাহ্ন

টিপু-আরিফের চমক, নিজেকে ছাড়িয়ে নাঈম

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৫ মে, ২০২৩

এফএনএস স্পোর্টস: ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের গত আসরে ব্যাট হাতে দাপট দেখানো এনামুল হক এবারও আলো ছড়িয়েছেন। তবে তাকে ছাড়িয়ে গেছেন নাঈম শেখ। দুই ওপেনারের যুগলবন্দীতে শিরোপা ফিরে পেয়েছে আবাহনী লিমিটেড। বোলিংয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা জাগিয়েছেন টিপু সুলতান, আরিফ আহমেদরা। মিরপুর শের-ই বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আবাহনী ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের মধ্যে অলিখিত ফাইনালের মধ্য দিয়ে শনিবার শেষ হয়েছে প্রিমিয়ার লিগের ৪৫তম আসর। গত আসরের চ্যাম্পিয়নদের হারিয়েই শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছে আবাহনী। শেখ জামাল হয়েছে রানার্সআপ। লিগের প্রথম পর্বে একটি করে ম্যাচ হেরেছিল আবাহনী ও শেখ জামাল। ১১ ম্যাচে সমান ২০ পয়েন্ট নিয়ে সুপার লিগ শুরু করে তারা। সুপার লিগে দুই দলই হেরে যায় গাজী গ্রæপ ক্রিকেটার্সের কাছে। ফলে শেষ ম্যাচটি রূপ নেয় ফাইনালে। যেখানে ৪ উইকেটে জিতে বাজিমাত সফলতম ক্লাবটির। সব মিলিয়ে ১৬ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। দুই পয়েন্ট কম পেয়ে দ্বিতীয় শেখ জামাল। তৃতীয় হওয়া প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের সংগ্রহ ২০ পয়েন্ট। পরের তিন দল যথাক্রমে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ (১৮), মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব (১৭), গাজী গ্রæপ ক্রিকেটার্স (১৫)। দেশের ক্লাব ক্রিকেটে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব আরও একটু পাকাপোক্ত করল আবাহনী। আগে থেকেই বাকিদের চেয়ে অনেক ওপরে তারা। ব্যবধানটা বাড়ল আরও। সব মিলিয়ে ঢাকা শীর্ষ লিগে ২২তম শিরোপা জিতেছে আবাহনী। ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ নামকরণের পর এটি তাদের ১৫তম শিরোপা। ২০১৩-১৪ মৌসুমে লিস্ট ‘এ’ স্বীকৃতি পাওয়ার পর পঞ্চম। প্রথম বিভাগে নেমে গেছে পয়েন্ট টেবিলের নিচের দুই দল অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ও ঢাকা লেপার্ডস। আগামী মৌসুমে তাদের জায়গায় খেলবে প্রথম বিভাগ থেকে আসা গাজী টায়ার্স ক্রিকেট অ্যাকাডেমি ও পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব। রান বন্যা না হলেও, এবারের প্রিমিয়ার লিগে বড় স্কোরের দেখা মিলেছে নিয়মিত। ১৪ বার তিনশ ছুঁয়েছে দলগুলো। এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ৩৭২ রান করেছে চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। সাড়ে তিনশ স্পর্শ করা আরেক দল রানার্সআপ শেখ জামাল। অন্তত ২৭০ রান হয়েছে ৩৫ বার। ৮ ম্যাচে ২৭০ রান তাড়া করে জয়ের নজির দেখা গেছে। ৩০০ বা তার বেশি রানের লক্ষ্য তাড়া হয়েছে দুটি ম্যাচে। আসরে সেঞ্চুরি হয়েছে মোট ৩৪টি। এনামুল হক বিজয় করেছেন সর্বোচ্চ ৩টি। তানজিদ হাসান তামিম, অমিত হাসান ও রবি তেজা করেছেন ২টি করে। আরও ২৫ জন করেছেন ১টি। আবাহনীর শিরোপা পুনরুদ্ধারের অভিযানে বড় ভ‚মিকা রাখেন নাঈম শেখ। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া লিগে ১৬ ম্যাচে ৭১.৬৯ গড়ে করেন ৯৩২ রান। ১০টি ফিফটির সঙ্গে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন এক ম্যাচে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে ৮০৭ রান করেছিলেন নাঈম। এবার পেরিয়ে গেলেন ৯০০ রান। যার সৌজন্যে বিশ্ব ক্রিকেটে স্বীকৃত লিস্ট ‘এ’ টুর্নামেন্টের এক আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান এখন তার। এই তালিকায় সবার ওপরে আবাহনীতে নাঈমের উদ্বোধনী সঙ্গী এনামুল। গত আসরে বিশ্ব রেকর্ড ১ হাজার ১৩৮ রান করা ওপেনার এবারও দেখান ধারাবাহিকতা। সুপার লিগে কিছুটা ছন্দপতন হলেও সব মিলিয়ে ৫৯.৫৭ গড়ে তার সংগ্রহ ৮৩৪ রান। তিন সেঞ্চুরির সঙ্গে ফিফটি করেন তিন ম্যাচে। জাতীয় দলে জায়গা হারানোর পর আফিফ হোসেনের জন্য আসরটি ছিল ফেরার দাবি শক্ত করার মঞ্চ। বেশ ভালোভাবেই তা কাজে লাগান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। জাতীয় দলে এমনিতে নিচের দিকে ব্যাট করা আফিফ এবার আবাহনীতে তিন-চার-পাঁচ নম্বরে খেলার সুযোগ পান। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির সঙ্গে ৪ ফিফটিতে ৫৫ গড়ে করেন ৫৫০ রান। স্ট্রাইক রেট ১১০.৬৬! লিগে ৫০০ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তার স্ট্রাইক রেটই সবচেয়ে বেশি। লিগের শেষ ভাগে রানে ফেরেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে খেলা মাহমুদউল্লাহ। শেষ ম্যাচে ৪২ বলে ৬১ রানের ঝড়ো ইনিংসে অসাধারণ ফিনিশিং দেওয়া অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সব মিলিয়ে করেছেন ৫১০ রান। ফিফটি ৬টি, স্ট্রাইক রেট ৮৭.১৭। আফিফ ছাড়া লিগে অন্তত ৫০০ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একশ’র বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন পারভেজ হোসেন। আফিফের মতো তিনিও এবার প্রথমবার পেয়েছেন লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তিন অঙ্কের স্বাদ। সব মিলিয়ে ১৫ ইনিংসে ৪ ফিফটি ও ১ সেঞ্চুরিতে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বাঁহাতি ওপেনারের সংগ্রহ ৫৮৫ রান। স্ট্রাইক রেট ১০৪.০৯! লিগে সর্বোচ্চ ৪১টি ছক্কা মেরেছেন ২০ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। আফিফ-মাহমুদউল্লাহর মতো উজ্জ্বল পারফরম্যান্সে নুরুল হাসান সোহানও জানিয়েছেন জাতীয় দলে ফেরার দাবি। শেষ চার ম্যাচে টানা ফিফটিসহ ৯৪.৬২ স্ট্রাইক রেটে শেখ জামাল অধিনায়কের সংগ্রহ ৫১১ রান। দারুণ বিপিএল কাটিয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিরিজে ওয়ানডে দলে সুযোগ পেয়েছিলেন জাকির হাসান। কিন্তু সিরিজ শুরুর আগে পাওয়া হাতের চোটে ছিটকে যান তিনি। একই কারণে তাকে রাখা হয়নি চলতি ইংল্যান্ড সফরে, খেলতে পারেননি প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বেও। তবে সুপার লিগের ম্যাচে জাকির নিজের ফেরাটা রাঙান দারুণ এক সেঞ্চুরিতে। পরের ম্যাচেও তার ব্যাট থেকে আসে পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস। শেষ ম্যাচে করেন ৪৩ রান। পাঁচ ম্যাচ খেলে বাঁহাতি ওপেনারের সংগ্রহ ২২৩ রান। লিগের একদম শেষ ম্যাচে দীর্ঘ খরা শেষ হয় মোহামেডানের সৌম্য সরকারের। লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে খেলেন ১০২ রানের ইনিংস। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে প্রায় চার বছর তার সেঞ্চুরি এটি। এর আগে সবশেষ ২০১৯ সালের লিগে আবাহনীর হয়ে করেছিলেন ২০৮* রান। লিস্ট ‘এ’তে যা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরি। গত মৌসুমে শেখ জামালের প্রথম শিরোপা জয়ে বড় অবদান রাখেন পারভেজ রসুল। অফ স্পিনে নেন লিগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮ উইকেট। ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এবার নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন ভারতের এই অলরাউন্ডার। ১৫ ম্যাচে রসুলের শিকার ৩৩ উইকেট। এবারের লিগে আর কোনো বোলার ২৫-র বেশি উইকেট নিতে পারেননি। ওভারপ্রতি ৪.০৭ রান খরচ করা স্পিনার ম্যাচে ৪ উইকেট পেয়েছেন ২ বার। সেরা বোলিং ৩০ রানে ৪ উইকেট। শেষ দিকে নেমে ব্যাট হাতে দুই ফিফটিতে ২৫৭ রানও করেছেন রসুল। বরাবরের মতো এবারও দেখা গেছে বাঁহাতি স্পিনারদের দাপট। আসরে ২০-র বেশি উইকেট পাওয়া সাত জনের মধ্যে চারজনই বাঁহাতি স্পিনার- হাসান মুরাদ (২৫), তানভির ইসলাম (২৪), টিপু সুলতান (২৩), আরিফ আহমেদ (২১)। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে আগে থেকেই নিয়মিত পারফর্মার মুরাদ ও তানভির। এবার আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন গাজী গ্রæপ ক্রিকেটার্সের টিপু ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের আরিফ। গাজী গ্রæপের প্রথম ছয় ম্যাচে সুযোগ পাননি ২০১৮ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা টিপু। সপ্তম ম্যাচে সুযোগ পেয়েই ভালো করেন ২৪ বছর বয়সী স্পিনার। অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে নেন ৩ উইকেট। এরপর খেলা ৮ ম্যাচের প্রতিটিতে অন্তত ২ উইকেট করে নেন তিনি। সেরা বোলিং আবাহনীর বিপক্ষে, ৪৭ রানে ৪ উইকেট। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে খেলা আগের ৩০ ম্যাচে তার নামের পাশে ছিল ¯্রফে ২১ উইকেট। এবার ৯ ম্যাচেই তা ছাড়িয়ে গেলেন। টিপুর তুলনায় আরিফকে এবারের লিগের চমকই বলা চলে। গত আসরে শেখ জামালের হয়ে চার ম্যাচে পেয়েছিলেন ২ উইকেট। তবে এবার শুরু থেকেই খেলেন তিনি, দেন আস্থার প্রতিদান। নিয়ন্ত্রিত বাঁহাতি স্পিনে প্রতি ম্যাচেই অধিনায়ক সোহানের ভরসা হয়ে ছিলেন আরিফ। কোনো ম্যাচে ৩ উইকেটের বেশি পাননি তিনি। তবে আসরজুড়ে দেখান ধারাবাহিকতা। লিগের ১৬ ম্যাচে ২১ উইকেট পেতে তার ওভারপ্রতি খরচ ৪.৩০ রান। আবাহনীর বিপক্ষে হাই স্কোরিং শেষ ম্যাচটিতে ১০ ওভারে ¯্রফে ৩৮ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। সেরা বোলিং মোহামেডানের বিপক্ষে, ৩৫ রানে ৩ উইকেট। স্থানীয় পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৩ উইকেট পেয়েছেন সিটি ক্লাবের রবিউল হক। সুপার লিগ বা রেলিগেশন লিগে তার দল না থাকায় ১১ ম্যাচের বেশি খেলতে পারেননি তরুণ পেসার। এছাড়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ১২ ম্যাচে ১৯, রুবেল হোসেন ১১ ম্যাচে ১৮ ও সুমন খান ধরেছেন ১১ ম্যাচে ১৮ শিকার। গত আসরের মতো এবারও অলরাউন্ড পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের চিরাগ জানি। ব্যাট হাতে ৬৬৯ রানের পাশাপাশি বল হাতে তার শিকার ২৪ উইকেট। ব্যাটসম্যানদের তালিকায় তার অবস্থান পঞ্চম, বোলিংয়ে তৃতীয়। ৭টি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে ৬০.৮১ গড় ও ১০০.২৯ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ভারতীয় অলরাউন্ডার। সর্বোচ্চ ৯৪ রানের ইনিংস খেলেছেন রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে। বল হাতে ওভারপ্রতি ৪.৬৬ রান খরচ ভারতীয় এই অলরাউন্ডারের। সেরা বোলিং ৩৭ রানে ৪ উইকেট। গতবারের মতো এবারও তার হাতেই উঠেছে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com