রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

ট্রাম্প-জেলেনস্কি সংঘাত ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংকট ঘনিয়ে আসার সংকেত

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১ মার্চ, ২০২৫

 

যুক্তরাষ্ট্রে হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসের বৈঠকে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সম্পর্কে যথেষ্ট টানাপোড়েন ছিল।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগেই জেলেনস্কিকে স্বৈরশাসক বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। এমনকি ইউক্রেইনকে যুদ্ধ শুরু করার জন্য দায়ী করেছিলেন—যা প্রকৃতপক্ষে সত্য নয়। এখন জো বাইডেনের গড়ে তোলা যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেইন জোট ভেঙে পড়েছে।

আর ট্রাম্প-জেলেনস্কির বাদানুবাদে প্রকাশ্যেই যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেইন সম্পর্কে ভাঙন পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোর সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সমস্যা ঘনিয়ে আসার সংকেতও দিচ্ছে।

ইউক্রেইনের বাইরেও ইউরোপের দেশগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র তার অঙ্গীকার ধরে রাখবে কিনা তা নিয়েও এখন আরও অনেক সংশয় ও প্রশ্ন দেখা দেবে।

সবচেয়ে বড় বিষয় হল: সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান ১৯৪৯ সালে নেটো মিত্রদের ওপর হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা হিসেবে বিবেচনা করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন কিনা।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের দৃশ্যত যে প্রত্যয় তার ভিত্তিতেই এসব উদ্বেগ জন্ম নিচ্ছে। ট্রাম্প ইউক্রেইনের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছেন। আর পুতিনের জন্য দিচ্ছেন বড় ধরনের ছাড়ের প্রস্তাব, যা ইউক্রেনকেই দিতে হবে।

ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বাদানুবাদে ইউক্রেইনের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য পায়নি। আর ইউরোপীয়রাও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি মেনে ছাড় দিতে রাজি না হওয়াতেই মূলত ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

বিষয়টি কেবল খনিজ সম্পদ চুক্তি সইয়ের অস্বীকৃতিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ইউক্রেইনের বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন, তারা এমন এক যুদ্ধে রয়েছেন যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাদের জাতির বাঁচা-মরার প্রশ্ন। আর পুতিনকে দমিয়ে রাখা না গেলে তিনি সুযোগ পেলেই যুদ্ধ অবসানের যে কোনও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন।

এমন বিশ্বাসের কারণেই জেলেনস্কি বারবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাইছেন। হোয়াইট হাউজের ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠকের সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স আলোচনায় হস্তক্ষেপ করার পরই পরিস্থিতি চরম উত্তেজনায় রূপ নিয়েছিল।

এখন সন্দেহ জাগছে যে, এই প্রকাশ্য বিরোধ আসলে পূর্বপরিকল্পিত কোনও রাজনৈতিক ছিনতাই ছিল কিনা। যার উদ্দেশ্য হতে পারে হয় জেলেনস্কিকে যুক্তরাষ্ট্র যা চায় তাই মেনে নিতে বাধ্য করা, নাহয় এমন এক সংকট সৃষ্টি করা, যার দায় শেষ পর্যন্ত ইউক্রেইনীয় নেতার ওপর চাপিয়ে দেওয়া যায়।

ট্রাম্প যদি এখন বৈঠকে উত্তপ্ত আলোচনার জেরে ইউক্রেইনে সামরিক সহায়তা বন্ধ করেন, তাহলেও ইউক্রেইন যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। প্রশ্ন কেবল এ যুদ্ধ তারা কতটা কার্যকরভাবে এবং কতদিন চালাতে পারবেন সেটি। আর ট্রাম্পের এই অবস্থানের কারণে ইউরোপীয় মিত্রদের ওপর চাপ দ্বিগুণ বেড়ে যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com