এফএনএস: নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমানের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) হইচই করার বিষয়টিকে ভুল বোঝাবুঝি বলে আখ্যা দিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, এ নিয়ে খামোখা এত কথা বলার প্রয়োজন নেই। গতকাল মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। ডিসি-এসপিদের হইচই করার বিষয়টি সামনে তুলে ধরতেই সিইসি বলেন, না। এটা নিয়ে একটুও বলবো না। এগুলো নিয়ে খামোখা এত বলার কোনো প্রয়োজন নেই। আগামীর দিকে তাকান। ওখানে কিছু হয়নি, হয়তো সামান্য একটু ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে। এটা নিয়ে এত চিন্তা-ভাবনার কোনো কারণ নেই। এটা নিয়ে আবার কথা বলতে চাচ্ছি না। এটা নিয়ে আপনারাও আর মাথা ঘামাবেন না। আমরাও মাথা ঘামাবো না। গত ০৮ অক্টোবর নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত একটি বৈঠকে ডিসি-এসপিরা জ¦ালানি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রসঙ্গ তুললে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান উষ্মা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি আচরণবিধি প্রতিপালনে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করার বিষয়টি তুলে ধরেন। প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকে এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হইচই করতে থাকেন। একপর্যায়ে এই কমিশনার ডায়াস ছেড়ে নিজ আসনে ফিরে যান। বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি। নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা ইতোমধ্যে এ নিয়ে বলেছেন, ডিসি-এসপিদের হইচই করার কারণে তারা বিব্রত, তবে বিচলিত নন। মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়েই যে কোনো নির্বাচন তুলে আনে ইসি। ডিসিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনেও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এ ছাড়া প্রতিটি নির্বাচনে পুলিশের সম্পৃক্তা একটা বিরাট সহায়তার প্রয়োজন পড়ে ইসির। এদিকে ইসি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ (এনআইডি) নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, নিয়ে গেলে আমরা কী করবো? আমরা এনআইডি নিয়ে মাথা ঘামাবো না। আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন করা। এনআইডি চলে যাচ্ছে বিষয়টি সামনে আনা হলে সিইসি বলেন, কে বললো? আইন তো এখনো হয় নাই। নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। এনআইডি চলে গেলে তো আমাদের ব্যাপার নয়। এটা রাষ্ট্র, সরকার এবং পার্লামেন্টের বিষয়। এখানে আমরা কী করবো? কাজেই এটা নিয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনার কোনো কারণ নেই। এটা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাবো না। আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন করা। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনের দিকে মনযোগ দেবো। আমাদের কাছে স্বচ্ছ ভোটার তালিকা থাকবে। আমরা ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন করবো। এনআইডি নিয়ে আমরা মাথা ঘামাবো না। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, এনআইডি আমাদের বিষয় নয়। এনআইডি এখানে থাকুক, সরকারের কাছে যাক, সেটা হচ্ছে ওদের ওয়ার্ক। আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভোটাররা যাতে ভোট দিতে পারেন, সেজন্য ভোটার তালিকা শুদ্ধ আছে কিনা, যদি ইভিএমে ভোট হয় আঙুলের ছাপ দিয়ে ভোট দিতে পারবে কি-না, এগুলো আমাদের বিষয়। তিনি আরো বলেন, ভোটার তালিকার সঙ্গে এনআইডির সংযোগের কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের ভোটার তালিকার বাই প্রোডাক্ট হচ্ছে এনআইডি। এনআইডির বাই প্রোডাক্ট কিন্তু ভোটার তালিকা নয়। আমি নিউজে পড়ালাম, যে শিশুটির জন্ম হবে সেও এনআইডি পাবে। এখন সরকার যদি একটা উদ্যোগ নিয়ে থাকে সেখানে আমাদের প্রশংসা করা দরকার। এখন নির্বাচনটা যদি নিয়ে যেতে চায়, যে নির্বাচনটা অন্য কেউ করবে, তখন আমি কথা বলবো। এনআইডি যদি চলে যায়, এতে নির্বাচন প্রসেস যদি বিঘিœত হয় তখন আমরা দেখবো। ২০০৮ সালের ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে নির্বাচন কমিশন। যার ভিত্তিতেই নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। বর্তমানে ইসির কাছে সংরক্ষিত এনআইডি সার্ভার থেকে সরকারি-বেসরকারি ১৬৪টির মতো প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির পরিচিতি শনাক্ত করে নিচ্ছে। গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন নিয়ে সিইসি বলেন, আমরা একা পারবো না। সকলের সহযোগিতা লাগবে। প্রশাসন, মিডিয়ার সহযোগিতাও লাগবে। যে কোনো অনিয়ম আপনাদের চোখে পড়লে সেটা অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আমরা সমাধান করবো। আমাদের চেষ্টা থাকবে সবাই মিলে যেন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারি।