শাহজাহান জমাদ্দার ডুমুরিয়া থেকে \ কৃষিপ্রধান এ দেশে একসময় লাঙ্গল ও গরুর হাল ছাড়া জমি প্রস্তুতের কথা চিন্তা করা যেত না। কিন্তু কালের পরিক্রমায় তা হারিয়ে গেলেও অতীতের ঐতিহ্য অখনো দেখা যায় খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বেশকিছু প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার খর্নিয়া ইউনিয়নে টিপনা গ্রামে ইরি—বোরো ধানের জমিতে ধানের চারা রোপণ করার জন্য কৃষক মোঃ রফিকুল ইসলাম কে গরুর হাল ও লাঙ্গল দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে দেখা যায়। ওই সময় ওই এলাকার আরেক কৃষক মোঃ হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, গরুর হাল ও লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করতে বিঘা প্রতি ১ হাজার টাকা থেকে ১১শত টাকা পাওয়া যায় তিনি আরো জানান, তার পূর্বপুরুষরা এই কাজে জড়িত ছিল। প্রতি মৌসুমে প্রতিদিনই ১ হাজার টাকা থেকে ১২শত টাকা পাওয়া যায়। উপার্জিত অর্থ দিয়ে গরুর খাদ্য সংসারের খরচ চলে। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রের কারণে গরুর হালের কদর একেবারে কমে গেছে অনেকটাই। অত্র উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একজোড়া হালের বলদ ক্রয় করতে বর্তমানে ২ লক্ষ টাকার প্রয়োজন হয়। এছাড়া খৈল, খড়, কৃষি, ঘাসসহ বিভিন্ন খাবার যোগাড় করে দিতে হয় গরুগুলোকে। অপরদিকে গরুর চোরের উপদ্রব ও বিচ্ছিন্ন রোগ—বালাইয়ের কারণে কৃষকেরা গরু পালন করতে ভয় এর ফলে কৃষকরা যান্ত্রিক ল্যঙ্গলের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। তবে অনেক কৃষক মন্তব্য করে বলেন, গরুর হাল নিয়ে চাষ করে ধান, পাট রোপণ করলে ফসল খুব অল্যে হয়। এর কারণ হিসেবে জানা। যায়, গরুর হাল নিয়ে চাষাবাদ করলে লাঙ্গলের ফলা মাটির গভীরে যায়। মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়। এতে জমিতে ফসল খুব ভালো হয়। ধনী ও মধ্যবিত্ত কৃষকরা পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর ক্রয় করে নিজের জমি চাষাবাদ করছেন। আবার নিজের জমি চাষ করেও অন্যের জমি বিঘা প্রতি ভাড়া দিয়ে হাল চাষ করছেন। তাই ক্ষুদ্র কৃষকদের আর গরুর হালের বলদ ক্রয় করতে হয় না। এই কারণে দিন দিন। গ্রাম বাংলাতে হারিয়ে যাচ্ছে গরুর হাল। অন্য আরেক কৃষক মোঃ আতিয়ার রহমান জানান, গরু—মহিষ লাঙ্গল ও জোয়াল ছিল কৃষকদের আশির্বাদস্বরূপ। গরু—মহিষ, সাদল ও জোয়াল ছিল আমাদের ঐতিহ্য ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। কিন্তু বর্তমান কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ প্রযুক্তির ব্যবহারে সরকার ৫০ উন্নয়ন সমব্যতা প্রধান করছে কৃষকদেরকে। ফলশ্রুতিতে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারে কৃষকেরা বেশি অগ্রহী হচ্ছে। তাই গরুর হাল হারিয়ে যাচ্ছে এ উপজেলার গ্রামবাংলা থেকে।