এফএনএস: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধেই অভিযানে নেমেছেন তারা। আর যতক্ষণ না ‘ডেভিল’ শেষ হচ্ছে, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ততক্ষণ চলবে। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের নতুন মৃত্তিকা ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা। গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর এবং পাল্টা হামলায় কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনার পর সারাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামের অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয় অন্তর্বতীর্ সরকার। সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী ছাড়াও পুলিশ, বিজিবি, আনসার, কোস্ট গার্ড সদস্যদের সমন্বয়ে এ অভিযান চালানো হবে বলে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।জানিয়েছেন। এ অভিযান কাদের বিরুদ্ধে, সেই প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ডেভিল মানে কী? শয়তানই তো টার্গেট এটায়। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে, যারা আইন অমান্য করে, দুষ্কৃতকারী এবং সন্ত্রাসী, তারাই এটার টার্গেট।” অপারেশনে পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গ্রেপ্তার হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ওইটা আপনাদের মিডিয়ায় চলে আসছে।” গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, গাজীপুরে যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, অনেককেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যাদের আনা হয় নাই, তাদেরও খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে আসা হবে এবং তাদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়, এই ব্যবস্থা করা হবে। গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে গাজীপুর নগরের ধীরাশ্রম দাক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়ি ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঠেকাতে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন। পরে সেখানে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে স্থানীয়রা তাদের ওপর হামলা চালায়। ওই হামলার প্রতিবাদে গত শনিবার দুপুরে জাতীয় নাগরিক কমিটি গাজীপুর জেলা ও মহানগর শাখার আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে নগরের ভাওয়াল রাজবাড়ি সড়ক অবরোধ করেন নেতাকর্মীরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে গত শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভা হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয় সেখানে। এর আগে বিএনপি—জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০২ সালের ১৬ অক্টোবর ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ নামে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছি। সেই অভিযান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে থাকায় ২০০৩ সালের ৯ জানুয়ারি সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ব্যারাকে ফিরে যায় সেনাবাহিনী। প্রায় চার মাসের ওই অভিযানে অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যু হয় বলে সেসময় এবং পরে সংবাদমাধ্যমের তথ্যে উঠে আসে। তবে তাদের বেশির ভাগই হৃদরোগে মারা গিয়েছিলেন বলে সেসময় যৌথ বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। ওই অভিযানকে দায়মুক্তি দিতে ২০০৩ সালে করা হয় ‘যৌথ অভিযান দায়মুক্তি আইন’। এর প্রায় এক যুগ পর ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়মুক্তির আইনকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করে হাই কোর্ট।