এফএনএস আন্তজার্তিক ডেস্ক: ক্যারিবীয় দ্বীপদেশ ডোমিনিকান রিপাবলিকে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে গেছে গোটা জাতি। রাজধানী সান্তো ডোমিঙ্গোর বিখ্যাত ‘জেট সেট’ নাইটক্লাবে একটি সঙ্গীতানুষ্ঠান চলাকালে হঠাৎ ছাদ ধসে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১০০ জন। আহত হয়েছেন আরও দেড় শতাধিক। দুর্ঘটনার সময় ক্লাবটিতে উপস্থিত ছিলেন কয়েকশত মানুষ, যাদের অনেকেই এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটে স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার রাত ১২টা ৪৪ মিনিটে। জনপ্রিয় মেরেঙ্গু শিল্পী রুবি পেরেজের কনসার্ট চলাকালে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায় এবং মুহূর্তের মধ্যেই ছাদ ধসে পড়ে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ছাদে কিছু অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করার পর মঞ্চের পাশে থাকা একজন দর্শক আঙুল তুলে উপরের দিকে ইঙ্গিত করেন। কিছু সময়ের মধ্যেই আলো ও অন্যান্য সরঞ্জামসহ পুরো ছাদ ধসে পড়ে মঞ্চ ও দর্শকসারির ওপর।
এ দুর্ঘটনায় রুবি পেরেজসহ বহু দর্শক নিহত হন। পেরেজের কন্যা জুলিনকা জানান, তিনি দুর্ঘটনার সময় নিজেকে বাঁচাতে সক্ষম হলেও তার পিতা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েন।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মন্টে ক্রিস্টি প্রদেশের গভর্নর নেলসি ক্রুজ এবং সাবেক মেজর লিগ বেসবল তারকা অক্টাভিও ডোটেল। ডোটেলকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে খেলা করা একজন সফল পিচার, যিনি প্রায় ১৪ বছর বিভিন্ন বিখ্যাত দলে খেলেছেন।
ঘটনার পরপরই জাতীয় জরুরি অপারেশন সেন্টারের (সিওই) অধীনে শুরু হয় বিশাল উদ্ধার অভিযান। প্রায় ৩৭০ জন উদ্ধারকর্মী এখনো কাজ করে যাচ্ছেন ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা জীবিতদের উদ্ধারে। ব্যবহৃত হচ্ছে ভারী যন্ত্রপাতি, ক্রেন এবং অন্যান্য প্রযুক্তি।
ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের পরিচালক জুয়ান ম্যানুয়েল মেন্ডেজ বলেন, “যতক্ষণ জীবনের আশা থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের অভিযান চলবে।”
ধ্বংসস্তূপের পাশে অপেক্ষমাণ আত্মীয়—স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে বাতাস। রুডলফো এসপিনাল নামের একজন জানান, তার এক ভাতিজি, চাচাতো ভাই ও কয়েকজন বন্ধু এখনও নিখোঁজ।
দেশটির প্রেসিডেন্ট লুইস আবিনাদার এ ঘটনাকে “জাতীয় ট্র্যাজেডি”আখ্যা দিয়ে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। তিনি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং আহত ও নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
“এটি শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি আমাদের জাতির হৃদয়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে,”বলেন রাষ্ট্রপতি আবিনাদার।
এখনো স্পষ্ট নয় কী কারণে ক্লাবের ছাদ ধসে পড়েছে। ক্লাবটির ধারণক্ষমতা প্রায় ১,৭০০ জন হলেও ঘটনার সময় সেখানে অনুমানের চেয়েও বেশি লোক ছিল বলে জানায় স্থানীয় গণমাধ্যম। এই দুর্ঘটনা দেশের অবকাঠামোগত নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
জনগণ এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ক্লাব কতৃর্পক্ষের গাফিলতি ও সম্ভাব্য দুর্বল নির্মাণ কাঠামোর তদন্ত দাবি করেছে।