রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৪ অপরাহ্ন

ঢাকায় বেড়েছে বায়ুদূষণ, বাড়ছে রোগীর সংখ্যাও

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: গত আট বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ ছিল নভেম্বর মাসে। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) সবোর্চ্চ স্কোর নিয়ে ডিসেম্বরেও বিশে^র সবচেয়ে খারাপ বাতাসের তালিকায় বেশ কয়েকবার শীর্ষে এসেছিল রাজধানী ঢাকার নাম। একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ২০০ হলে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়। ২০১ থেকে ৩০০ একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয় এবং ৩০১ থেকে ৪০০ একিউআই স্কোরকে ‘বিপজ্জনক’ হিসাবে বিবেচনা করা হয়; যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে—বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ এবং ওজোন (ও৩)। ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণের সমস্যায় জর্জরিত। এর বাতাসের মান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় ও বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়। এবার অধিকাংশ দিনই একিউআই স্কোর ৩০০ পার করে ঢাকা। আর এই বায়ুদূষণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে রোগবালাই, বাড়ছে দূষণজনিত কারণে অসুস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যাও। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণায় দেখা গেছে, চলতি বছরের নভেম্বর মাসে ঢাকার মানুষ একদিনও ভালো বা নির্মল বায়ুতে নিশ্বাস নিতে সক্ষম হয়নি। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে ১ দিনের বায়ুমান ছিল ‘মধ্যম’ প্রকৃতির, ৪ দিন ছিল ‘সতর্কতামূলক’, ১২ দিন ছিল ‘অস্বাস্থ্যকর’ এবং ১৩ দিন বায়ুর মান ছিল ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’। ঢাকার আমেরিকান দূতাবাস থেকে প্রাপ্ত ২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের বায়ুমান সূচক বা একিউআইয়ের তথ্য—উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) জানিয়েছে, বিগত আট বছরের নভেম্বর মাসের মধ্যে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাস বায়ুদূষণের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। দেখা গেছে, ঢাকায় বায়ুমান সূচক গত আট বছরের (২০১৬—২০২৩) নভেম্বর মাসের গড় মানের (১৭৬ দশমিক ৬৬) তুলনায় ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের গড় দূষণ ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে দূষণ ১১ দশমিক ০৫ শতাংশ বেড়েছে। গত নয় বছরের মধ্যে ২০১৬ সালে ঢাকার নভেম্বর মাসের বায়ুমান সূচকের গড় ছিল ১৬৯, ২০১৭ সালে ১৭৮, ২০১৮ সালে ১৯৭, ২০১৯ সালে ১৫৯, ২০২০ সালে ১৬৩, ২০২১ সালে ১৯৪ দশমিক ৮, ২০২২ সালে ১৭৬ এবং ২০২৩ সালে ছিল ১৭৫ দশমিক ৬। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের বায়ুমান সূচক বেড়ে ১৯৫ হয়েছে। গবেষণার প্রধান ক্যাপসের চেয়ারম্যান ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান বলেন, এসব কারণ দুই বছর থেকেই বলে আসছি। এগুলোর সমাধান হলেই নগরবাসী ভালো থাকতে পারবে। এবার ভারি শীতে দূষণ গতবারের চেয়েও বেশি হতে পারে। আমরা লক্ষ্য করেছি, আইনের বাস্তবায়ন কম। এছাড়া বায়ুদূষণের সোর্সগুলো এখনো দৃশ্যমান। কলকারখানার ধেঁায়া থেকে শুরু করে রাজধানীতে নির্মাণাধীন ভবন, রাস্তা খেঁাড়াখুঁড়িতে আইন কিছুই মানা হচ্ছে না। অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত, ওয়াসা, পরিবেশ অধিদপ্তর যদি সমন্বয় করে কাজ করতো তাহলে এ উৎসগুলো থেকে দূষণ হতো না। দেখা গেছে, যত্রতত্র রাস্তা নির্মাণের কাজ, কলকারখানার ধেঁায়া, গাড়ির কালো ধেঁায়া, ধূমপান, যেখানে—সেখানে কাগজ, আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলার ফলে বায়ুদূষণ হচ্ছে। মূলত এসব দূষণের কারণে বাড়ছে রোগ—বালাই। স্টেট অব গ্লোবাল এয়ারের (এসওজিএ) ২০২৪ সালের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়াসহ পূর্ব—পশ্চিম, মধ্য এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকার দেশগুলোতে বায়ুদূষণজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। শুধু ২০২১ সালেই বাংলাদেশে দুই লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মৃত্যুর কারণ ছিল এই বায়ুদূষণ, যা জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। বায়ুদূষণের কারণে ওই বছর দেশে ১৯ হাজারেরও বেশি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। রিপোর্টে আরও উঠে এসেছে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা বায়ুদূষণজনিত রোগের বেশি শিকার হয়ে থাকে। এর প্রভাবে অপরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহণ, কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ, হাঁপানি ও ফুসফুসের রোগসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। এবার প্রচণ্ড শীতে দূষণ আরও তীব্র হওয়ার শঙ্কা জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, জনগণ বা সরকারি—বেসরকারি যেসব পর্যায়ে দূষণ করছে তাদের দূষণ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করতে হবে। সার্বিকভাবে সব কিছুতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। রাস্তা খেঁাড়াখুঁড়িতে সরকারি প্রতিষ্ঠান জড়িত। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এদিকে দূষণের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশ থেকে। যদিও এ ব্যাপারে কিছু করা সম্ভব নয়, সেক্ষত্রে নিজেদের নিরাপদ রাখতে অভ্যন্তরীণ দূষণ বন্ধকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে বলে মত বিশ্লেষকদের। তারা মাস্ক ব্যবহারেরও পরামর্শ দেন। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, বায়ুদূষণের কারণে কুয়াশা বেড়ে যায়। কুয়াশা বেড়ে গেলে দিনের তাপমাত্রা কমে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও প্রচণ্ড শীত অনুভূত হয়। মূলত দূষিত বাতাসে প্রচুর পরিমাণে ধূলিকণা মিশে যায় যা মেঘ কুয়াশা তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখে। গত বছরের তুলনায় এবার শীত কিছুটা আগে এসেছে। সে কারণে কুয়াশার সঙ্গে দূষণ মিশে দিনের দৃশ্য বা আলো কমে যাবে। খোলা আকাশ কম দেখা যাবে। শীতের অনুভূতিও বাড়তে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com