বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
১৭ বছর পর কারামুক্ত বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম পিন্টু প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোনালাপ শেখ হাসিনা পরিবারের দুর্নীতি: ৮ মেগা প্রকল্পের সব নথি তলব দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে শেখ হাসিনাকে ফেরত আনতে কূটনৈতিক চ্যানেলে চেষ্টা করা হচ্ছে: চিফ প্রসিকিউটর ঢাকা—খুলনা রুটে নতুন ট্রেন চলাচল শুরু, উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা যারা গণহত্যায় জড়িত ছিল তাদের বিএনপিতে নেওয়া হবে না: মির্জা ফখরুল তরুণদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চায় নির্বাচন কমিশন দেশের তিন পরিবেশ আদালতে আইনি বাধায় পর্যাপ্ত মামলা নেই সীমান্ত থেকে ১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

তরুণদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চায় নির্বাচন কমিশন

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: তরুণদের ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য পুরোনো ভোটার তালিকায় নির্বাচন না করে যোগ্য নাগরিকদের তফসিল ঘোষণার আগ মুহুর্তেও ভোটার তালিকায় যুক্ত করতে চায় কমিশন। এরই মধ্যে যারা ১৮ বছর পূর্ণ করেছেন কিংবা আগামী ১ জানুয়ারিতে যাদের বয়স ১৮ বছর হবে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে যারা এখনও ভোটার হননি, তাদেরকে ভোটার হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। জানা গেছে, আগামী ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। যাদের জন্ম ১ জানুয়ারি ২০০৭ বা তার পূর্বে, তারা যদি ভোটার না হয়ে থাকেন তাদের সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগপূর্বক ভোটার হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ইসি। এর আগে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) ভুল আছে, তাদেরকে জরুরিভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভুল সংশোধন করার জন্যও অনুরোধ করা হয়। উল্লেখ্য, বর্তমানে সারা দেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম চলছে। যাদের জন্ম ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে এবং হালনাগাদে বাদ পড়েছেন তাদের তালিকাভুক্ত করার কাজ চলছে। তাছাড়া বিভিন্ন কারণে যারা ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারেননি, তারা আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজ নিজ উপজেলা/থানার নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে ভোটার হতে পারবেন। তবে নতুনদের ভোটার হতে গেলে কী কী লাগবে সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। তাতে বলা হয়েছে, ভোটার হতে পাঁচটি তথ্য অথবা পাঁচ ধরনের কাগজপত্র দিতে হবে। এগুলো হলো— ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মসনদের কপি, জাতীয়তা/নাগরিকত্ব সনদের কপি, নিকট আত্মীয়ের (পিতা—মাতা, ভাই—বোন প্রভৃতি) এনআইডির ফটোকপি, এসএসসি/দাখিল/সমমান অথবা অষ্টম শ্রেণি পাশের সনদের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) এবং ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ/গ্যাস/পানি/ চৌকিদারি ট্যাক্স রশিদের ফটোকপি)। এর আগে গত ২১ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরপর প্রথম কমিশন বৈঠকে তরুণদের ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি চিহ্নিত করা হয়। এজন্য পুরোনো তালিকা নয় বরং তফসিলের আগ পর্যন্ত যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য হবেন তাদেরও তালিকার যোগ করার পরিকল্পনা নেয় ইসি। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রতি বছর আইনে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। আর সেই সময়ের যত পরেই নির্বাচন হোক না কেন, পুরোনো সে তালিকা দিয়েই করা হয় ভোটের আয়োজন। এতে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও অনেকে ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদ নির্বাচন সাধারণত ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে হয়ে থাকে। তফসিল হয় তার প্রায় দেড় মাস আগে। আর ভোটার তালিকা হালনাগাদ হয় প্রতিবছর ২ মার্চ। এতে প্রায় অন্তত নয় থেকে সাত মাস ধরে যারা ১৮ বছর বয়স পূর্ণ করেন, তারা তালিকার বাইরে থেকে যান। এতে বিরাট সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে পারেন না। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি। এই নির্বাচনের আগে হালনাগাদ হয় ২০২৩ সালের ২ মার্চ। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বাদ পড়াদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য একটি সুযোগ দিয়েছিল সে সময়কার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। ওই কমিশন সে বছর ১৫ নভেম্বর ভোটের তফসিল দিয়েছিল। কর্মকর্তারা বলছেন, ৭ সেপ্টেম্বর জারি করা এক নির্দেশনায় ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাদ পড়া ভোটারদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল আউয়াল কমিশন। সে সময় বলা হয়েছিল, যারা ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে ১৮ বছর বয়স পূর্ণ করেছেন, তারাই কেবল ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। এতে দুই লাখ ভোটার যোগ হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে বাদ পড়েছিলেন ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ১৮ বছর পূর্ণকারীরা। জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটার হয়েছিলেন ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ১৫৭ জন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের নিয়েই করা হয়েছিল চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ছয় কোটি পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ১৬৯ জন আর নারী ভোটার পাঁচ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার ১৪০ জন। হিজড়া ভোটার ছিল ৮৪৮ জন। অন্যদিকে, নির্বাচনের দুমাস পর, ২০২৪ সালের ২ মার্চ প্রকাশিত চূড়ান্ত হালনাগাদ শেষে ভোটার দাঁড়ায় ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। এ ক্ষেত্রে ১ জানুয়ারি ২০২৪ সাল পর্যন্ত তথ্য নেওয়া হয়। এই হিসেবে এক বছরে ভোটার বাড়ে ২৫ লাখ ১৭ হাজার তিনজন। অর্থাৎ বিরাট সংখ্যক ভোটার নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এ বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, যখনই একটা নির্বাচন আসবে, তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত বিশেষ অধ্যাদেশ জারি করে হোক বা যেভাবেই হোক, যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য তাদের যেন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারি, সে বিষয়ে আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে শতভাগ শুদ্ধতার সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা। এদিকে তরুণদের পাশাপাশি প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাতেও তৎপর ইসি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে দেড় কোটি প্রবাসী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে থাকা ভোটে দায়িত্বরত ব্যক্তি, কর্মস্থল অন্য স্থানে হওয়ায় এবং পিছিয়ে পড়া ব্যক্তিরাও থাকছেন ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার বাইরে। প্রক্রিয়াগত জটিলতা ও তথ্যের ঘাটতি থাকায় পোস্টাল ব্যালট বা ডাকযোগে ভোট দেওয়ার আইনি ব্যবস্থা থাকলেও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই বিশাল এই নাগরিকদের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা আনার উপায় খুঁজছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। জানা গেছে, গত অক্টোবরে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গঠন হওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে বৈঠক করে সুপারিশ গ্রহণ করছে। সেখানে প্রায় সকল পক্ষ থেকেই পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের ভোটে আনার বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার সুপারিশ করেছেন। এজন্য অনেকেই আইনে পরিবর্তন, পরিমার্জন করার কথাও বলছেন। কেননা, বিদ্যমান আইনে পোস্টাল ব্যালটে বা ডাকযোগে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থাটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ। এতে ভোটাররা ইচ্ছা থাকলেও উৎসাহ পান না বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, ভোটার তালিকায় অসঙ্গতি দূর করার পাশাপাশি প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করা ও না ভোটের বিধান যুক্ত করাসহ নানা সংস্কার প্রস্তাব পেয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এসব প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেবে কমিশন। কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের স্বদিচ্ছার উপর নির্ভর করছে আগামী নির্বাচন কতটা অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com