মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ০৩:২৪ পূর্বাহ্ন

তাইওয়ান নিয়ে চীন-মার্কিন উত্তেজনায় চাপে ইউরোপ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৩

এফএনএস বিদেশ : তাইওয়ান ইস্যুতে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া এড়ানো ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে ইউরোপের জন্য। এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য সংঘাতে দিকে অগ্রসরতার ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে এসেছে। স¤প্রতি চীন সফরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ মন্তব্য করেছেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত হবে না তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করা’। তার এই মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি অঞ্চলে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনাটি পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্রটির সম্ভাব্য সংকটের ক্ষেত্রে ইইউর একটি সাধারণ অবস্থান অবলম্বন করতে বøকটি যে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনাকে পাশ কাটিয়ে গেছে সেটি তুলে ধরছে। তাইওয়ান ইস্যুতে চীন-মার্কিন উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটেও ইইউর কোনো নীতি নেই। উত্তেজনার তীব্রতা বৃদ্ধির মধ্যে রয়েছে সাবেক মার্কিন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর এবং স¤প্রতি তাইওয়ানি নেতা সাই ইং-ওয়েনের যুক্তরাষ্ট্র সফর। আগামী জানুয়ারিতে তাইওয়ানের নির্বাচন ঘিরে নতুন করে স্বাধীনতার বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। যা বেইজিংকে আরও ক্ষুব্ধ করবে। এরপরও ইইউ নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তাইওয়ান প্রণালীতে শত্রæতাপূর্ণ পদক্ষেপের মোকাবিলায় বøকের অবস্থান কী হবে তা নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে যাচ্ছেন। ইইউ দেশগুলোর এশিয়াকেন্দ্রিক কর্মকর্তাদের একটি ফোকাস গ্রæপ মাঝে মধ্যে তাইওয়ান নিয়ে আলোচনা করে। সর্বশেষ এই গ্রæপের আলোচনা হয়েছে ৩০ মার্চ। এসব আলোচনায় যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, কেমন পরিস্থিতি হতে পারে তা নিয়ে কোনো বিতর্ক হয়নি, অথবা কীভাবে বা কখন ইইউ’র প্রতিক্রিয়া জানানো প্রয়োজন তা নিয়েও কোনো আলোচনা হয়নি। দীর্ঘ সময় জার্মান ক‚টনীতিক দায়িত্ব পালন করা ওল্ফগ্যাং ইশিঞ্জার বলেছেন, কয়েকটি ইউরোপীয় ছোট দেশের নজরে খুব বেশি দিন আগে তাইওয়ান নিয়ে চীন-মার্কিন উত্তেজনায় কোনো নজর ছিল না। এমন বৃহৎ ও জটিল ইস্যুতে তারা দূরে থাকতে পছন্দ করেছিল। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিলে অবশ্যই কাউকে তার সম্পদ, প্রতিরোধ ও সর্তকতামূলক ইঙ্গিত দেওয়ার কথা ভাবতে হবে। তাইওয়ান নিয়ে ইউরোপের নীতির মূলকেন্দ্রে রয়েছে ‘এক চীননীতি’। এই নীতির আওতায় স্বীকার করা হয় চীনের একটি মাত্র সরকার রয়েছে বলে বেইজিংয়ের অবস্থান। আর তা বেইজিংয়ে অবস্থিত। তাইওয়ানের সঙ্গে ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কোনো আনুষ্ঠানিক ক‚টনৈতিক সম্পর্ক নেই। বøকটির আনুষ্ঠানিক অবস্থান হলো তাইপে বা বেইজিংয়ের বিদ্যমান অবস্থানের কোনো একপাক্ষিক পরিবর্তন হওয়া উচিত না। এর অর্থ হলো তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন না দেওয়া এবং দ্বীপটি দখলে চীনের শক্তি প্রদর্শনের বিরোধিতা করা। বাস্তবে প্রতিটি ইইউ সদস্য রাষ্ট্র তাইওয়ানকে ভিন্নভাবে দেখে। এই অবস্থান নির্ভর করে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক কতটা জোরদার তার ওপর। লিথুয়ানিয়ার মতো কয়েকটি ইইউ দেশ তাইপের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করেছে। তবে অপর দেশগুলো আরও সতর্ক অবস্থান বজায় রাখছে। ইইউ একটি প্রস্তাবিত বিনিয়োগ পরিকল্পনা দূরে সরিয়ে রেখেছে। জার্মানির শিক্ষামন্ত্রী গত মাসে তাইওয়ান সফর করেছেন। এটি কয়েক দশকের মধ্যে প্রথম মন্ত্রি পর্যায়ে সফর। তাইওয়ান নিয়ে ইইউর বিস্তারিত অবস্থানের অনুপস্থিতি দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিতর্কের তীব্রতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সম্ভাব্য চীনা আক্রমণ থেকে তাইওয়ানকে সুরক্ষা দেওয়াকে মার্কিন শক্তির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা মনে করা হয়। তাইওয়ান আক্রান্ত হলে ইইউকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে পড়তে হবে জেনেও এমন অবস্থান বøকটি। দ্বীপটির বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগকারী হলো ইইউ। আর বøকটির ১৫তম বাণিজ্যিক অংশীদার তাইওয়ান। যেকোনও সংঘাত ইউরোপ ও চীনের সাপ্লাই লাইনকে ঝুঁকিতে ফেলবে। দক্ষিণ চীন সাগর দিয়ে পণ্য পরিবহন সংকটে পড়তে পারে। অবশ্য কয়েকজন ইইউ কর্মকর্তা তাদের সতর্কতাকে আরও শানিত করছেন। তারা বলছেন, তাইওয়ানে চীনা সেনাবাহিনীর যেকোনও আক্রমণের পাল্টা পদক্ষেপ থাকবে। গত মঙ্গলবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে ইউরোপীয় কমিশন প্রধান উরসুলা ভন ডের লিয়েন বলেছেন, বøকটি তাইওয়ান প্রণালীর বিদ্যমান অবস্থান পরিবর্তনে যেকোনও একতরফা পদক্ষেপের, বিশেষ শক্তি প্রয়োগের বিরোধী। গতকাল বৃহস্পতিবার জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বায়েরবক বলেছিলেন, তাইওয়ান প্রণালীতে সামরিক সংঘাত বিশ্বজুড়ে শকওয়েভ ছড়াবে। একটি অস্থিতিশীলতার পরিণতি সব দেশে পড়বে। আমরা গভীর উদ্বেগ নিয়ে তাইওয়ান প্রণালী উত্তেজনায় নজর রাখছি। রডিয়াম গ্রæপের চীনা শাখার সিনিয়র উপদেষ্টা নোয়াহ বারকিন বরেছেন, আমার মনে হয় ইউরোপকে সত্যিকার অর্থে ভিন্ন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হতে হবে। কারণ এটি একেবারে সাদা বা কালো নয়। এটি হয় আক্রমণ অথবা আক্রমণ নয়। মূল প্রশ্ন হলো কোন পর্যায়ে ইউরোপকে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং কীভাবে সেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com