দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ তীব্র তাপদাহ, প্রখর রৌদ্রতাপ ভ্যাপসা গরম, সর্বত্র হ্যাঁসফ্যাঁস জীবন ওষ্ঠাগত জীবন যাত্রায় ছন্দপতন, জনজীবন বিপর্যস্থ, বিপন্ন বিবর্ন এ দৃশ্য সারা দেশের ন্যায় সাতক্ষীরার। বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার আবহাওয়া বরাবরই সহনীয় হিসেবে বিবেচিত । কিন্তু বর্তমান গ্রীষ্ম মৌসুমে সাতক্ষীরার তাপমাত্রা এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে জনজীবনে কেবল বিরুপ প্রভাব পড়েনি জনজীবনে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। সবত্র জীবনের পরাজিত হওয়ার মুহুর্ত আর জীবনের পরাজয়ের মুহুর্ত কেবলমাত্র তাপদাহকে চিহিৃত করেছে। পথে প্রান্তরে বাজার ঘাটে, অফিস প্রতিষ্ঠানে, সড়কে, মাঠে, কর্মক্ষেত্রে, আবাসস্থলে সর্বত্র গ্রীষ্মের ঝাকুনি আর ঝাকুনি। সকাল হতে শুরু করে রাত পর্যন্ত আবহাওয়ার সামান্যতম পরিবর্তন নেই রাতে কেবল পার্থক্য এতটুকু যে দিনে সূর্য থাকে রাতে সূর্য থাকে না। গত সপ্তাহ ব্যাপী সাতক্ষীরার জীবন যাত্রায় তাপদাহ কতটুকু মারাত্মক ক্ষতির কারনে পরিনত হয়েছে তা বর্ণনাতীত। প্রচন্ড তাপদাহ, সেই সাথে আগুন হাওয়া সব মিলে সাতক্ষীরার জনজীবনের পাশাপাশি কৃষি উপাদানকে ব্যাপক ভাবে ক্ষতির কারণে তাপদাহ। সূর্যেয়র প্রখরতা আর তাপ এতটুকু বিমর্ষ আর ভয়ানক রুপ ধারন করেছে যে সবজি ক্ষেতের সবজি হলুদাভাব হয়ে উঠছে। পুকুরের পানিতে থাকা মাছ প্রখর তাপদাহের কল্যানে ছটফট লাফালাফি করে ভাসতে তাকছে। পুকুরের পানি কমে তলস্তর দেখা যাচ্ছে। জনসাধারন পুকুরে গোসলের যথেষ্ট পানি পাচ্ছে না। দৈনন্দিন ঘর গৃহস্থালির কাজকর্ম সারতে পুকুরের পানির অভাব দারুন ভাবে অনুভূত হচ্ছে। প্রচন্ড তাপদাহের কারনে প্রান্তীক পর্যায়ের খেটে খাওয়া মানুষ গুলো বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেনি কাজ করতে না পেরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। প্রচন্ড গরমের কারনে মাঠে ঘাটে কাজ করতে না পেয়ে জীবন সংগ্রামের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি প্রান্তিক পর্যায়ের শ্রেনিগোষ্ঠী। জেলার চিংড়ী ঘেরগুলোর চিংড়ী তাপদাহের কবলে আর ঘেরে ঘেরে চিড়ীর মড়ক শুরু হয়েছে। ঘেরের পানিতে যেমন মৃত চিংড়ী দেখা যাচ্ছে অনুরুপ ভাবে ঘেরের ভেড়িবাধের ধারে মরা চিংড়ী পড়ে থাকছে আর এমন অর্থনৈতিক মহাবিপর্যয় কেবলমাত্র তাপদাহের কারনেই। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌচেছে যে জনসাধারন ঘর হতে বের হতে ভয় পাচ্ছে। সকালে বাজার ঘাটে কিছুটা মানুষের উপস্থিতি দেখা গেলেও সুর্যের তাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে বাজার ঘাট জনশুন্য হয়ে পড়ছে। সাতক্ষীরা কালিগঞ্জের যাত্রীবাহী যান বাহানগুলোতে তিল ধরনের ঠাই থাকতো না। কিন্তু তাপদাহের কাছে পরাজিত যাত্রীরা ঠেলাঠেলি এবং অতিরিক্ত ভিড়ের মধ্যে যানবাহনে উঠছে না। গত দুই দিনের তাপদাহের কাছে পরাজিত হয়েছে সড়ক, সাতক্ষীরা কালিগঞ্জের পিচঢাকা সড়ক তাপদাহের অসহনীয়তার কাছে বিপর্যস্থ হয়েছে এবং সড়কে জমাটবাঁধা পিছ গলতে শুরু করেছে। গত দুই দিন পিছ গলার এমন দৃশ্যত দেখা গেছে। যাত্রীবাহী যানবাহন, মাইক্রো, মোটরসাইকেল সড়কে চলতে চাকায় গলা পিচ আটকে চটপট শব্দ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মরুভুমি অঞ্চলে বিশেষ করে তাপমাত্রা চলিশ ডিগ্রী বা তার কম বেশী হয়। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চলিশ ডিগ্রী তাপমাত্রা কতটুকু বিপর্যয় কর তা সহজেই অনুমেয়। মরুভূমির তাপমাত্রা এবং আমাদের দেশের তাপমাত্রা একই ধরনের, একই প্রকৃতির হলে তা কতটুকু বিপর্যয় বয়ে আনবে তা সহজেই ভাবনা ও বিশ্লেষনের বিষয়। সাতক্ষীরার বাস্তবতায় অতিরিক্ত গরমে, তাপদাহে, প্রখর সুর্যের তাপে মানব দেহকে বিশেষ যতœ, সতর্কতা ও সাবধানতা মধ্যে রাখা জরুরী। তাদপাহের দাবানলে সাতক্ষীরার বিস্তীর্ন জনপদ কেবল পুড়ছে তা নয়, মানবদেহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বৃদ্ধি পাচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুকি। ইতিমধ্যে সাতক্ষীরার তাপমাত্রা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। আবহাওয়া দপ্তর সুত্রে জানাগেছে গত কয়েকদিন সাতক্ষীরার তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। গতকাল তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভিমত তীব্র খরতাপ আর তাপদাহকে মোকাবিলা করনের সহজতর উপায় খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে বের না হওয়াই যথাযথ। প্রয়োজনের তাগিদে বের হলে সঙ্গে ছাতা ও বিশুদ্ধ পানি রাখা শ্রেয়। গর্ভবতীমা, বৃদ্ধ এবং শিশুদেরকে কোন ভাবেই তাপদাহের মুখোমুখি হওয়া উচিত নয়। তীব্র গরমে যে বিষয়টি বিশেষ ভাবে তাড়িত করে তা হলো পানি শুন্যতা এবং পানি শুন্যতায় যে কোন সময় হিটস্টোক হতে পারে, ইতিমধ্যে সাতক্ষীরায় তাপ বাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ে বিশেষ করে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ছর্দি, কাশি, এলার্জির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। রোজা দারদের জন্য বিশেষ পরামর্শ ইফতারের সময় পর্যাপ্ত পানি ও শরবত পান করুন, কোন ভাবেই বাইরের পানি বা শরবত গ্রহন করবেন না। জন্ডিস, ডায়রিয়া ও টাইফয়েড এ আক্রমন হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রয়োজনে খাবার স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে। গরম বা টাইটফিট জামা কাপড় পড়া হতে বিরত থাকতে হবে। মৌসুমী ফলমুল তাপদাহ হতে কিছুটা পরিত্রান দিতে পারে। হেভিফুড বিশেষ করে বিরানী, পোলাও হতে বিরত থাকা হিটস্ট্রোক হতে রোধ করতে পারে। তাপদাহের এই তীব্র ও অসহনীয় সময় গুলোতে সর্বাপেক্ষা বড় বিষয় নিজেকে সুস্থ রাখা।