এফএনএস: তাপমাত্রা খুব বেশি নিচে নামেনি। কিন্তু সারাদেশেই এখন তীব্র শীতের অনুভ‚তি। মূলত কুয়াশা ও মেঘের কারণে রোদ উঠতে না পারায় কমে গেছে দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান, একই সঙ্গে উত্তর দিক থেকে বয়ে যাওয়া ঠান্ডা বাতাসের কারণে জেঁকে বসেছে শীত। এ পরিস্থিতি আগামী ৪ থেকে ৫ দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। গত মঙ্গলবার সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। গতকাল বুধবার সকালে সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শ্রীমঙ্গল ছাড়া আর দেশের কোথাও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। বিচ্ছিন্নভাবে একটি স্থানে (শ্রীমঙ্গল) তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে থাকায় শৈত্যপ্রবাহ ঘোষণা করেনি আবহাওয়া বিভাগ। গতকাল বুধবার সকালে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ৫ থেকে কমে হয়েছে ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো ঢাকায়ও শীত তীব্র হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মেঘ-কুয়াশায় ঢেকে আছে ঢাকার আকাশ, সঙ্গে আছে উত্তরের হিমেল হাওয়া। আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান বলেন, এখন শৈত্যপ্রবাহ নেই। রাতের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তাকে বলে শৈত্যপ্রবাহ। শৈত্যপ্রবাহ নেই, তারপরও কিন্তু তীব্র শীত অনুভ‚ত হচ্ছে। এর কারণটা হলো দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্যটা কমে এসেছে। তিনি বলেন, আগে কোনো স্থানে হয়তো সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি, আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে পার্থক্য ছিল ১৫ ডিগ্রি, এখন সেখানে হয়তো পার্থক্য কমে ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে গেছে। ঢাকায় দেখুন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি, আর সর্বোচ্চ ১৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি। পার্থক্য ৫ ডিগ্রির মতো, কিন্তু আগে সেখানে ১৫ ডিগ্রির মতো পার্থক্য ছিল। এজন্য বেশি শীত অনুভ‚ত হচ্ছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণ তুলে ধরে হাফিজুর রহমান বলেন, তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণ হলো দিনের বেলা সূর্য নেই, মেঘ ও কুয়াশার জন্য রোদ উঠতে পারছে না। এ ছাড়া সঙ্গে উত্তরের বাতাসও রয়েছে। এসব কারণেই মূলত তাপমাত্রার পার্থক্য কমে শীত বেড়েছে। আগামী চার-পাঁচদিন শীতের এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে জানিয়ে এ আবহাওয়াবিদ বলেন, আপাতত শৈত্যপ্রবাহ আসার সম্ভাবনা নেই। এ পরিস্থিতি কাটার পর পরবর্তী অবস্থাটা বুঝা যাবে। আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা যায়, আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘনকুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এসময়ে সারাদেশে রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভ‚তি অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এদিকে তীব্র শীতে জবুথবু অবস্থায় রয়েছে উত্তরাঞ্চলের মানুষ। উত্তরের সীমান্ত ঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে জেলার জনপদ। দিনের বেলায়ও হেড লাইট জ¦ালিয়ে সড়কগুলোতে চলছে যানবাহন। কনকনে শীতে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। নদীর তীরবর্তী অববাহিকায় বসবাস করা শিশু বৃদ্ধদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব। গতকাল বুধবার সকালে কুড়িগ্রাম ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছেন কুড়িগ্রামের রাজার হাট আবহাওয়া ও পর্যবেক্ষণাগার অফিসের কর্মকর্তা তুহিন মিয়া। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে দেখা যায়, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বেশিরভাগই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। গত মাসের তুলনায় এ মাসে ১২-১৫ শতাংশ রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন মো. মঞ্জুর ই মোর্শেদ বলেন, এখন শীতকাল। আবহাওয়া পরিবর্তনে জেলায় ১৫ শতাংশ রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গুরুত্বের সঙ্গে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে কনকনে শীত উপেক্ষা করেই কাজে বের হচ্ছেন খেটে খাওয়া মানুষ ও শ্রমজীবীরা। রিকশাচালক ইয়াকুব আলী বলেন, এ ঠান্ডার মধ্যে রিকশা চালতে খুব অসুবিধা হয়। কিন্তু কি আর করবো, পেট তো বাঁচানো লাগবে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবদুল হাই সরকার বলেন, সরকারিভাবে জেলার নয়টি উপজেলার জন্য বরাদ্দের ৩৮ হাজার ৭০০ কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা বিতরণের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এ ছাড়া আমরা মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠিয়েছি। এরইমধ্যে জেলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেসরকারি সংগঠনগুলো কম্বল বিতরণ করছে। অন্যদিকে পাবনায় এক সপ্তাহ ধরে হাড় কাঁপানো শীত পড়ছে। ঘন কুয়াশা ও হিম বাতাসে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন চরাঞ্চলের বাসিন্দা ও নিম্ন আয়ের মানুষ। গত মঙ্গলবার সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। গতকাল বুধবার সকাল ১১টা সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। সড়কে হেড লাইট জ¦ালিয়ে চলছে যানবাহন। জরুরি কাজ ছাড়া বাসা থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। রাস্তায় শ্রমজীবী-দিনমজুররা কাজের ফাঁকে ফাঁকে আগুন জ¦ালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। উষ্ণতার খোঁজে অনেকে চায়ের দোকানের ভিড় করছেন। কাজ করতে না পারায় শ্রমিকদের আয় কমে গেছে। কৃষি শ্রমিক, রঙমিস্ত্রি ও ভ্যানচালাকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে তারা ঠিকমতো কাজে বের হতে পারছেন না। কাজ করতেও পারছেন না। এতে তাদের আয় কমে গেছে। সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। পাবনার ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ হেলাল উদ্দিন বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা ১০-১২ ডিগ্রি কাছে ঘোরাফেরা করছে। গতকাল বুধবার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রিতে নেমেছে। গত মঙ্গলবার তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সোমবার ছিল ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন চলতে পারে। এদিকে চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজারে বয়ে যাচ্ছে কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়া। চারদিন ধরে এ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ৯ ডিগ্রির সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ করে মৌলভীবাজারের পাহাড়ি এলাকার চা শ্রমিক ও হাওর পারের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। গতকাল বুধবার ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরেই শ্রীমঙ্গলসহ মৌলভীবাজারের বিভিন্ন স্থানে চলছে শীতের দাপট। প্রচণ্ড শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীতের পাশাপাশি বেড়েছে কুয়াশার ঘনত্ব। এ কারণে রাতে সড়কগুলোয় ধীরগতিতে চলাচল করছে যানবাহন। এই তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন চা-বাগানের শ্রমিক, হাওড়াঞ্চলের জেলে, কৃষক ও শ্রমজীবীরা। শীত উপেক্ষা করেই খুব সকালে কাজের তাগিদে ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে তাদের। এছাড়াও সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকরাও পড়েছেন শীতের কবলে। আবহাওয়া অনুক‚লে না থাকায় বেশিরভাগ সময় হোটেল বা রিসোর্টের কক্ষেই কাটাচ্ছেন পর্যটকরা। এদিকে জেলার শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। কয়েক দিন ধরে জেলার বিভিন্নস্থানে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। পর্যটন সেবা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শামছুল ইসলাম বলেন, শীতে কাবু পর্যটকরা তেমন বাহিরে যাচ্ছেন না। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, কনকনে শীত উপেক্ষা করে কাজে যেতে হচ্ছে। এ ছাড়া ঠাণ্ডাজনিত রোগতো লেগেই আছে। শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, শ্রীমঙ্গলে গতকাল বুধবার ৯ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। চারদিন ধরে তাপমাত্রা ৮ থেকে ৯ ডিগ্রিতে উঠানামা করছে। তবে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা একটু কম অনুভ‚ত হচ্ছে।