শাহজাহান জমাদ্দার \ সন্ত্রাসীদের সাথে দ্বন্দ্ব, বাবার ব্যবসায়িক কোনো বিরোধ অথবা মেয়েলি বিরোধ আছে কি না—এ তিনটি বিষয়কে সামনে রেখেই খুবি ছাত্র অর্ণব হত্যাকান্ড তদন্ত করছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে তিনজনকে আটক করা হয়। গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে নগরীর তেঁতুলতলা মোড়ে গুলি করে হত্যা করা হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ’র ছাত্র অর্ণব কুমার সরকারকে (২৬)। অর্ণব সোনাডাঙ্গা থানার আবু আহম্মেদ সড়কের বাসিন্দা ঠিকাদার নীতিশ চন্দ্র সরকারের পুত্র। অর্ণবকে হত্যার ঘটনায় গতকাল রাতভর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ। অভিযানে সন্দেহভাজন তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। দিনভর তাদেরকে থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো তথ্য মেলেনি। তবে পুলিশ তাদের নাম—পরিচয় প্রকাশ করছে না। এ ঘটনায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে অর্ণবের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর মরদেহ হস্তান্তর করা হলে নগরীর বানরগাতী এলাকার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর পর আহাজারি শুরু হয় অর্ণবের মা চন্ডী রানী, বাবা নীতিশ কুমার সরকার, চাচা তুষার সরকার ও সুকুমার সরকার, ছোট ভাই অনিক কুমার সরকারসহ আত্মীয়—স্বজনদের। নিহত অর্ণবের বাবা নীতিশ কুমার সরকার কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার বাবা কারও সঙ্গে কোনো দিন দুর্ব্যবহার করেনি। কারও সঙ্গে কথা কাটাকাটিও হয়নি তার। আমিও কোনো দিন কারও ক্ষতি করিনি। ওরা কেন আমার ছেলেকে এভাবে হত্যা করলো। কার কাছে বিচার দেবো আমি? অর্ণবের মা চন্ডী রানী আহাজারি করতে করতে বলেন, তোমরা আমার অর্ণবকে এনে দাও। কোথায় গেলি অর্ণব। তার আহাজারি দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারেননি সেখানে উপস্থিত প্রতিবেশীরা। সূত্রটি জানায়, হত্যার মিশনে ৭ জন সন্ত্রাসী ছিল। তাদের প্রত্যেকের মুখ মাফলার দিয়ে ঢাকা ছিল। তাদের একজনের হাতে শর্টগান ও বাকীদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। শর্টগান হাতে থাকা সন্ত্রাসী তাকে লক্ষ্য করে একটি ও পিস্তল দিয়ে পর পর ৩টি গুলি করে। উপস্থিত অন্যান্য সন্ত্রাসীরা তাকে ধারালো অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে জখম করে। হত্যাকারীরা তার মৃত্যু নিশ্চিত করে মোটরসাইকেলে চড়ে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে হারিয়ে যায়। সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, হত্যার ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে তার পরিবারের সদস্যরা মামলা করতে আসবে বলে জানিয়েছে। কেএমপির উপ—কমিশনার (দক্ষিণ) মোঃ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, পুলিশের কাছে আসা প্রাথমিক তথ্য বলছে এ হত্যা মিশনে প্রথমে তিনটি মোটরসাইকেলযোগে আসে সন্ত্রাসীরা। এরপর আরও কয়েকটি মোটরসাইকেল যোগে মহড়া দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। আমরা ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেগুলো দেখা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু জানান, অর্ণবের মেয়েলি কোনো বিরোধ ও তার বাবার ব্যবসায়িক কোনো বিরোধ আছে কিনা, কোনো সন্ত্রাসীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব আছে কিনা; সে বিষয়গুলো তারা খোঁজখবর নিয়ে দেখছেন। ঘটনাস্থলের আশপাশের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। হত্যার কারণ উদ্ঘাটন ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারের জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাতে নগরীর তেঁতুলতলা মোড়ে মোটরসাইকেলের ওপর বসে চা খাচ্ছিলেন অর্ণব। এ সময় মোটরসাইকেলে করে আসা ১০ থেকে ১২ জনের একদল দুর্বৃত্ত তাকে গুলি করে ও কুপিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে বেসরকারি সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।