এফএনএস: পারিবারিক পরিচয় ছাড়াই সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরের ‘ছোটমণি নিবাসে’ বেড়ে ওঠা তিন অনাথ কন্যার রাজকীয় বিয়েতে উপহার পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গত বৃহস্পতিবার রাতে অফিসার্স ক্লাবে মর্জিনা আক্তার (২৩), মুক্তা আক্তার (২০) ও তানিয়া আক্তারের (২০) বিয়ে সম্পন্ন হয়। এই তিন অনাথ কন্যার বিয়ে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় প্রধানমন্ত্রীকে। বিয়েতে তিন কন্যার জন্য সোনার অলঙ্কার পাঠান প্রধানমন্ত্রী। বিয়েতে চট্টগ্রামের ঐতিহ্য অনুসারে ধরা হয় গেট। আয়োজন করা হয় কয়েকশ’ মানুষের খাবারের। বিয়ের আগেরদিন বুধবার নগরীর রউফাবাদ সমাজসেবা কার্যালয়ের কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয় তিন কন্যার গায়ে হলুদ। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য ছাপানো হয় রঙিন আমন্ত্রণপত্র। জমকালো এ বিয়েতে দাওয়াত পান চট্টগ্রামের সব মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, মেয়র ও সংসদ সদস্য, মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন, পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমানও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহাবুবুল আলম প্রমুখ। বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ গণমান্য ব্যক্তিবর্গ। তিন বরের পক্ষ থেকে এসেছিলেন একশোর মতো বরযাত্রী। জানা গেছে, তিন কন্যাই নিজেরা নিজেদের বর পছন্দ করেছেন। পরে তাদের পছন্দের কথা জানানো হয় শিশু পরিবারের কর্তাদের। এরপর তাদের পছন্দের পাত্রদের খোঁজখবর নিয়ে এবং একাধিকবার পাত্রপক্ষের পরিবারের সাথে কথা বলে বিয়ের দিন ঠিক করেন জেলা প্রশাসক। বিয়েতে প্রত্যেকেরই দেনমোহর হিসেবে ধরা হয়েছে সাত লাখ টাকা করে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান জানান, তিন কন্যা জন্মের পরই পরিবার ছাড়া বেড়ে উঠেছে। আমরা তাদের পড়ালেখা করানোর পাশাপাশি চাকরির ব্যবস্থা করেছি। তাই আমরা তাদের অভিভাবকের দায়িত্ব নিয়ে নিজেদের মেয়ের বিয়ের মতো করেই জাঁকজমকপূর্ণভাবে বিয়ের আয়োজন করেছি। সাধারণ ১০টা বিয়েতে যেসব আনুষ্ঠানিকতা মানা হয় আমরা তার সবগুলোই মানার চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন, এই মেয়েদের পরিবার নেই, বাবা-মা নেই। তাই তারা যেন কখনো এই অভাবটা বোধ না করে সেজন্যই আমাদের এত আয়োজন। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, তিন জনের প্রত্যেককে দুই ভরি স্বর্ণালংকার এবং দুই লাখ টাকা করে ফিক্সড ডিপোজিটের ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়া প্রত্যেক যুগলকে একটি করে ফ্রিজ ও টেলিভিশনসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, চার বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া মুক্তা আক্তারকে আদালতের নির্দেশে আনা হয়েছিল সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত সরকারি শিশু পরিবারে। বর্তমানে চাকরি করছেন আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতালে। বিয়েও হয়েছে একই হাসপাতালের নিরাপত্তা প্রহরী মোহাম্মদ নুর উদ্দিনের সঙ্গে। মর্জিনা আক্তার সমাজসেবা কার্যালয় পরিচালিত ছোটমণি নিবাস ও সরকারি শিশু পরিবারে বেড়ে ওঠেন। সেখানে থেকে সরকারি মহিলা কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ার পাশাপাশি আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। তার বিয়ে হয়েছে ওমর ফারুকের সঙ্গে। তিনিও চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতালে কর্মরত। তানিয়া আক্তারও কাজ করেন মা ও শিশু হাসপাতালে। এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন আগ্রাবাদ মহিলা কলেজ থেকে। তাকে বিয়ে করেন বিআরটিসি এলাকার ফলম্মীর সেলসম্যান হেলাল উদ্দিন।