শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:১৪ অপরাহ্ন

তুলনামূলক কম খরচ আর ভালো চিকিৎসা \ দেশের রোগীরা ছুটছে বিদেশে

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০২২

এফএনএস : আস্থাহীনতার সঙ্কটে দেশের চিকিৎসা খাত। ভুল চিকিৎসায় অহরহ প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। ভুয়া চিকিৎসক দাবিয়ে বেড়াচ্ছে। চিকিৎসার নামে হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো গলাকাটা ব্যবসা করছে। চিকিৎসা নিতে গিয়ে রোগীদের নানামুখী দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অথচ বিদেশে তুলনামূলক কম খরচে ভালো চিকিৎসা নেয়া সম্ভব। ভোগান্তিও নেই। সেজন্যই দেশের সামর্থ্যবানরা চিকিৎসার জন্য বিদেশে ছুটছে। বিগত ২০১০ সাল থেকে চিকিৎসা-পর্যটন বেশি বেড়েছে। করোনায় কিছুটা ভাঁটা পড়লেও চলতি বছরে আবার স্বরূপে ফিরেছে। অথচ এমন পরিস্থিতি পরিবর্তনে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে তেমন উদ্যোগ নেই। স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে উন্নত চিকিৎসার অবকাঠামো থাকলেও তলানিতে সেবার মান। একজন চিকিৎসক দিনে বিপুলসংখ্যক রোগী দেখার কারণে অনেক সময়ই রোগ নির্ণয় করতে পারেন না। অথচ প্রতিবেশী দেশগুলোতে রোগীর চিকিৎসা ও রোগ শনাক্তে উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত করা হচ্ছে। চিকিৎসা ব্যয়ও কম। প্রতিবেশী দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান নামমাত্র দামে চিকিৎসাসেবা দেয়। কিন্তু এদেশে বেসরকারি খাতেও ভালো মানের হাসপাতাল কম। এমনকি দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতেও ভালো মানের হাসপাতাল নেই। সরকারি হাসপাতালে অগণিত মানুষ চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হয়। আর দেশে যে কয়টি বেসরকারি হাসপাতালে মানসম্মত চিকিৎসা পাওয়া যায়, সেগুলোর ব্যয় অনেক বেশি। তাছাড়া কতগুলো চিকিৎসা এখনো এদেশে নেই। ক্যান্সার শনাক্তে বিদেশে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা এদেশে নেই। এজন্য দায়ি দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা। সূত্র জানায়, কম টাকা খরচ করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে সুচিকিৎসা মিলছে। যদিও জটিল রোগ ছাড়া থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভারতে চিকিৎসা নিতে গেলে আনুমানিক ১ লাখ খরচ হয়। তবে ভারতে ট্রেন বা বাসে গেলে তা অর্ধেকেও নেমে আসে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক থাকায় বেড়েছে চিকিৎসা নিতে রোগীদের বিদেশে যাওয়ার চাপ। ভারতের চিকিৎসা ভিসা নিতে প্রতিদিনই থাকছে রোগীদের লম্বা সারি। থাইল্যান্ডে যাওয়ার ভিসা কার্যক্রমে শিথিলতা আসায় দেশটিতেও অনেকে যাচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ আউটবাউন্ড ট্যুর অপারেটরস ফোরামের (বিওটিওএফ) তথ্যানুযায়ী প্রতিবছর গড়ে ৮ লাখ মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যায়। তার বড় অংশই ভারতে যায়। থাইল্যান্ড দ্বিতীয় প্রধান গন্তব্য আর তৃতীয় স্থানে আছে সিঙ্গাপুর। প্রতিবছর বিদেশে চিকিৎসা নিতে খরচ হচ্ছে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার। গত ৭ বছরে ওই খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২১ সালের জুনে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন বলেছে, ভারতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর ৫৪ দশমিক ৩ শতাংশ বাংলাদেশি। তাছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপের তথ্যানুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদেশগামী বাংলাদেশির ৬০ দশমিক ৪১ শতাংশ প্রতিবেশী দেশ ভারতে গেছে। বিদেশে বাংলাদেশি পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি অংশ সাড়ে ২৯ শতাংশ ব্যয় করেন চিকিৎসা বাবদ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের বাইরে ওই ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। একই অর্থবছরে বহির্গামী পর্যটনে মোট ব্যয় ছিল ৩৩ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে তুলনামূলক ভবন নির্মাণে বেশি আগ্রহী হলেও স্বাস্থ্যসেবা খাতে খরচ কম। আর গরিবদের স্বাস্থ্যসেবায় সরকার যতোটুকু অর্থ ব্যয় করে ততোটুকুতেও স্বাস্থ্যসেবার মান খারাপ। স্বাস্থ্য খাতে ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির (মোট জাতীয় উৎপাদন) ২ দশমিক ৯ শতাংশ ব্যয় হয়। ওই হার পাশের দেশগুলোর চেয়ে অনেক কম। জিডিপি অনুপাতে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় নেপালে ৫ দশমিক ২ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, মিয়ানমারে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ, ভারতে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ ও পাকিস্তানে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। ভিয়েতনাম এতদঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবায় সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে। জিডিপির ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। আর বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার অভাবে স্বাস্থ্য খাতের কম বরাদ্দ বাজেটও খরচ হয় না। করোনা মহামারির সময়েই ২০২১-২২ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের ২৯ শতাংশ টাকা মন্ত্রণালয় খরচ করতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে ইমেরিটাস অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল­াহ জানিয়েছেন, দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থায় আস্থাহীনতা রয়ে গেছে। দেশীয় চিকিৎসাসেবার দুর্বলতার কারণেই মানুষ বাইরে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। তাছাড়া চিকিৎসকের তুলনায় রোগী অনেক বেশি। এখন বেসরকারি হাসপাতালেও রোগীর উচ্চচাপ। প্রতিবেশী দেশগুলোর সরকারি হাসপাতালে সেবার মান আমাদের চেয়েও খারাপ। তবে প্রাইভেট হাসপাতালে সেবার মান অনেক উন্নত। দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সেবার মান উন্নয়নে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, চিকিৎসায় বিদেশমুখিতা কমাতে সরকার বেশকিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আগামী বছরের শুরু থেকে নামমাত্র মূল্যে সবার জন্য বার্ষিক হেলথ চেকআপের ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। এটা শুরু হলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হবে। স্বাস্থ্যসেবায় চাপ পড়বে না। তখন বিদেশমুখিতাও কমে আসবে এবং চিকিৎসা ব্যয় কমবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com