সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

তৃতীয়বারের মতো ইরানিদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মার্কিন দূত

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫

এফএনএস বিদেশ : যুক্তরাষ্ট্র গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বন্ধু স্টিভ উইটকফ টানা তৃতীয় সপ্তাহে ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন। পরস্পরের মধ্যে একটি নতুন পরমাণু চুক্তির খেঁাজে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, উইটকফ, যিনি ট্রাম্পের বৈশ্বিক দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, গত শনিবার রোমে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সঙ্গে বৈঠক করেন। উভয় পক্ষ সেখানে অগ্রগতির দাবি করে কারিগরি দলের মধ্যে আলোচনার আহ্বান জানান। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, আজ শনিবার ওমানে অনুষ্ঠেয় কারিগরি আলোচনায় উইটকফ নিজেই উপস্থিত থাকবেন। এখানেই তিনি গত ১২ এপ্রিল আরাগচির সঙ্গে প্রথমবার বৈঠক করেছিলেন। পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরবর্তী আলোচনা আজ শনিবার ওমানে অনুষ্ঠিত হবে এবং এটা হবে কারিগরি দলের প্রথম বৈঠক।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ দূত উইটকফও সেখানে উপস্থিত থাকবেন।’ মার্কিন পক্ষের কারিগরি আলোচনায় নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র দপ্তরের নীতিগত পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান মাইকেল অ্যান্টন। তিনি একজন রক্ষণশীল চিন্তাবিদ, যিনি পারমাণবিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ না হলেও যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনবিরোধী বক্তব্যের জন্য বেশি পরিচিত। কোনো ধরনের কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা ছাড়াই উইটকফকে ট্রাম্প এই দায়িত্বে নিয়োগ দেন। এরপর তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন, যদিও ইসরাইলের হিজবুল্লাহবিরোধী নতুন হামলার কারণে সেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ে। তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতেও প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন এবং গতকাল শুক্রবার রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।

ইউরোপের সঙ্গে বসতে আগ্রহী ইরান
২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প আগের পারমাণবিক চুক্তি ছিঁড়ে ফেলে দেন এবং ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন। তবে আবার ক্ষমতায় ফিরে ট্রাম্প কূটনৈতিক পথে ফিরে আসার অঙ্গীকার করেছেন এবং ইসরাইলকে ইরানের ওপর সামরিক হামলা না চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। আরাগচি বৃহস্পতিবার বলেন, তিনি জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনে যাওয়ার বিষয়ে আগ্রহী — যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র এই দেশগুলো ২০১৫ সালের চুক্তিতে অংশ নিয়েছিল এবং ট্রাম্পের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত থামাতে ব্যর্থ হয়েছিল। এক্স (সাবেক টুইটার)—এ দেওয়া এক পোস্টে আরাগচি বলেন, ‘আমি শুধু পরমাণু ইস্যু নয়, পারস্পরিক স্বার্থ ও উদ্বেগের প্রতিটি বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত।’ ইউরোপীয় দেশগুলোর ইরানবিরোধী কঠোর অবস্থান এবং ইসরাইলের চাপের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির ‘বিশেষ স্বার্থগোষ্ঠীর প্রভাব’ থেকে বেরিয়ে এসে নতুন পথ গঠনের সুযোগ রয়েছে। এর আগে বুধবার তিনি চীনে আলোচনায় অংশ নেন এবং গত সপ্তাহে রাশিয়া সফর করেন। ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিস্টোফ লেমোইন এএফপিকে বলেন, ইরানি মন্ত্রীর এই ঘোষণার বাস্তব প্রতিফলন দেখা গেলে প্যারিস তা পর্যবেক্ষণ করবে। তিনি যোগ করেন, ফ্রান্স “পরমাণু বিষয়ে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী’। জার্মানি ও ব্রিটেন তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।

‘স্ন্যাপব্যাক’ আশঙ্কা
যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর ইরান এক বছর পর্যন্ত চুক্তির শর্ত মেনে চললেও পরে তা লঙ্ঘন করে, এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়িয়ে ৬০ শতাংশে নিয়ে যায়— যা চুক্তিতে নির্ধারিত ৩.৬৭ শতাংশের অনেক বেশি, তবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের নিচে।
গত ডিসেম্বরে ইউরোপের তিন দেশ ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে গেলে ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়া চালুর হুমকি দেয়। চুক্তির আওতায় এই প্রক্রিয়া সক্রিয় হলে ইরানের ওপর আবার জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিরে আসবে। তবে এই প্রক্রিয়া চালুর সুযোগ অক্টোবরেই শেষ হয়ে যাবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইউরোপীয় দেশগুলোকে এই বিকল্পটি ব্যবহারের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে ইরান এর আগেই সতর্ক করে বলেছে, ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়া সক্রিয় হলে তারা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে সরে যেতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com