এফএনএস: জ¦ালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক-পৃথক বিবৃতি ও অনুষ্ঠানে নেতারা সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্যই জ¦ালানির মূল্য বাড়িয়েছে। জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ক্ষমতা ধরে রাখার স্বার্থে যেনতেন প্রকারে আইএমএফের শর্ত পূরণে জনগণকে বলি দিচ্ছে সরকার। দুর্নীতি ও অপচয় বন্ধ করেও ঘাটতি সমন্বয়ের শর্ত পূরণ করা যেত। সরকার সে পদক্ষেপ নেয়নি। সরকার সীমাহীন দুর্নীতি ও অবাধ লুণ্ঠনের পথ খোলা রেখে দেশের জনগণের বেঁচে থাকার অধিকারকেই তছনছ ও পদদলিত করে দিয়েছে। জ¦ালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নির্দয় ও নজিরবিহীন উলেখ করেছেন জিএম কাদের। গতকাল শনিবার বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ৫১ শতাংশেরও বেশি পর্যন্ত জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নির্দয় ও নজিরবিহীন। জ¦ালানি তেলের এমন মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবনে মহাবিপর্যয় সৃষ্টি হবে। প্রমাণ হলো দেশের মানুষের প্রতি সরকারের কোনও দরদ নেই। জ¦ালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বাসদ (মার্ক্সবাদী)। কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে দলটির নেতারা বলেন, গতকাল (গতকাল শনিবার) গভীর রাতে বৈশ্বিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির মিথ্যা অজুহাতে সরকার জ¦ালানি তেলের দাম প্রায় অর্ধশতাংশ বৃদ্ধি করেছে, যা পূর্বের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। বিবৃতিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয়ভাবে বিইআরসিকে এড়িয়ে চোরাগোপ্তা কায়দায় জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। আইএমএফকে খুশি করতে জ¦ালানির মূল্য বৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্ত দেশবাসী মেনে নেবে না। জনগণের কাছে জবাবদিহি না থাকায় চরম স্বেচ্ছাচারীভাবে জ¦ালানির মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি উলেখ করেন, আইএমএফের ঋণ পেতে তাদেরকে খুশি করতে গিয়ে জনগণের ওপর জ¦ালানি তেলের আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধির এই হঠকারী সিদ্ধান্ত দেশবাসী কোনভাবেই মেনে নেবে না। সব ধরণের জ¦ালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে মানুষ বিপর্যস্ত, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলছে। আগের দিন জ¦ালানি তেলের মূল্য সহনীয় মাত্রায় বাড়ানোর কথা বলে রাতের বেলায় পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন ও অকটেনের মূল্য প্রায় ৪৫ ভাগ বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক এবং জনগণের প্রতি সংবেদনহীনতার চরম বহিঃপ্রকাশ বলে অভিমত প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো। বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বিবৃতিতে বলেছেন, বিশ্ববাজারে যখন তেলের দাম নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে তখন তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি কৃষি, শিল্প, পরিবহনসহ সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়িয়ে দেবে আর সাধারণ নাগরিকের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে। বিবৃতিতে এলডিপি (একাংশ) সভাপতি আবদুল করিম আব্বাসী ও মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করে আওয়ামী লীগ সরকার প্রমাণ করেছে, তারা আর এক মুহূর্তও ক্ষমতায় থাকার অযোগ্য। আবদুল করিম আব্বাসী ও মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম আরও বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই বারবার সাধারণ মানুষের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। নিপীড়নের সর্বশেষ প্রক্রিয়া হচ্ছে গত শুক্রবার রাতে হঠাৎ করেই জ¦ালানি তেলের দাম বৃদ্ধি। বিশ্ববাজারে যখন জ¦ালানির মূল্য কমছে, তখন সরকার কাকে খুশি করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে? নিঃসন্দেহে এই সিদ্ধান্ত দেশের মানুষের জীবন যাপনকে কঠিন থেকে কঠিনতরো করে তুলবে। জ¦ালানি তেল ও সারের বর্ধিতমূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে জাসদের সহযোগী সংগঠন জাতীয় কৃষক জোট গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে জাসদ চত্ত¡রে মানববন্ধন ও সমাবেশের কর্মসূচি পালন করেছে। গতকাল শনিবার প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি। দলটির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মনজু জানান, এদিন তারা জ¦ালানি তেলের দামবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। তারা অবিলম্বে সরকারকে এই অবস্থান থেকে সরে আসার আহবান জানিয়েছেন। এদিকে, তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সিপিবি। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে এ সমাবেশে দলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন। নেতারা বলেছেন, জনস্বার্থের কথা নূন্যতম বিবেচনা করতে ব্যর্থ এই সরকারের উচিত ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে সিপিবি জেলা-উপজেলায় ঘেরাও, অবরোধ ও প্রয়োজনে হরতালের মতো কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবে।