এফএনএস স্পোর্টস: মাঠের ভেতরে-বাইরে ড্যারেন স্যামির হাসিমুখই সবচেয়ে পরিচিত দৃশ্য। খুব একটা চটতে দেখা যায় না তাকে। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পরাজয়ের ম্যাচে দলের পারফরম্যান্সে ভীষণ ক্ষুব্ধ তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাদা বলের কোচ অকপটেই বললেন, এই ম্যাচে জয় প্রাপ্য ছিল না তাদের। তবে দলের বিশ্বকাপ সম্ভাবনার সমাপ্তি এখনই দেখছেন না সাবেক এই ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শনিবার জিম্বাবুয়ের কাছে ৩৫ রানে হেরে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গ্রæপ ‘এ’ থেকে অবশ্য সুপার সিক্স নিশ্চিত করেছে এই দুই দলই। তবে সুপার সিক্সে দুটি মহামূল্য পয়েন্ট বেশি নিয়ে যেতে পারছে জিম্বাবুয়ে। গ্রæপ থেকে যে দলগুলি সুপার সিক্সে উঠছে, তাদের বিপক্ষে ম্যাচ থেকে পাওয়া পয়েন্ট যোগ হবে সুপার সিক্সে। ‘এ’ গ্রæপ থেকে সুপার সিক্স নিশ্চিত করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জিতেছে জিম্বাবুয়ে। সুপার সিক্সে তাই তাদের সঙ্গী পূর্ণ ৪ পয়েন্ট। জিম্বাবুয়ের কাছে শনিবার হারারেতে হেরে যাওয়ার পর স্যামি কাঠগড়ায় তুললেন দলের ফিল্ডিংকে। ১ ও ৭ রানে জীবন পান সিকান্দার রাজা। বেঁচে গিয়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা অলরাউন্ডার খেলেন ৫৮ বলে ৬৮ রানের ইনিংস। সব মিলিয়ে এ দিন চারটি ক্যাচ হাতছাড়া করেন ক্যারিবিয়ানরা। এর ৩টিতেই বোলার ছিলেন আলজারি জেসেফ। ম্যাচ শেষে ক্যারিবিয়ান কোচ আঙুল তুললেন ফিল্ডিংয়ের দিকেই। “ভীষণ হতাশ (ম্যাচ হেরে)। টসের সময় আমাদের চাওয়া পূরণ হয়েছিল, আগে বোলিংই করতে চেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু আমরা যদি এরকম ফিল্ডিং করতে থাকিৃ গত কয়েক ম্যাচ ধরেই আমরা এটা নিয়ে কথা বলছিৃপ্রতিপক্ষের সেরা ব্যাটারদের যদি এভাবে জীবন দিতে থাকি, একপর্যায়ে তো ক্রিকেট ঈশ্বর সেটার ফল বুঝিয়ে দেবেনই। আজকে আমাদের সঙ্গে এটাই হয়েছে।” ফিল্ডিংয়ে অতগুলো ভুলের পরও অবশ্য লক্ষ্য নাগালেই ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ব্যাটিং উইকেটে ২৬৯ রান তাড়া করা তো এখন খুব বড় কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। শুরুর দিকে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল তারা। ২০ ওভার শেষে রান ছিল ২ উইকেটে ১০৯। কিন্তু মাঝের ওভারগুলোতে নিয়মিত উইকেট হারিয়ে বড় কোনো জুটি গড়তে পারেনি তারা। শেষ দিকে ১৬ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে তারা গুটিয়ে যায়। ফিল্ডিং ও ব্যাটিং ব্যর্থতার এই দিনে জয় তাদের প্রাপ্য ছিল না বলেই মনে করেন স্যামি। “এই উইকেটে ২৬৯ রানের লক্ষ্য ৃ (তাড়া করা উচিত ছিল)। এই ব্যাপারগুলিই আমরা বদলানোর চেষ্টা করছি। অতীতেও এসব হতে দেখেছি আমরা এবং যে পথ ধরে আমি দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইৃ আজকের পারফর্যান্স ছিল খুবই বাজে ব্যাপারটি হলো দায়িত্ব নেওয়া এবং আজকে আমরা তা পারিনি। জয় তাই আমাদের প্রাপ্য ছিল না আজ।” এই হারেও অবশ্য দুই বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিশ্বকাপ সম্ভাবনায় বড় চোট লেগেছে বলে মনে করেন না স্যামি। তবে পথটা বন্ধুর হয়েছে, তা তিনি মানছেন। “আমি বলব না যে সম্ভাবনা বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তবে কাজটা কঠিন হয়ে উঠেছে। চার পয়েন্ট নিয়ে সুপার সিক্সে উঠতে পারলে অবশ্যই ভালো লাগত। দেশ ছাড়ার সময়ই আমরা জানতাম, এই ম্যাচটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।” হারের কারণ বিশ্লেষণে আবার ফিল্ডিংয়ের কথাই তুলে ধরলেন স্যামি। এই ম্যাচে দলের মধ্যে জয়ের তাড়নাও চোখে পড়েনি তার। “যেভাবে আমরা খেলেছিৃ ছেলেদের বারবার বলে আসছিলাম যে, নিজেদের সেরাটা না খেলেও আমরা জিতে চলেছি। আজকেও আমরা নিজেদের কাজ অনেক কঠিন করে তুলেছি। এই ধরনের ফিল্ডিং যদি আমরা করি এবং এরপর ভালো অবস্থানে যাওয়ার পর ধরে নেই যে সবকিছুই আপনাআপনি হয়ে যাবে, ক্রিকেট ইশ্বর তাহলে সেটির মূল্য চুকানো নিশ্চিত করবেন। ড্রেসিং রুমে ছেলেদেরকে সেটাই বলব।” “জয় আমাদের প্রাপ্য ছিল না এবং আজকে আমরা জয়ের জন্য খেলিনি। এখন আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। শুরুতে সুপার সিক্সে যেতে হবে এবং প্রতিপক্ষদের সামলানো নিয়ে ভাবতে হবে।” ম্যাচের পর একই কথা বললেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক শেই হোপও। দায় দিলেন তিনি ফিল্ডিং ও ব্যাটিংকে। তবে কোচের মতো তিনিও মনে করেন, সম্ভাবনার ইতি নয় এখানেই। “সত্যি বলতে, এখন আমার মাথায় অনেক কিছু খেলা করছে। জানি না, এটা (পরাজয়) ব্যাখ্যা করতে পারব কি নাৃ তবে নিশ্চিতভাবেই আমরা হতাশ ও কষ্ট পাচ্ছি।” “কারণটা খুব সরল ও সাধারণ- ক্যাচ (মিস)। আমরা সুযোগ তৈরি করছি। বোলারদেরকে বলেছি সুযোগ তৈরি করতে এবং তারা তা করছে। কিন্তু আমরা মাঠে তাদের সহায়তা করছি না। এরপর আজকে ব্যাটিংয়েওৃ দিনের শুরুতে যদি বলা হতো ২৬০ রানের লক্ষ্য থাকবে, আমরা খুশিই থাকতাম। যাহোক, টুর্নামেন্ট এখনও শেষ হয়ে যায়নি।” গ্রæপ পর্বের শেষ ম্যাচে সোমবার নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই ম্যাচে জয়ী দল দুটি পয়েন্ট নিয়ে যেতে পারবে সুপার সিক্সে।