জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ প্রতীক পেয়ে প্রচারে নেমেই শুরু হয়েছে প্রভাব বিস্তারের লড়াই। চলছে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও সহিংসতার ঘটনা। দল মনোনীত প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র উভয়ই হেভিওয়াট সেখানেই ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। আবার প্রচার-প্রচারণা শুরুর দু’দিন না যেতেই ঘটছে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও সহিংসতার ঘটনা। নির্বাচন কমিশন (ইসি) এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন অখ্যা দিয়ে দায় এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল নিয়েছে। ইতিমধ্যে কুষ্টিয়া, বরিশাল, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, পিরোজপুর ও পাবনাসহ বেশকিছু আসনে মাঠ দখলের লড়াইকে কেন্দ্র করে প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, নির্বাচনের সহিংসতা, সংঘাত বন্ধে প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের আচরণ বিধি প্রতিপালনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রচারণা চালাতে নিদের্শনা দিয়েছে কমিশন। এছাড়া ভোট পর্যবেক্ষণে ৩০৫ সদস্যের মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে প্রচারণা। এখনিই লাগাম না টানলে নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, নির্বাচনের উৎসব শুরু হয়েছে। ভোটগ্রহণ হবে শান্তিপূর্ণ। তাই তিনশ সংসদীয় আসনের বিপরীতে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা; এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না। বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্র্মীদের কোনো প্রার্থীর পক্ষে পাওয়া গেলে হাত ও পা ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কুমিল¬া-৬ (আদর্শ সদর) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) কুমিল¬া নগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পিটিআই স্কুলমাঠে এক নির্বাচনী সভায় তিনি ওই নির্দেশ দেন বলে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘যদি কোনো বিএনপি এবং জামায়াতের কর্মীকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে পাওয়া যায়, তার হাত, ঠ্যাং ভেঙে দিবেন আপনারা। আমি আ ক ম বাহাউদ্দিন আপনাদের সাথে আছি। আজ ভয়ের কোনো কারণ নেই। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল¬া জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর (আ ক ম বাহাউদ্দিন) কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে অনুসন্ধান কমিটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং বর্তমান মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালকে অভিযোগ দিয়ে নৌকার প্রতিপক্ষ ও বিদ্রোহী স্বতন্ত্র একেএমএ আউয়ালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আমি বাংলাদেশ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত পিরোজপুর-১ আসনের নৌকার প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভাইপো তানভীর মুজিব অভির নেতৃত্বে প্রায় ৩০০ জন অস্ত্রধারী কদমতলা বাজারে আমার নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সিকদার মল্লিক ইউনিয়নে গিয়ে একইভাবে সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটায়। এক পর্যায়ে আলামকাঠি নামক স্থানে আমার নির্বাচনী কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়। আমার এক সমর্থকের মোটর সাইকেল ভেঙ্গে পুড়িয়ে ফেলে। উক্ত পরিস্থিতিতে অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিন। পাবন-১ আসনে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাড শামসুল হক টুকু এবং আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও দ্বাদশ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ দুই হেভিওয়েট প্রার্থী মধ্যে চলছে মাঠ দখলের লড়াই। প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ এনে নৌকার মনোনীত ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর বিরুদ্ধে নালিশ জানাচ্ছেন স্বতন্ত্র। ফলে নির্বাচনের প্রচারণার শুরুতেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়ার একাংশ) আসনের ভোটের রাজনীতি। নানা বাধা, হুমকি, কর্মীদের মারধর, গাড়ি ভাঙচুরসহ নানা অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে সাঁথিয়া বাজারে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন নৌকার সমর্থকরা। পরে রাতে বাধা, হুমকি, কর্মীদের মারধর, গাড়ি ভাঙচুর নিয়ে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। নৌকার এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ স্থানীয় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং করে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন তিনি। ফরিদপুর-৩ আসনে প্রতিপক্ষের হামলা ও হুমকিতে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে নির্বাচনী পরিবেশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত একাধিক স্থানে মোটরসাইকেলে দলবদ্ধ মহড়া দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। বেশ কয়েকটি স্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ. কে. আজাদের ঈগল প্রতীকের পোস্টারও ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পের সামনে গুলি বর্ষণসহ দু’টি ক্যাম্প ভাঙচুর ও একটি ক্যাম্পে তালা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে মামুদপুরে হামলা চালিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুই কর্মীকে আহত করা হয়েছে। শহরের আলীপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণা চালানোর সময় ভয়ভীতিও দেখানো হয়। বিভিন্নস্থানে কোনো নির্বাচনী মিছিল বের হলে তার আশেপাশে মোটরসাইকেলে মহড়া দিচ্ছে হেলমেট পরিহিতরা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হকের লোকেরা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে একটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। ঝিনাইদহ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসের শাহরিয়া জাহেদী মহুলের অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতিনিধি কামরুল জোয়ারদার অভিযোগ করে বলেন, এ হামলা নৌকার সমর্থকরা চালিয়েছে। তিনি বলেন, রাত ৯টার দিকে হঠাৎ নৌকার সমর্থকরা আকস্মিকভাবে হামলা চালিয়ে তাদেরকে পিটিয়ে আহত করেন। এ সময় অফিসে রাখা চেয়ার-টেবিলও ভাঙচুর করে তারা। হামলায় শাখারীদহ গ্রামের মুকুল, শিখা ও কারুল নামে তিনজন আহত হন। আহতদের ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে, ফেনী-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীর নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় তিন জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফেনী পৌরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে হামলার এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন কামরুল হাসান রাব্বি, কাওসার আহমেদ অপু ও নুর আলম। তাদেরকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।