এফএনএস স্পোর্টস: বলা হচ্ছে ‘রিসেট’, ইংল্যান্ড টেস্ট দলের নতুন শুরু। জিমি অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রডের বাদ পড়া, নতুন উদ্বোধনী জুটি, ব্যাটিং অর্ডার পুনর্গঠন, সবকিছুতেই সেই বার্তা। কিন্তু ব্যাটিংয়ের শুরুতে ইংল্যান্ড যেন পুরনো রূপেই। ক্যারিবিয়ান পেসারদের সামনে টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় আবারও ব্যাটিং বিপর্যয়। ত্রাতা হয়ে উঠলেন তখন পুরনো একজনই। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞার লড়িয়ে সেঞ্চুরিতে দলকে রক্ষা করলেন জনি বেয়ারস্টো। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটির প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অ্যান্টিগায় ইংল্যান্ডের রান ৬ উইকেটে ২৮৬। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ইংলিশরা ৪৮ রানে হারায় ৪ উইকেট। তখনই ক্রিজে গিয়ে বেয়ারস্টো দিন শেষে মাঠ ছাড়েন অপরাজিত থেকে। তার নামের পাশে তখন জ¦লজ¦ল করছে ১০৯ রান। তার টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম ও টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি এটি। এটির আগের টেস্টেই সেঞ্চুরি করেন অ্যাশেজের সিডনি টেস্টে, যে সেঞ্চুরিতে কেটেছিল তার তিন বছরের খরা। এই সিরিজ দিয়েই ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ডের টেস্ট লড়াইয়ের আনুষ্ঠানিক নামকরণ হয়েছে রিচার্ডস-বোথাম ট্রফি। দুই দেশের কিংবদন্তি ও দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ভিভিয়ান রিচার্ডস ও ইয়ান বোথামের প্রতি সম্মান জানিয়ে। খেলা হচ্ছে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামেই। টস জিতে ইংল্যান্ড অধিনায়ক জো রুট বললেন, উইকেট বেশ শুষ্ক, সময়ের সঙ্গে ভাঙতে পারে। প্রথম সেশনের চ্যালেঞ্জ উতরাতে পারলে বড় রান করার আশাও তার। কিন্তু প্রথম সেশনেই ভেঙে পড়লেন তিনি আর তার সতীর্থরা। উইকেটে ঘাস তেমন না থাকলেও ক্যারিবিয়ান পেসাররা দারুণ মুভমেন্ট আদায় করেন। সঙ্গে ভালো লাইন-লেংথ আর বাউন্স তো ছিলই। অভিষিক্ত অ্যালেক্স লিসকে দিয়ে শুরু হয় ইংল্যান্ডের উইকেট পতনের মিছিল। ১২৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ১৭ সেঞ্চুরিতে ৭ হাজারের বেশি রান করার পর টেস্ট ক্যাপ পাওয়া লিস টিকতে পারেননি তিন ওভারও। প্রথম ওভারে কিমার রোচের বলে বাউন্ডারিতে শুরু করেন তিনি, তৃতীয় ওভারে রোচের ভেতরে ঢোকা বলেই হয়ে যান এলবিডব্লিউ। দ্বিতীয় ওভারে জেডেন সিলসকে দুটি বাউন্ডারি মারলেও তার পরের ওভারেই আউট হন জ্যাক ক্রলি। উইকেটের পেছনে অসাধারণ ক্যাচ নেন জশুয়া দা সিলভা। পালাবদলের মেলায় তিন নস্বরে উঠে আসা রুট দ্রুত তিনটি বাউন্ডারিতে আভাস দেন পাল্টা আক্রমনের। কিন্তু দুর্দান্ত ডেলিভারিতে তাকে ১৩ রানেই থামান রোচ। স্টাম্পের দূর থেকে করা ডেলিভারি ভেতরে না খেলে ছেড়ে দেন রুট, অনেকটা ভেতরে ঢুকে বল ছোবল দেয় স্টাম্পে। পরিবর্ত বোলার জেসন হোল্ডার আক্রমণে এসে আরও চেপে ধরেন ইংলিশদের। আঁটসাঁট লাইন-লেংথ আর সুইংয়ে হাঁসফাঁস করতে থাকেন ব্যাটসম্যানরা। পুরস্কারও পান হোল্ডার। তার আউটসুইঙ্গারে স্লিপে ক্যাচ দেন লরেন্স। প্রথম ৫ ওভারে কোনো রানই দেননি হোল্ডার। তার প্রথম স্পেল ছিল ৫-৫-০-১! পঞ্চাশের আগে চার উইকেট হারানো দলের হয়ে শুরু হয়ে বেয়ারস্টোর লড়াই। সঙ্গী পান তিনি বেন স্টোকসকে। নিজের সহজাত ব্যাটিং ভুলে উইকেটে পড়ে থাকার চেষ্টা করেন স্টোকস। ইনিংসের প্রথম অর্ধশত রানের জুটি পায় ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে এই জুটি ভাঙেন সিলস। তরুণ এই পেসারের সঙ্গে বেশ লড়াই জমে উঠেছিল স্টোকসের। তাতে শেষ হাসি সিলসেরই। টানা দুটি বাউন্ডারির পর আরেকটি বল স্টাম্পে টেনে আনেন স্টোকস। ১৫১ মিনিট ক্রিজে থেকে ৯৫ বলে করেন তিনি ৩৬। এরপরই ইংল্যান্ড পায় দিনের সবচেয়ে বড় জুটি। জস বাটলার বাদ পড়ায় কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ফেরা বেন ফোকস খেলেন দায়িত্বশীল ইনিংস। বেয়ারস্টো দারুণ ব্যাটিংয়ে এগিয়ে নেন দলকে। দুজনের জুটিতে ৯৯ রান আসে ১৭৯ বলে। সময়ের সঙ্গে ক্যারিবিয়ানদের বোলিংয়ের ধার কমে আসে একটু। ফিল্ডিংয়েও দেখা যায় একটু গা ছাড়া ভাব। ফায়দা ভালোভাবেই নেন বেয়ারস্টো ও ফোকস। প্রায় ৭ বছর পর দেশের মাঠে টেস্ট খেলতে নামা বাঁহাতি স্পিনার ভিরাসামি পেরমল সুবিধা করতে পারেননি খুব একটা। হোল্ডার অবশ্য দিনজুড়েই ছিলেন দারুণ। এই জুটি ভাঙেন তিনিই। ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে ফোকস এলবডিব্লউ হন ৪২ রানে। ইংল্যান্ড লড়াই চালিয়ে যায় এরপরও। বেয়ারস্টো আর ক্রিস ওকস দিনের শেষ এক ঘণ্টারও বেশি সময় উইকেট হারাতে দেননি আর। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আসে ৫৪ রান। বেয়ারস্টো সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১৯০ বলে। কাজ শেষ করেননি এরপরও। মাঠ ছাড়েন অপরাজিত থেকে। দ্বিতীয় নতুন বলেও জুটি ভাঙতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সংক্ষিপ্ত স্কোর: ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৮৬ ওভারে ২৬৮/৬ (লিস ৪, ক্রলি ৮, রুট ১৩, লরেন্স ২০, স্টোকস ৩৬, বেয়ারস্টো ১০৯*, ফোকস ৪২, ওকস ২৪*; রোচ ১৬-২-৭১-২, সিলস ১৯-৫-৬৪-২, হোল্ডার ১৬-৯-১৫-২, জোসেফ ১৯-২-৬৯-০, পেরমল ১৩-৪-৩৫-০, ব্র্যাথওয়েট ৩-১-৭-০)।