জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ হয়েছে পলী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে। শীর্ষ ব্যক্তির সেচ্ছাচারিতা ও নিয়মবর্হিভূত কর্মকান্ডে স্ব-শাসিত এই সংস্থাটি এখন দ্বিধা-বিভক্ত। এ দ্ব›দ্ব থেকেই প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বিরুদ্ধে স্ব-প্রণোদিত হয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারিরাই। এ দলাদলির কারণে পিডিবিএফের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম কার্যত স্থবির। সংকট সমাধান না হলে অচিরেই আর্থিক সংকটের মুখে পড়তে পারে প্রতিষ্ঠানটি, এমন আশঙ্কা করেছেন এখানে কর্মরতরা। কারণ শ্বেতপত্রে তিন ডজন দুর্নীতি-অনিয়ম তুলে ধরা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূতের। প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশের দরিদ্র ও অসুবিধাগ্রস্ত ব্যক্তিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে পিডিবিএফ প্রতিষ্ঠা করা হয়। লক্ষ্য দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করে ঋণ দেয়া ও প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় সেবা প্রদান করা। হাটিহাটি পা করে এগিয়ে আসা প্রতিষ্ঠানটি আজ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী। তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানটি অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, দুর্নীতি ও নানা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে স্থবির। এই অবস্থার জন্য দায়ী করা হচ্ছে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ মউদুদউর রশীদ সফদারকে। তার অপেশাদারী মনোভাবাপন্ন ও মাইক্রোফাইন্যান্স সম্পর্কে অনভিজ্ঞতা সংস্থাটি ধীরে ধীরে রুগ্ন অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সাড়ে চার হাজার কর্মী ও প্রায় সাড়ে ১১ লাখ সুফলভোগী পরিবার অনিশ্চিতমুখে আজ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান এমডির বিরুদ্ধে ৩৭ ধরণের অনিয়মের অভিযোগ আছে। এ অভিযোগের মধ্যে ঋণ কার্যক্রমের বেহাল দশা তৈরির পথ উন্মুক্ত করা, অর্থের বিনিময়ে পলী সড়ক বাতি প্রকল্পে তৃতীয় সর্বনি¤œ দরপত্র দাতাকে কার্যাদেশ প্রদান, প্রনোদনার ঋণ নিয়ে নয় ছয় করা, চাকুরিচ্যুত এক কর্মকর্তার মাধ্যমে কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের, বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছাড়া ঋণ সিডিউল, প্রকল্প সমাপ্তির পরেও পিডিবিএফ থেকে ২৫ লক্ষ টাকার সোলার সরবরাহের অভিযোগ, মুদ্রণ সামগ্রী ও মালামাল সরবরাহকারীর মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, অর্থের বিনিময়ে সিনিয়রকে বাদ দিয়ে জুনিয়রকে উচ্চ পদে পদায়ন, ক্ষুদ্র ঋন দানকারী প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠার নামে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে কোন প্রক্রিয়া ছাড়াই ফার্নিচার ক্রয়, কমিশন গ্রহণের মাধ্যমে প্রনোদনার অর্থ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কৃষি ব্যাংকে বিনিয়োগ এবং দ্বৈত নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটি দলাদলি ও কোন্দলে জর্জরিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পিডিবিএফের সিংহভাগ আয় ঋণ বিনিয়োগে প্রাপ্ত সার্ভিস চার্জ থেকে। তবে, -বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও পেশাদারীত্বের অভাবে ঋণ বিনিয়োগ ও সদস্য সংখা হ্রাস, পক্ষান্তরে খেলাপি ঋণের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বয়ংস্বপূর্ণতা ৫৫ শতাংশ নেমে এসেছে বলে অভিয়োগ রয়েছে। যে প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ দুই দশক ধরে নিজের আয় দিয়ে সামগ্রিক ব্যয় নির্বাহ করে এতদিন পরিচালিত হয়ে আসছে, সে প্রতিষ্ঠানটি ক্রমেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হচ্ছে। উলেখ্য নিজস্ব উপার্জনে চলছে বর্তমানে পিডিবিএফ। এদিকে, আলোকিত পলী সড়ক বাতি প্রকল্পে প্রায় ২৪ কোটি টাকার উন্মুক্ত টেন্ডার পদ্ধতিতে বর্ণিত ব্র্যান্ড ও স্পেসিপিকেশন অনুযায়ী প্রথম ও দ্বিতীয় সর্বনি¤œ দরপত্র দাতা প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে আর্থিক সুবিধা নিয়ে অনৈতিক উপায়ে তৃতীয় সর্বনি¤œ দরদাতা প্রতিষ্ঠান ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিংকে কার্যদেশ প্রদান। কোভিড-১৯ এর ক্ষতিপূরণ পুষিয়ে নেয়ার জন্য সদস্যদের জীবন জীবিকার মান উন্নয়নে প্রাপ্ত প্রনোদনা ঋণ কর্মসুচী সঠিক ও সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়নে ব্যর্থতার কারণে কর্মসূচিটি যথাযথ বাস্তবায়িত না হওয়া, মুল কার্যক্রমের সার্ভিস চার্জের সঙ্গে প্রনোদনা ঋণের সার্ভিস চার্জের বিস্তর বৈষম্য থাকায় উক্ত ঋণ বেহাতে ও বিশেষ ব্যক্তির পকেটস্থ হওয়া; উক্ত ঋণের রেয়াতী মেয়াদ থাকার ফলে ঋণ তহবিল তছরুপ করা। প্রনোদনা ঋণের সার্ভিস চার্জ তুলনামূলকভাবে অনেক কম হওয়ায় সমিতি পর্যায়ে সদস্যদের মধ্যে ব্যপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এর ফলে পিডিবিএফ এর ক্ষুদ্র ও উদ্যোক্তা পর্যায়ের ঋণ আদায় ও বিনিয়োগে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। এতে দরিদ্র মানুষের কল্যাণে সরকার প্রদত্ত প্রনোদনার অর্থ এবং পিডিবিএফ এর মূল ঋন কার্যক্রম দুটোই ভেস্তে যাবার উপক্রম হয়েছে। বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবৈধ উপায়ে ঋণ রি-সিডিউলিং করেছেন বলেও অভিয়োগ রয়েছে। একই পরিমাণ সার্ভিস চার্জে ঋণ পুনঃতফসিলি করণের ফলে প্রতিষ্ঠানের যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার দায়ভার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের উপর বর্তায় বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। ২০১২ সালের এসএডি থাকা সত্তে¡ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনৈতিক আর্থিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে ২০১৬ সালের এসএডি হিসাবে পদোন্নতি প্রাপ্তদের উচ্চপদে অর্থাৎ ডিডি পদে পদায়ন করেন। তৎমধ্যে কুষ্টিয়া অঞ্চলের রুহুল আলম এবং খুলনা অঞ্চলের অসীম কুমার রায় অন্যতম। এ ছাড়াও ময়মনসিংহে শান্তুনু কুমার, মাগুড়ার গুরুপদ এবং ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় ইউডিবিও হিসেবে তার কর্মকালীন সময়ে তিন কোটি ১০ লাখ টাকা খেলাপী বৃদ্ধিকারী ফৌজিয়া বেগমকে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে জামালপুর এর ডিডি পদে পদায়ন করেন। বিআরটিসির অসাধু কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে অনৈতিক যোগসাজসে ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রতিষ্ঠানের গাড়ি সমূহ প্রায় তিনগুণ বেশি মূল্যে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষন করেছেন বলেও গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে বলে প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা জানিয়েছেন। তারা বলছেনম, প্রতিষ্ঠানের অর্থ সাশ্রয় না করে কিভাবে অত্যাধিক ব্যয় বৃদ্ধি করা যায় সেক্ষেত্রে তিনি (এমডি) অধিকতর তৎপর। জানতে চাইলে পিডিবিএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহম্মদ মউদুদউর রশীদ সফদারকে মোবাইলে ফোনে চেষ্টা করা হয় কিন্তু কোন জবাব পাওয়া যায়নি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে মন্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হয়; তার পরেও তিনি কোন জবাব দেননি। আর পলী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মসিউর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি-ও ফোন রিসিভ করেননি। ফলে দুর্নীতি সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মন্তব্য প্রতিবেদনে সংযোজন করা সম্ভব হয়নি।