এফএনএস : সরকারি দফতরগুলোতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ এবং প্রশাসনকে গতিশীল করতে সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংশোধিত বিধিমালা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তাদের শ্বশুরবাড়ি ধনী থাকার সুযোগ আর থাকবে না। এমনকি বিবাহের সময় বা পরবর্তীতে শ্বশুরবাড়ি থেকে কোন সম্পদ পেলে প্রমাণসহ তা ঘোষণা দিতে হবে। প্রতি ৫ বছর পর পর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের পূর্ণাঙ্গ হিসাব বিবরণী দিতে হবে। নতুন আচরণ বিধিমালার কোন বিধান লঙ্ঘন সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ এর আওতায় অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে এবং এ বিধিমালার আওতায় অসদাচরণের দায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদ্যমান সরকারী কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ৪৩ বছরের পুরনো। এমন পরিস্থিতিতে নতুন আচরণ বিধিমালা করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকাররি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ২০২২ এর খসড়া করেছে। তাতে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। তাছাড়া অনুমোদন ছাড়া কোন কর্মচারী অনলাইন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সম্প্রচারেও অংশ নিতে পারবে না। এমনকি মূল্যবান সামগ্রী, অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন বা হস্তান্তর এবং উপহার গ্রহণের ক্ষেত্রেও খসড়া বিধিমালায় নতুন নিয়মের কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া সরকারি কর্মচারী তার চাকরি সংক্রান্ত কোন দাবির সমর্থনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকার বা কোন সরকারি কর্মচারীর ওপর রাজনৈতিক বা অন্য কোন প্রভাব খাটাতে পারবেন না। সূত্র জানায়, খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী প্রত্যেক সরকারি কর্মচারী নির্ধারিত ছক অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে তার বা তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন বা দখলে থাকা শেয়ার সার্টিফিকেট, সিকিউরিটি, বীমা পলিসি এবং অলঙ্কারাদিসহ নগদে রূপান্তরযোগ্য সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা করবেন। প্রত্যেক কর্মচারী প্রতি ৫ বছর অন্তর ডিসেম্বর মাসে বিগত ৫ বছরের হিসাব বিবরণীতে প্রদর্শিত সম্পত্তির হিসাব বিবরণী বা আয়কর সনদ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে দাখিল করবে। সরকার আদেশের মাধ্যমে ওই বিধির অধীনে সম্পত্তির হিসাব বিবরণী দাখিলের পদ্ধতি এবং যে কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করবে তা নির্ধারণ করতে পারবে। আগের বিধিমালায় আয়কর বিবরণী দাখিলের বিষয়টি ছিল না, একই সঙ্গে অলঙ্কারের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে তার হিসাব দিতে হতো। নতুন বিধিমালায় ওই সীমা তুলে দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া সরকারী কর্মচারি নিজে বা তার পরিবারের কোন সদস্যকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের প্রচলিত কোন আইনে সরকারের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কাজ হিসেবে গণ্য এমন কোনো আন্দোলনে বা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে বা অন্য কোনো উপায়ে সহযোগিতা করতে পারবেন না। কোন সরকারি কর্মচারী ৫ লাখ টাকার বেশি মূল্যের কোন স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কেনাবেচা বা অন্য কোন পন্থায় হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বিভাগীয় প্রধান বা সচিবকে জানাবেন। আর কর্মচারী নিজেই বিভাগীয় প্রধান হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবের মাধ্যমে এবং সরকারের সচিব হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের মাধ্যমে সরকারের কাছে ঘোষণা দেবেন। ওই ঘোষণায় সার্বিক অবস্থা, প্রস্তাবিত বা দাবি করা মূল্য এবং বিক্রি ছাড়া অন্য কোন পদ্ধতিতে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে হস্তান্তরের পদ্ধতির বিবরণ থাকবে। সরকারি কর্মচারী বা তার পরিবারের কোন সদস্য সরকারের অনুমোদন ছাড়া কেনাবেচা, দান, উইল বা অন্যভাবে বহিঃবাংলাদেশ অবস্থিত কোন স্থাবর সম্পত্তি অর্জন বা হস্তান্তর করতে পারবেন না। কোন বিদেশী নাগরিক, বিদেশী সরকার বা বিদেশী সংস্থার সঙ্গে কোন প্রকার ব্যবসায়িক লেনদেন করতে পারবেন না কোন সরকারি কর্মচারী। কোন সরকারি কর্মচারী নির্মাণ ব্যয় বা ক্রয়ের প্রয়োাজনীয় অর্থের উৎস উলেখ করে ওই উদ্দেশ্যে আবেদনের মাধ্যমে সরকারের অনুমোদন গ্রহণ ছাড়া ব্যবসায়িক বা আবাসিক ব্যবহারের অভিপ্রায়ে নিজে বা অন্য কোন মাধ্যমে কোন ভবন, এ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট নির্মাণ করতে বা কিনতে পারবেন না। সূত্র আরো জানায়, খসড়া বিধিমালা অনুসারে কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের অনুমতি ছাড়া নিকটাত্মীয় বা ব্যক্তিগত বন্ধু ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির কাছ থেকে এমন কোন উপহার গ্রহণ বা তার পরিবারের কোন সদস্যকে বা তার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তিকে উপহার নেয়ার অনুমতি দিতে পারবেন না, যে উপহার গ্রহণ সরকারী কর্তব্য পালনে তাকে কোন ধরনের দায়বদ্ধতায় আবদ্ধ করে। তবে যদি মনোকষ্ট দেয়া ছায়া উপহারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান না করা যায়, তাহলে উপহার গ্রহণ করে তা নিষ্পত্তির সিদ্ধান্তের জন্য সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। আর ধর্মীয় বা সামাজিক প্রথা অনুযায়ী বিবাহ অনুষ্ঠান, বার্ষিকী, অন্তোষ্টিক্রিয়া এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপহার নেয়ার নীতি প্রচলিত অনুষ্ঠানে দাফতরিক লেনদেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন নিকটাত্মীয় বা ব্যক্তিগত বন্ধুর কাছ থেকে উপহার গ্রহণ করা যাবে। উপহারের মূল্য মূল বেতনের সমপরিমাণ বা ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে তা সরকারকে অবহিত করতে হবে। বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রতিনিধি কোন উপহার দেয়ার প্রস্তাব দিলে, মনে কষ্ট দেয়া ছায়া উপহার গ্রহণ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর তা করা উচিত। যদি তা সম্ভব না হয় তবে তিনি উপহার গ্রহণ করতে পারবেন এবং নিষ্পত্তির আদেশের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় উপহার গ্রহণের বিষয়টি জানাবেন। সরকারের সচিব বা সমপদমর্যাদা সম্পন্ন কোন কর্মকর্তা বা প্রতিষ্ঠান প্রধান দেশে বা বিদেশে কোন বিদেশী প্রতিষ্ঠান বা বিদেশী সরকারের কর্মকর্তার দেয়া শুভেচ্ছা স্মারক উপহার হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেন। যদি গ্রহণ করা উপহার সরকারি অফিস বা সরকারি বাসভবনে ব্যবহার উপযোগী হয় তাহলে তা ব্যবহার করতে হবে। যদি ব্যবহার সম্ভব না হয় তবে সরকারি কর্মকর্তা তা নিজের ব্যবহারের জন্য রাখতে পারবেন। সরকারি কর্মচারী তার কর্ম অধিক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ী বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোন সংস্থায় ব্যক্তিগত আতিথ্য পরিহার করবেন বলেও খসড়া বিধিমালায় উলেখ করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারী বিভাগীয় প্রধানের অনুমতি বা প্রকৃত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্র ছাড়া প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক বা অনলাইন মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) সম্প্রচারে অংশগ্রহণ করতে বা কোন সংবাদপত্র বা সাময়িকীতে নিজ নামে বা বেনামে বা অন্যজনের নামে কোন নিবন্ধ বা পত্র লিখতে পারবেন না। অন্য বিষয়গুলো আগে থাকলেও অনলাইন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নতুন বিধিমালায় যুক্ত করা হচ্ছে। আর আগের মতোই সরকারি কর্মচারী কোন রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোন অঙ্গ সংগঠনের সদস্য হতে বা অন্য কোনভাবে এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন না বা বাংলাদেশ বিদেশের কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে বা কোন প্রকারেই সহায়তা করতে পারবেন না। সরকারি কর্মচারী নিজে বা তার পরিবারের কোন সদস্যকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের প্রচলিত কোন আইনে সরকারের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কাজ হিসেবে গণ্য এমন কোন আন্দোলনে বা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে বা অন্য কোন উপায়ে সহযোগিতা করতে পারবেন না বলে নতুন বিধিমালায় উলেখ করা হয়েছে। এদিকে খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারী সরকারি দায়িত্ব পালনকালে তার দখলে থাকা দলিল, ওসব দলিলের বিষয়বস্তু বা তথ্য প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে অন্য কোন মন্ত্রণালয় বিভাগ বা সংযুক্ত দফতরে কর্মর কোন সরকারি কর্মচারীর কাছে বা অন্য কোন বেসরকারি ব্যক্তির কাছে বা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারবেন না। তবে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ অনুযায়ী যে সকল তথ্য প্রদানে বা প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তা এই বিধির আওতাভুক্ত হবে না। তাছাড়াও সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারী কোন বিষয়ে তার পক্ষে হস্তক্ষেপ করার জন্য কোন অনুরোধ বা প্রস্তাব নিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ ছাড়া কোন রাজনৈতিক বা বেসরকারি ব্যক্তির দ্বারস্থ হতে পারবেন না। এমনকি সরকারি কর্মচারী তার চাকরি সংক্রান্ত কোনো দাবির সমর্থনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকার বা কোনো সরকারি কর্মচারীর ওপর কোনো রাজনৈতিক বা অন্য কোনো প্রভাব খাটাতে পারবেন না। একইসঙ্গে চাকরি সংক্রান্ত বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যম ছাড়া র্উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে কোন ধরনের আবেদন দাখিল করতে পারবেন না। কোন সরকারি কর্মচারী নারী সহকর্মীর প্রতি কোনো প্রকারের এমন কোনো ভাষা ব্যবহার বা আচরণ করতে পারবেন না যা অনুচিত বা অসঙ্গত এবং দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও নারী সহকর্মীদের মর্যাদাহানি ঘটায়। সরকারি কর্মচারীর অনুচিত বা অসঙ্গত ভাষা প্রয়োগ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হলে সরকারের ব্যাখ্যা চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে। কোন সরকারি কর্মচারী বিদেশী কোন রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন না। যদি কোন সরকারি কর্মচারীর স্ত্রী বা স্বামী বিদেশী নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী বিষয়টি সরকারকে লিখিতভাবে জানাবেন। তাছাড়া কোন সরকারি কর্মচারী এমন কোন ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারবেন না যার মূল্য প্রতিনিয়ত অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে। তবে পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোন কোম্পানির প্রাথমিক শেয়ার বা বন্ড ক্রয়ে বিধিনিষেধ কার্যকর হবে না। নতুন বিধিমালায়ও কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের অনুমোদন ছাড়া অন্য কোনো ব্যবসায় জড়িত হতে বা অন্য কোনো চাকরি বা কাজ গ্রহণ করতে পারবেন না। তবে জাতীয় বেতন স্কেলের ১৭ থেকে ২০ গ্রেডভুক্ত সরকারি কর্মচারীরা অনুমোদন ছাড়া দাপ্তরিক দায়িত্বে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে অবহিত রেখে পরিবারের সদস্যদের শ্রম কাজে লাগিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাতে পারবে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে সম্পত্তির ঘোষণাপত্রের সঙ্গে ব্যবসার বিস্তারিত বিবরণ দাখিল করতে হবে। নতুন আচরণ বিধিমালার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, সরকারি কর্মচারীদের আচরণ বিধিমালাটি বেশ পুরনো। এখন যুগ পরিবর্তন হয়েছে। কাজের পরিমাণ বেড়েছে। কর্মচারীদের মনোভাব এখন গণমুখী। সবকিছু মাথায় রেখে কর্মচারীদের আগের খোলস থেকে বের করে নিয়ে আসার জন্য নতুন আচরণ বিধিমালা করা হচ্ছে। সরকারি কর্মচারীদের সংশ্লিষ্ট সব আইন আধুনিক করার কাজ করা হচ্ছে। ওই কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই নতুন আচরণ বিধিমালার খসড়া করা হয়েছে। দ্রুতই তা চূড়ান্ত করা হবে।