বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
সুন্দরবনে বিএসএফের রেখে যাওয়া ৭৫ জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর দেবহাটা বিএনপির সদস্য নবায়ন উদ্বোধনী আয়োজনে জেলা বিএনপির আহবায়ক রহমাতুল্লাহ পলাশ বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন যুবদলের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত কলারোয়ায যুবদল নেতার ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ মুন্সীগঞ্জে তাপদাহে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ শ্রীউলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত তারুণ্যের সমাবেশ সফল করতে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রস্তুতি সভা ভাড়াশিমলায় ২৫০ প্রান্তিক কৃষানের মধ্যে সবজির বীজ বিতরণ খুলনার সাবেক মহিলা কাউন্সিলর গ্রেফতার বসন্তপুর ফকিরপাড়া জামে মসজিদে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল

দুর্ভিক্ষের গুরুতর ঝুঁকিতে গাজার ২১ লাখ বাসিন্দা : আইপিসি

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫

এফএনএস বিদেশ : যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় বসবাসরত প্রায় ২১ লাখ ফিলিস্তিনি দুর্ভিক্ষের ‘গুরুতর ঝুঁকিতে’ রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা মূল্যায়ন বিষয়ক সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি)। ইসরায়েলের অব্যাহত অবরোধের মুখে ত্রাণ ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা ঢুকতে না পারার কারণে সেখানকার বাসিন্দারা ‘চরম খাদ্য সংকটের’ মুখোমুখি হচ্ছে বলেও এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংস্থাটি। আইপিসি মূলত জাতিসংঘ, দাতা সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের সরকারের সমন্বয়ে পরিচালিত একটি সংস্থা, যাদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহল একটি এলাকায় দুর্ভিক্ষ হতে যাচ্ছে কি না, তার প্রাথমিক মূল্যায়ন করে থাকে। সোমবার প্রকাশিত তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের অক্টোবরে পর থেকেই গাজার খাদ্য পরিস্থিতিতে ‘বড় ধরনের অবনতি’ ঘটেছে। বর্তমানে সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু না হলেও পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে যে, ইসরায়েল ও হামাসের দুই মাসের যুদ্ধবিরতিতে গাজায় ‘সাময়িক স্বস্তি’ ফিরেছে। কিন্তু দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে নতুন করে যে বৈরিতা দেখা যাচ্ছে, সেটি গাজাবাসীকে পুনরায় উদ্বিগ্ন করে তুলছে। বিশেষ করে গত মার্চের শুরু থেকে মানবিক সহায়তা প্রবেশে ইসরায়েলের অব্যাহত বাধা পরিস্থিতিতে আরো জটিল করে তুলেছে। প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়েছে, বর্তমানে গাজার প্রায় দুই লাখ ৪৪ হাজার মানুষ ‘তীব্র’ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হচ্ছে। এ অবস্থায় দুর্ভিক্ষের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি রোধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আইপিসি। এদিকে গত মার্চ মাসের মধ্যভাগ থেকে গাজায় আবারও অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এরপর গত দুই মাস ধরে সেখানে খাদ্য, ওষুধসহ জরুরি ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। ইসরায়েল বলছে, ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হাতে এখনো যেসব নাগরিক জিম্মি রয়েছে, তাদের মুক্ত করার জন্য চাপ সৃষ্টি করার লক্ষ্যেই তারা এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যদিও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল ইসরায়েলের এই অব্যাহত অবরোধের বিরোধিতা করে নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, গাজা সীমান্ত তারা ইতিমধ্যে মানবিক সহায়তা সামগ্রী প্রস্তুত রেখেছে। ইসরায়েল বাধা না দিলেই সেগুলো দ্রুত ঢুকে যেতে পারবে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানাচ্ছে, ত্রাণ সহায়তার ওপর ইসরায়েলের অব্যাহত এই অবরোধ ও গাজাবাসীকে ‘অনাহারে রাখার নীতি’ যুদ্ধাপরাধ বলে গণ্য হতে পারে। আইপিসি প্রকাশিত সবশেষ মূল্যায়নে দেখা যাচ্ছে, গাজার প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন, অর্থাৎ প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ অনাহারের মুখোমুখি হচ্ছে। এ ছাড়া ২০২৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১১ মাসে সেখানকার পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৭১ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা মূল্যায়ন বিষয়ক সংস্থাটি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, খাদ্যাভাবের কারণে গাজার অনেক পরিবার বিভিন্ন ধরনের ‘চরম পদক্ষেপও’ নিচ্ছে। কেউ কেউ ভিক্ষা করা শুরু করেছে, অনেকে ময়লা—আবর্জনা কুড়িয়ে সেগুলো বিক্রি করে খাবার সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে। আইপিসি জানায়, অক্টোবরের তুলনায় পরিস্থিতির এই অবনতি বিশ্বব্যাপী সংঘাতে ঘেরা অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকটের প্রতিফলন। তাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাড়ে ১৯ লাখ মানুষ, অথবা গাজার জনসংখ্যার ৯৩ শতাংশ, তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার উচ্চ স্তরের মধ্য দিয়ে বাস করছে, যার মধ্যে দুই লাখ ৪৪ হাজার জন ‘বিপর্যয়কর’ স্তরের সম্মুখীন হচ্ছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা অবশ্য গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার বিষয়টি মানতে নারাজ। তারা দাবি করছে, যুদ্ধবিরতির সময় সেখানে ‘যথেষ্ট পরিমাণে’ ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ করেছে। এদিকে হামাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, গাজায় খাবার, ওষুধসহ অন্যান্য মানবিক সহায়তা যেন ঢুকতে দেওয়া হয় সে জন্য তারা ইসরায়েলের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পেঁৗছনোর চেষ্টা করছে। সোমবার এডান আলেক্সান্ডার নামে আমেরিকান—ইসরায়েলি নাগরিক এক জিম্মিকে মুক্তিও দিয়েছে গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। তাকে গাজায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক সংস্থা রেড ক্রসের হাতে তুলে দেয় তারা। প্রায় ৫৮০ দিন হামাসের হাতে জিম্মি থাকার পর নিজ পরিবারের কাছে ফিরে যান আলেক্সান্ডার। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি দেয়নি। আলেক্সান্ডারের মুক্তির পরিবর্তে তারা কেবল একটি ‘নিরাপদ করিডর’ দেওয়া কথা ভাবছে বলেও জানানো হয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল মঙ্গলবার মধ্যপ্রাচ্যে সফরে গেছেন। ট্রাম্পের এই সফরকালে কোনো চুক্তিতে না পেঁৗছলে হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক আক্রমণ আরো বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের বর্ধিত আক্রমণ পরিকল্পনার মধ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য গাজার সব এলাকা দখল করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ ছাড়া গাজাবাসীকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করে দক্ষিণে পাঠানোর পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নিয়ে নেবে ইসরায়েল। যদিও জাতিসংঘসহ অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েলের এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে। তারা বলছে, এটি বাস্তবায়ন হলে মানবিক সহায়তা সামগ্রীকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে ইসরায়েল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়। এ ছাড়া ২৫০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করে গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। গত দেড় বছরে জিম্মি ইসরায়েলি নাগরিকদের অনেকেই মুক্তি পেয়েছে। তবে এখনো প্রায় ৫৯ জন জিম্মি হামাসের হাতে জিম্মি রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে ২৪ জনের মতো জীবিত রয়েছে। অন্যদিকে গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর ইসরায়েল যে সামরিক অভিযান শুরু করেছে, তাতে গাজার অন্তত ৫২ হাজার ৮৬২ জন বাসিন্দা নিহত হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com