দৃষ্টিপাত রিপোর্ট ॥ আধুনিক যুগ জামানায় বহুবিধ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ছোয়া পড়লেও মৎস্য ধরার ক্ষেত্রে অতি পুরাতন যুগ জামানার জাল টানা পদ্ধতির উপস্থিতি আর অপরিহার্যতা রয়ে গেছে। সাতক্ষীরার প্রেক্ষিতে ইতিপূর্বে পুকুরে খেপলা জাল দিয়ে পারিবারিক প্রয়োজন মেটানোর মত মাছ ধরা হলেও বৃহত্তর আকারে অধিক পরিমান মাছ তুলতে, বাজারজাতকরণে বেড়জালের ব্যবহারের শেষ নেই। ড্রিপ, হুইল, ঝুপি মৎস্য শিকারীদের উপকরণ। সাতক্ষীরার দেবহাটার পারুলিয়ার ফুলবাড়িয়া জেলেপল্লীতে পরিণত হওয়া এক সম্প্রীতির গ্রাম। একদা বেড় জাল টানায় নিয়োজিতদের বিশেষ বর্ণের, গোত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। জাল দিয়ে মৎস্য আহরণ আর এই পেশায় থেকে জীবন জীবিকা নির্বাহকারীদেরকে দৃশ্যত বলা হলো জেলে সম্প্রদায়। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে আর বাস্তবতার নিরিখে সংস্কার, সংযোজিত, পরিবর্তিত, মার্জিত নাম হিসিবে পরিচিতি পেয়েছে জালপার্টি আবার অনেকে বলেন জাল সহযোগী। একদা পারুলিয়ার জেলিয়া পাড়ায় জাল দিয়ে (বেড় জাল) মাছ ধরার পেশায় নিয়োজিতদের দেখা মিললো কিন্তু ফুলবাড়ীয়া বর্তমান সময়ে বিশেষভাবে আলোচিত। পারুলিয়া ইউনিয়নের ফুলবাড়ীয়া গ্রামের মুসলিম, হিন্দু সকল সম্প্রদায়ের মাঝে জাল টানা পেশা নবজাগরন সৃষ্টি করেছে। ইতিপূর্বে জাল টানা ছিল মৌসুম ভিত্তিক অর্থাৎ পুকুর ও ঘেরে পানি হ্রাস পেলে বা খাট করার পূর্বে জাল টানা হতো। নভেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে জাল টানা ছিল রমরমা বাণিজ্য। বাদবাকি মাস গুলো জাল টানা পদটি ভিন্ন পেশায় মনোনিবেশ করলেও সাম্প্রতিক বছর গুলোতে জেলাময় বিশেষ সাদা প্রজাতির মৎস্য চাষের কল্যাণে সারা বছরই সাদা মাছ সংগ্রহে জাল টানা চলমান। চালাই সাদা মাছ বিক্রি, এক ঘের থেকে অন্য ঘেরে অবমুক্ত সব ক্ষেত্রেই জালের ব্যবহার। ফুল বাড়ীয়া জাল পার্টির সদস্য শফকুল ও রমেশের সাথে কথা বলে জানা যায় চারজনের সমন্বয়ের জাল টানতে খরচ নেওয়া হয় ১২ শত টাকা। এক্ষেত্রে ভ্যানগাড়ী গেলে আরও দুই শত টাক বেশী, জাল ভাড়াতো আছেই। ফুলবাড়ীয়ায় ইতিপূর্বে হাতে গোনা তিন চার জন জাল টানতো বর্তমানে ঘরে ঘরে জাল টানা পার্টি গ্রামটিতে অন্তত ২০/২৫ টি জাল পার্টির অস্তিত্ব। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা হতে ঘের, পুকুর ও সাদা মাছ ব্যবসায়ীরা ফুলবাড়িয়ায় আসছে জাল ঠিক করতে। অতি ব্যস্ত সময় পার করছে জালপার্টিরা। ভোররাতে জাল টানতে যাওয়া, ফিরে জাল শুকানো, তারপর জালের ছেড়া ছোটা, কাটা সুতলি দিয়ে সারাই। বলা যায় ভোররাত হতে যাওয়া ব্যতিত জালের পিছনেই তাদের সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। ফুলবাড়ীয়া বর্তমান সময়ে জাল পার্টি আর মাছ ধরার সহায়কদের উপস্থিতি ঘের ও পুকুর ব্যবসায়ীদের উপকারই হয়। যুব সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যক সদস্য জাল দিয়ে (জালপার্টি) মাছ ধরার পেশায় সম্পৃক্ত হয়েছে। প্রয়োজন এই পেশাকে আরও এগিয়ে নেওয়া।