দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ জুলাই আগস্ট বিপ্লবকে কেন্দ্র করে বিপ্লব পরবর্তী ক্ষেত্র সমূহে দৃশ্যত: জাতীয় ঐক্যের সুবাতাস বইতে থাকে। বাংলাদেশের ছাত্র জনতার অভূতপূর্ব আন্দোলন দেশবাসিকে এক কাতারে আনায়ন করে এবং দৃশ্যত: জাতীয় ঐক্যের সৃষ্টি হয়। পতিত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকার অতি দ্রুততার সাথে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটায়। দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুর্দান্ত সময় গুলোতে যেমন ছাত্র জনতার উপর গুলি বর্ষণ করেনি অনুরুপভাবে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করতে অবস্থান নিয়েছে সেনাবাহিনী। গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি আর পরিবেশের উপস্থিতির এই সময় গুলোতে দেশের রাজনীতিতে কোন কোন সময় বিতর্ক আর জাতীয় ঐকে অনৈক্যের সুর বাজার পরিস্থিতির উন্মেষ ঘটছে। নির্বাচন, সংস্কার, নতুন রাজনৈতিক দল গঠন বিষয়ে দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপির সাথে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে মতবিরোধ সেই সাথে জামায়াতে ইসলামীর সাথে বিএনপির বিভিন্ন ক্ষেত্রে মতপার্থক্য দৃশ্যমান। এর পূর্বে দেশবাসি প্রত্যক্ষ করেছে রাষ্ট্রপতি অপসারণ বা পদত্যাগ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে বিএনপির মতবিরোধ। বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্ঠার সাথে সাক্ষাত করে রাষ্ট্রপতির অপসারণ বা পদত্যাগ রুখে দিয়েছিল। জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের বিষয়েও বিএনপির অবস্থান ভিন্ন। প্রধান উপদেষ্ঠার জাতীয় উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় হতাশ বা ভিন্নমত পোষণ করেছে বিএনপি। দলটি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন চায়, অন্যদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুধুমাত্র একটি সংসদ নির্বাচনের জন্যই জুলাই আগস্ট আন্দোলন হইনি এবং ছাত্রজনতা শহীদ হইনি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মতবিরোধ দৃশ্যত: জুলাই আগস্ট বিপ্লব চেতনার পরিপন্থী। বর্তমান সময়ে জাতীয় ঐক্যে বিভাজন এবং বিভক্তির ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে আর এই বিভক্তি অব্যাহত থাকলে তা ক্রমান্বয়ে আরও অগ্রগামী হবে যা জাতিকে কেবল ক্ষতি করবে তা নয়, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারকে স্বস্তি দেবে এবং দেশের সম্পদ লুষ্ঠণকারী আয়না ঘর সৃষ্টিকারী, গুম হত্যায় জড়িতদের জন্য সুবিধা সৃষ্টি করবে। নির্বাচন এবং নতুন রাজনৈতিক দল গঠন সংক্রান্ত যে আকাক্সিক্ষত বিরোধ রাজনৈতিক দলগুলো সহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিরাজ করছে তা হতে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। জাতির মধ্যে কোন ধরনের বিভাজন নয় ঐক্য এবং সুদৃঢ় ঐক্যে পৌছাতে হবে। বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা, দেশের সীমান্ত অস্থিরতা, সীমান্তে অপতৎপরতা, বাংলাদেশের আপামর জনগণ, ছাত্র—জনতার ঐতিহাসিক গণআন্দোলন, পতিত সরকারের ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগ, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন এর মিথ্যা খবর প্রচার অথচ এদেশের মাটিতে মুসলিম এবং হিন্দু ভাই ভাই হয়ে বুকে বুক মিলিয়ে বসবাস করে। বহুবিধ বিষয় নিয়ে প্রতিবেশী দেশের মিডিয়া অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ এদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এক কাতারে ঐক্যমতে অবস্থান নিতে পারছে না। একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ না করলে নয় বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ বিভাজন হলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সর্বদা এক এবং অভিন্ন তারা জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে সর্বদা এক কাতারে চলার নীতিতে বিশ্বাসী। গত পাঁচ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিস্ট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিা ভারতে পালিয়ে যায় এবং ভারতের আশ্রয়ে তিনি আছেন। বিষয়টি আলেখ্য এ কারণে যে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে এবং তার বিষয়ে ভারত সরকার এবং সরকারের অংশীজনরা একমতে। কেবল এখানেই শেষ নয় সে দেশের ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দল উভয়ই শেখ হাসিনার বিষয়ে এক নীতিতে চলছে। শেখ হাসিনাকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছে। ভারতীয়রা জাতীয় ঐক্যে সুসংহত বাংলাদেশের বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি সরকার এবং বিরোধী দলের একই সুতায় গাঁথা। বাংলাদেশ ভারতের সাথে অমিমাংসিত বিষয়গুলোতে বরাবরই ভারতীয় সরকার এবং সেদেশের বিরেধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ। সেদেশের সংকটকালীন সময়গুলোতে সবদল এক কাতারে অবস্থান করে। এদেশের জনগণ দীর্ঘ পনের/ষোল বছরের অপশাসন থেকে মুক্ত হলেও নিজেদের মধ্যে নেতৃবৃন্দ ঐক্যের পরিবর্তে প্রতিনিয়ত অনৈকের পথেই হাটছে। ড. মুহম্মদ ইউনুসের বিশ্বসুলভ ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশকে অধিকতর উন্নয়নে নেওয়া সম্ভব। নির্মাণ কেন্দ্রীক বিতর্ক বা নতুন দল গঠন, সরকারের সম্পৃক্ততা এমন বিষয়গুলো প্রকাশ্যে বিতর্কে যাওয়াটা পতিত গোষ্ঠীর জন্য স্বস্তির নয় কি? সরকার, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট সহ অংশিজনরা বসে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে লক্ষ্যে পৌছানোর কি সম্ভব নয়? দীর্ঘদিনের অপশাসন কে যদি বিতাড়িত করা যায় তাহলে এককাতারে বসে বিভাজনের পরিবর্তে জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি সম্ভব নয় কেন? ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশ অতি গুরুত্বপূর্ণ বিধায় এই দেশকে নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলমান থাকবে না এমনটি বলা যায় না। আর তাই দেশকে এগিয়ে নিতে, নানামুখি চক্রান্ত রোধে জাতীয় ঐক্যমতই শেষ কথা।