এফএনএস: দুই দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না উত্তরের জেলা দিনাজপুরে। সেই সঙ্গে হিমেল বাতাসের গতিবেগ বৃদ্ধিতে নাজেহাল হয়ে পড়েছেন এই এলাকার মানুষ। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আগামী ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত এই অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে। শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিতে পারে এখানকার আবহাওয়া। তবে ৩ তারিখের পরে হিমালয়ের সামনে জলীয় বাষ্পের বলয় অবস্থান করার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে হিমেল বাতাসের প্রভাব কমবে, বাড়বে তাপমাত্রা। দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, গতকাল বুধবার সকাল ৯টায় দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৯৪ শতাংশ এবং গতিবেগ ঘণ্টায় চার কিলোমিটার। গতকাল বুধবার জেলায় যে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তা সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। এই তাপমাত্রা আরও এক ডিগ্রি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও জানান, উত্তরের হিমালয়ের সামনে জলীয় বাষ্পের বলয় সৃষ্টির একটি সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ৩ জানুয়ারির পর সেই বলয় অবস্থান করলে এই এলাকায় হিমেল বাতাসের প্রভাব থাকবে না। এতে করে তাপমাত্রা বাড়বে এবং শীতের দাপট কমবে। গত কয়েকদিন ধরেই অবস্থান করছিল। ফলে এই জেলায় তাপমাত্রা খুব একটা কমে যায়নি। বর্তমানে সেই জলীয় বাষ্পের বলয় সরে যাওয়ায় হিমেল বাতাসের গতিবেগ বাড়ছে। এজন্য বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে এবং তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে। অবস্থানগত কারণেই যেসব জেলায় শীতের প্রকোপ বেশি তার মধ্যে অন্যতম দিনাজপুর। দুই দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রিরও বেশি কমেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে হিমেল বাতাসেরও গতি। ফলে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। পাশাপাশি কৃষকরাও রয়েছেন বেশ সমস্যার মধ্যে। গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত জেলায় সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। রাস্তাঘাটে লোকজনের উপস্থিতি একেবারেই কম। সারা দিনই রয়েছে কুয়াশার আবহ। ফলে রাস্তাঘাটে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে এবং ধীরগতিতে চলাচল করতে দেখা গেছে। জেলা সদরের মাহুতপাড়া এলাকার দিনমজুর সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই সময়টাতে আমাদের আয়—উপার্জন একেবারেই কমে যায়। ঠিকভাবে কাজ করতে পারি না। কাজ করলে হাতগুলো ঠান্ডাতে কনকন করে। আর যেভাবে বাতাস, এই বাতাসে তো টেকাই মুশকিল। কালিতলা এলাকার অটোরিকশাচালক হেমন্ত রায় বলেন, অটোর হ্যান্ডেল যে ধরে থাকবো এমন অবস্থাও নাই। আঙুল আর হাত কাজ করে না। ঘন ঘন চা খেতে হচ্ছে, আগুন জ্বালিয়ে হাতগুলো গরম করতে হচ্ছে। যত দিন শীত যাবে না, তত দিন আমাদের এই সমস্যা চলবে। আরেক অটোরিকশাচালক ফরিদুল ইসলাম বলেন, দিনের বেশিরভাগ সময় চা খেতে আর হাত গরম করতে চলে যায়। এমনিতেই শীতে রাস্তাঘাটে লোকজন কম। ভাড়া পাওয়া যায় না, তারপর বেশিরভাগ সময় কাজ করা যায় না। তাহলে বোঝেন কত ইনকাম হয়। সদরের গোপালপুর এলাকার কৃষক পরেশ চন্দ্র বলেন, এখন তো বোরো ধানের বীজতলা থেকে চারা গজাচ্ছে। এখন যদি এমন শীত হয় তাহলে বীজতলার চারা লাল হয়ে যাবে, মরে যাওয়া শুরু করবে। আবার আলু ও টমেটোতেও লেটব্লাইট রোগের আক্রমণ দেখা দেবে। এজন্য আমরা এখন থেকেই বালাইনাশক স্প্রে করা শুরু করেছি। মাস্তান বাজার এলাকার কৃষক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এই শীতের মধ্যে কুয়াশা আমাদের বেশি ক্ষতি করে। তাই কুয়াশা হলেই আমাদের স্প্রে করতে হয়। যত দিন শীত থাকবে তত দিন স্প্রে চলবে, বাড়বে উৎপাদন খরচ। আবার কখনও কখনও স্প্রে করেও ফসল টেকানো যায় না। তখন লোকসানে পড়তে হয়।