এফএনএস এক্সক্লুসিভ: দেশে দ্রুত গ্যাসের মজুত কমলেও আবিষ্কার হচ্ছে না নতুন গ্যাসক্ষেত্র। বর্তমানে গ্যাসের যে মজুত আছে তা দিয়ে বড় জোর ১২ বছর সময় চলবে। স্থলভাগে নতুন করে বড় কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হওয়ায় এবং পুরনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মজুত দ্রুত ফুরিয়ে আসায় প্রাকৃতিক গ্যাসের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। আর সাগরে জ্বালানি অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকলেও কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান তাতে সাড়া দেয়নি। যা পরিস্থিতিকে আরো সংকটময় করে তুলছে। পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রাকৃতিক গ্যাস মজুত কমে আসায় বর্তমানে উচ্চ দামে কেনা এলএনজির ওপরই নির্ভরতা বাড়ছে। ফলে শিল্পের উৎপাদন খরচসহ জীবনযাত্রার ব্যয় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ গ্যাস অনুসন্ধানে যে ড্রিলিং শুরু করেছে, সেগুলোর ভালো ফল পাওয়া না গেলে পরিস্থিতি আরো জটিল আকার নেবে। এখন ৮০ ভাগ নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাস আর ২০ ভাগ আমদানিকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু গ্যাস ফুরিয়ে আসার সময় ঘনিয়ে এলে এবং নতুন কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে হয়তো ৮০ ভাগ এলএনজি ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া সামনে চাহিদা আরো বাড়বে। তখন আরো বেশি পরিমাণ এলএনজিও আমদানি করতে হবে। কিন্তু ওই সামর্থ্য বাংলাদেশের আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। সামর্থ্য না থাকলে দেশবাসীকে টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে চলতে হবে। সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ছোট—বড় মিলিয়ে ২০টি গ্যাস ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে। তাছাড়া চারটি ক্ষেত্রে গ্যাসের মজুত পাওয়া গেলেও উত্তোলন করা যাচ্ছে না। আর পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন নানা কারণে বাতিল করা হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ২০ দশমিক ৮০ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস উৎপাদন করা হয়েছে। আর অবশিষ্ট মজুত আছে ৯ দশমিক ১২ টিসিএফ। বছরে সাধারণত এক টিসিএস গ্যাস উত্তোলন করা হয়। তাতে অবশিষ্ট মজুত দিয়ে ১০ থেকে ১২ বছর ধরে উৎপাদন ধরে রাখা সম্ভব হতে পারে। তবে ২০১০ সালের গ্যাসের মজুতের এই সমীক্ষা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি ই সমীক্ষা চালিয়ে ছিলো। একসময় দিনে আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস উৎপাদন করা হলেও এখন তা ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে। এমন অবস্থায় নতুন করে দেশে বড় গ্যাসের মজুত পাওয়া না গেলে আমদানিকৃত এলএনজি দিয়েই চলতে হবে। ফলে সংকট আরো বাড়বে। সূত্র আরো জানায়, দেশের সবচেয়ে বেশি মজুত থাকা গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদনও কমে আসছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের প্রাথমিক মজুত ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৩৮৩ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ)। এর উত্তোলনযোগ্য মজুত ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৭৫৫ বিসিএফ। এর মধ্যে গত জানুয়ারি পর্যন্ত উৎপাদন করা হয়েছে ৫ হাজার ৮২৭ বিসিএফ। আর সিলেটের জালালাবাদেও গ্যাসক্ষেত্রের প্রাথমিক মজুত ছিল ২ হাাজার ৭১৬ বিসিএফ। এর মধ্যে উত্তোলনযোগ্য মজুত ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৪২৯ বিসিএফ। জানুয়ারি পর্যন্ত তোলা হয়েছে ১ হাজার ৬৩২ বিসিএফ। মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের প্রাথমিক মজুত ধরা হয়েছিল ৪৯৪ বিসিএফ। এর মধ্যে উত্তোলনযোগ্য মজুত ধরা হয়েছিল ৪২৮ বিসিএফ। জানুয়ারি পর্যন্ত তোলা হয়েছে ৩৫১ বিসিএফ। ওই হিসাবে মৌলভীবাজারের মজুত শেষের দিকে আর বিবিয়ানা ও জালালাবাদের মজুতও ফুরিয়ে যাওয়ার কথা। তবে বিবিয়ানা ও জালালাবাদে গ্যাসের মজুত বৃদ্ধির আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না দিলেও গত বছর মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে মোট ৪৮১ বিসিএফ গ্যাসের মজুত বেড়েছে বলে শেভরন তথ্য দিয়েছে। এদিকে বিগত ১৫ বছরে স্থলভাগে শুধু ভোলা ছাড়া আর কোনো বড় গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি। আবার সেখানে গ্যাসের বড় মজুত থাকলেও পাইপলাইন না থাকায় ওই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। মজুত বাড়াতে এরই মধ্যে পুরনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে অনুসন্ধান কূপ, উন্নয়ন কূপ ও কূপ সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে পেট্রোবাংলা গ্যাসের উৎপাদন কিছুটা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। আর বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকার গ্যাস এখনো অধরাই রয়ে গেছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের মার্চে সাগরে তেল—গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকে পেট্রোবাংলা। শুরুতে সাতটি বিদেশি তেল—গ্যাস কোম্পানি দরপত্রের নথি কিনলেও শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠানই দরপত্র আর জমা দেয়নি। অন্যদিকে পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী গত জানুয়ারি পর্যন্ত সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড (এসজিএফএল)—এর পাঁচ গ্যাসক্ষেত্র মিলে ৫ টিসিএফের বেশি অবশিষ্ট মজুত আছে। অথচ সেখান থেকে দিনে উৎপাদন করা হচ্ছে মাত্র ১১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। ওসব গ্যাসক্ষেত্রে ১৪টি কূপ আছে। আরেক সরকারি কোম্পানি বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল)—এর পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র মিলে মজুত আছে প্রায় ৩ টিসিএফ। কিন্তু দিনে তারা উৎপাদন করছে ৫৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট।