এফএনএস : গ্রামীণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এজেন্ট ব্যাংক। সেজন্যই আশানুরূপভাবে বাড়ছে আমানত ও ঋণের পরিমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী গত জুন মাস শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ ৭৪ হাজার ৩৭৮ জন। আর গত বছরের জুনে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৩৫৮ জন। আর গত এক বছরে এজেন্ট শাখাগুলোতে গ্রাহক বেড়েছে ৩৮ লাখ ৬৯ হাজার। কিন্তু গত ৩ মাসে ৮ লাখ ৮১ হাজারের বেশি বেড়েছে। আর এজেন্টগুলোর মাধ্যমে ৭৯ লাখ ৩৭ হাজার ৮৬৭ জন নারী ব্যাংকের গ্রাহক হয়েছে। একইসময়ে ৭৯ লাখ ৭১ হাজার ৫০১ জন পুরুষ এজেন্টগুলোর মাধ্যমে ব্যাংকের গ্রাহক হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গ্রামীণ মানুষদের ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্ট, ঋণ, আমানত ও রেমিট্যান্স সংগ্রহ উলেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। মূলত যেসব এলাকায় ব্যাংকের কোনো শাখা নেই বা শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা অধিক ব্যয়বহুল ও লাভজনক নয়, সেসব এলাকায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতেই ওই সেবা চালু করা হয়। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হিসাব খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলন, টাকা স্থানান্তর (দেশের ভেতর), রেমিট্যান্স উত্তোলন, বিভিন্ন মেয়াদি আমানত প্রকল্প চালু, ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল পরিশোধ, বিভিন্ন প্রকার ঋণ উত্তোলন ও পরিশোধ এবং সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি সব প্রকার ভর্তুকি গ্রহণ করা যাচ্ছে। বর্তমানে ৩০টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ১৪ হাজার ২৯৯টি এজেন্টের আওতায় ১৯ হাজার ৭৩৭টি আউটলেটের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছে। যদিও ২০২১ সালের জুন শেষে আউটলেট ছিল ১৭ হাজার ১৪৭টি। ওই হিসাবে এক বছরে ব্যাংকগুলোর এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট বেড়েছে ২ হাজার ৫৯০টি। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ মোট আউটলেটের ৩০ শতাংশ আউটলেট ডাচ বাংলা ব্যাংকের রয়েছে। ব্যাংকটির আউটলেটের সংখ্যা এখন ৫৯২৭টি। আর ব্যাংক এশিয়ার সবচেয়ে বেশি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ওই ব্যাংকটিতে ৫৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৮০টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সূত্র জানায়, এজেন্ট ব্যাংকে ৪৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ পুরুষ গ্রাহকদের হিসাব রয়েছেছে এবং নারী গ্রাহকদের হিসাব রয়েছে ৪৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় খোলা হিসাবগুলোর প্রায় ৮৬ দশমিক ৪১ শতাংশই গ্রামীণ এলাকার গ্রাহকদের আর বাকি ১৪ শতাংশ হিসাব শহর এলাকার। গত ২০২১ সালের জুনে এজেন্ট শাখাগুলোতে আমানত ছিল ২০ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন শেষে আমানত হিসেবে জমা হয়েছে ২৮ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। ওই হিসাবে এক বছরে আমানত বেড়েছে ৭ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা। আমানতের পাশাপাশি ঋণ বিতরণও বেড়েছে। চলতি বছরের জুন শেষে ৭ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকার ঋণ দেয়া হয়েছে। ২০২১ সালের জুন শেষে ৩ হাজার ১৮৬ কোটি টাকার ঋণ দেয়া হয়েছিল। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। তাছাড়া জুন পর্যন্ত সময়ে এজেন্টের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৭ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। সূত্র আরো জানায়, এজেন্টর মাধ্যমে বেসরকারি খাতের ইসলামি ব্যাংকে সবচেয়ে বেশি মানুষ আমানত রেখেছে। আর বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ ঋণ নিয়েছে। ইসলামি ব্যাংকের এজেন্ট শাখাগুলোতে আমানতের পরিমাণ ১০ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। যা মোট আমানতের ৩৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। তাছাড়া ওই ব্যাংকটি রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এনেছে। ইসলামি ব্যাংকের এজেন্ট শাখাগুলোর মাধ্যমে মোট রেমিট্যান্সের ৫২ দশমিক ৮১ শতাংশ এসেছে। অর্থাৎ চলতি বছরের জুন শেষে প্রবাসীরা ইসলামি ব্যাংকের এজেন্ট শাখাগুলোতে ৫১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। এদিকে এজেন্ট ব্যাংক প্রসঙ্গে ইসলামি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মনিরুল মওলা জানান, ইসলামি ব্যাংক সাধারণ মানুষদের কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ ইসলামি ব্যাংকে টাকা রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাছাড়া গ্রামগঞ্জের গ্রাহকরা সুপ্রশিক্ষিত এজেন্ট ব্যাংকারের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আসা রেমিট্যান্স অল্প সময়ের মধ্যে হাতে পাচ্ছে। অন্যদিকে এজেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ প্রদান প্রসঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, এজেন্ট ব্যাংক এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এতোদিন গ্রামীণ পর্যায়ে যারা ব্যাংকিং সেবার বাইরে ছিল তাদের এজেন্ট শাখাগুলোর মাধ্যমে ব্যাংকের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। গ্রামীণ পর্যায়ের মানুষেরা এখন এজেন্ট শাখাগুলো থেকেই ব্যাংকের সব ধরনের সেবা পাচ্ছে। বিদেশে থাকা আত্মীয়দের পাঠানো রেমিট্যান্স পাচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে ঋণ পাচ্ছে এবং টাকা জমা রাখতে পারছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও ব্যয়-সাশ্রয়ী হওয়ায় এজেন্ট ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ সেবায় গ্রাহক এজেন্ট আউটলেটে সহজেই তার বায়োমেট্রিক বা হাতের আঙুলের স্পর্শে হিসাব পরিচালনা করতে পারছে। ফলে কম খরচে সহজে ব্যাংকিং সেবা পাওয়ায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে তা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গ্রামীণ সুবিধা বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতেই এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা রাখতে ওই ব্যাংক বড় ভ‚মিকা রাখছে।