এফএনএস এক্সক্লুসিভ: সারা দেশের সড়কে চলাচলরত অর্ধেক বাসই লক্কড়ঝক্কড়। কার্যকর হচ্ছে না মোটরযান স্ক্র্যাপ নীতিমালা। ফলে সড়ক থেকে কমানো যাচ্ছে না লক্কড়ঝক্কড় বাসের বোঝা। বরং একের পর এক ব্যর্থ হচ্ছে সরকারের সব উদ্যোগ। আর আগের মতো বর্তমান সরকারও কাটাতে পারছে না পরিবহন মালিকদের কাছ থেকে জিম্মিদশা। যদিও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বর্তমান সরকার পুরনো বাসের জঞ্জাল সরাতে চাইছে। ওই লক্ষ্যে গত অক্টোবর মাসে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় একটি বৈঠক করে। ওই বৈঠক থেকে ছয় মাসের মধ্যে পুরনো বাস সরাতে মালিকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাস মালিকদের সড়ক থেকে পুরনো বাস সরানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও তা বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। বরং বাস মালিকরা সরকারকে শর্তের চাপে রেখেছে। বিআরটিএ তথ্যানুযায়ী চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে নিবন্ধিত বাস রয়েছে ৫৫ হাজার ৭২১টি। আর নিবন্ধিত মিনিবাসের সংখ্যা ২৮ হাজার ৪৩৩টি। ওসব বাসের মধ্যে সব সড়কে চলছে না। তবে কত পরিমাণ বাস নিয়মিত চালাচল করে তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য বিআরটিএর কাছে নেই। সূত্র জানায়, ২০ বছরের পুরনো বাস সড়ক থেকে একেবারে সরিয়ে ফেলতে হবে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া তালিকায় এমন বাসের ৩৫ হাজার ৭৮২টি। অর্থাৎ সারা দেশে মোট নিবন্ধিত বাসের মধ্যে ৪২.৫২ শতাংশ বাস চলাচলের অনুপযোগী। ঢাকায় নিবন্ধন নেয়া বাসের সংখ্যা ৪২ হাজার ৪৫৪টি। মিনিবাসের সংখ্যা ১০ হাজার ২২৬টি। মোট ৫২ হাজার ৬৮০টি বাস—মিনিবাসের মধ্যে ১৪ হাজার ৬১০টি বাস ২০ বছরের পুরনো। ঢাকা থেকে ৫২ হাজার ৬৮০টি বাস—মিনিবাসের নিবন্ধন নেয়া হলেও ঢাকায় দিনে গড়ে চার হাজারের বেশি বাস চলাচল করে না। আর নিবন্ধনের তালিকায় ১৯৭২ সালের বাসও রয়েছে। ফলে তালিকায় থাকা বেশির ভাগ বাস বাস্তবে নেই। সূত্র আরো জানায়, রাজধানীতে মোট ৪২টি পথে ভাগ করে এক কোম্পানির অধীনে বাস চালানোর পরিকল্পনা ছিলো। নির্দিষ্ট স্থানে বাস থামবে ও যাত্রী ওঠানামা করবে, পরিবহন শ্রমিকদের জন্য থাকবে নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা এবং মাসিক বেতন। ফলে সড়কে অসুস্থ প্রতিযোগিতা কমে আসবে। কিন্তু ওই উদ্যোগে কোনো আশার আলো নেই। মূলত সমন্বয়হীনতার কারণে ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অতিস¤প্রতি ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সঙ্গে বাস মালিকদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক বলা হয় বাসের আয়ুষ্কাল ২০ বছরই থাকবে। আর ব্যক্তি পর্যায়ে নতুন বাস কেনার জন্য ঋণের ব্যবস্থার দায়িত্ব ডিটিসিএ নেবে না। তবে কোম্পানির অধীনে যদি বাস চলে তাহলে সহজ শর্তে ব্যাংকের ঋণ পেতে ডিটিসিএ সহযোগিতা করবে। এদিকে বিগত সরকার মোটরযান স্ক্র্যাপ নীতিমালা—২০২৩ নামে একটি খসড়া চূড়ান্ত করেছিলো। এর পর পরই ২০ বছরের পুরনো বাস—মিনিবাস এবং ২৫ বছরের পুরনো পণ্যবাহী যান ধ্বংস করতে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে। সরকারের ওই উদ্যোগে পরিবহন মালিকরা নানা দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। পরবর্তী সময়ে গাড়ির আয়ুষ্কাল পুননির্ধারণে মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেয়া হয়। তবে ৫ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বিআরটিএ সংস্থাপন শাখা থেকে ওই প্রজ্ঞাপন স্থগিত করার বিষয়টি জানানো হয়। অন্যদিকে এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্ম—সাধারণ সম্পাদক ও ট্রান্সসিলভা পরিবহনের চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউল করিম জানান, সমন্বিত উদ্যোগে ঢাকায় ভালো বাস চালানো সম্ভব। আমরাও চাই ভালো বাস চলুক। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি হোক। সার্বিক বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, বিআরটিএর মাধ্যমে বাস মালিকদের নোটিশ দেয়া শুরু হচ্ছে। ব্যাংকের সঙ্গেও ওদের একটা লেনদেন আছে। কিন্তু ছয় মাস পর কিছু টোকেন বাস হলেও সরিয়ে দেয়া হবে। যেন বাস মালিকরা বুঝতে পারে এটা শুধু কথার কথা না। আবার একসঙ্গে সব বাস সরানো যাবে না। ধাপে ধাপে সব পুরনো বাস সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হবে।