এফএনএস : দেশে খোলা ভোজ্যতেল বিক্রি বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মূলত ভোজ্যতেলের গুণগতমান বজায় রাখা, মিলগুলোর উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিশ্চিত হওয়া, দাম বাড়ানোর অভিপ্রায়ে গুদামজাতকরণ হলে কোম্পানি সহজে চিহ্নিত করা, সয়াবিন ও পামওয়েলের ভেজাল প্রতিরোধ এবং সর্বোপরি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ভোজ্যতেল নিয়ে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধে খোলা ভোজ্যতেল বিক্রি বন্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। চলতি মে মাসের পর বাজারে আর খোলা সয়াবিন বিক্রির সুযোগ থাকবে না। আর আগামী ডিসেম্বর মাসের পর পামওয়েলও খোলা অবস্থায় বিক্রির সুযোগ থাকছে না। বাংলাদেশ স্টান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) পক্ষ থেকে কোম্পানিগুলোকে ভোজ্যতেল ড্রামের পরিবর্তে ফুড গ্রেড কন্টেনার, জেরিক্যান, পলিপ্যাক এবং পেটবোতল ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সামনের দিনগুলোতে খোলা সয়াবিন পলিপ্যাক মোড়কে বাজারজাত করতে হবে। এ প্যাকেটের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এবং উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের নাম উলেখ থাকতে হবে। বর্তমানে ভোজ্যতেল খোলা অবস্থায় বিক্রিতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা মিলারদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। বাজারে ৬৫ শতাংশ ভোজ্যতেল এখন খোলা অবস্থায় বিক্রি হয়ে থাকে, আর বাকি ৩৫ ভাগ বিক্রি হচ্ছে পলিপ্যাক কিংবা পেটবোতলে। কিছু ভোজ্যতেল টিনের ছোট ড্রামেও বিক্রি হয়ে থাকে। খোলা অবস্থায় যেসব ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে তা খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাছাড়া পুষ্টিমান নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। শুধু তাই নয়, তেল সরবরাহে দেশের শীর্ষ কোম্পানিগুলো যে ড্রামগুলো ব্যবহার করছে তা মূলত বিভিন্ন রং কিংবা অন্যান্য আমদানিকৃত রাসায়নিক পণ্যের অব্যবহৃত খালি ড্রাম। সূত্র জানায়, ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ও ব্যবসা করলেও নিজস্ব সিলমোহরকৃত কোন ড্রাম ব্যবহার করছে না। অভিযান চালিয়ে সারাদেশে হাজার হাজার ড্রাম ভোজ্যতেল উদ্ধার করা হলেও সেগুলো কোন কোম্পানির তেল তা নিশ্চিত হতে প্রশাসনকে বেগ পেতে হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মজুদকৃত তেলের সন্ধান পাওয়া গেলেও ওসব তেলের সরবরাহকারী বা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। নিজস্ব পলিপ্যাক না থাকায় পামওয়েল তেল সয়াবিন হিসেবে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাতে ক্রেতারা ঠকলেও কোম্পানিগুলো কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নিচ্ছে। চলতি বছরের শুরুতেই বাণিজ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন মে মাসের পর সয়াবিন তেল আর খোলা অবস্থায় বিক্রি করা যাবে না। তাছাড়া ডিসেম্বর শেষে পামওয়েলও খোলা অবস্থায় বিক্রি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে পলিপ্যাক কিংবা অন্য কোন প্যাকে ভোজ্যতেল বিক্রির প্রস্তুতি নিতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাণিজ্যমন্ত্রী অনুরোধ জানিয়েছিলেন। সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ ভোজ্যতেল এসব অস্বাস্থ্যকর ড্রামে বাজারজাত করা হয়। বাকি ৩৫ শতাংশ বোতলের মাধ্যমে বাজারজাত হয়। ভোজ্যতেল পরিবহনের ড্রামগুলো নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। ভোজ্যতেলের জন্য নির্দিষ্ট কোন ড্রাম না থাকায় কেমিক্যাল, লুব্রিক্যান্ট বা মবিল অথবা অন্যান্য পণ্যের ব্যবহৃত ড্রামগুলোই তেল পরিবহনে পুনর্ব্যবহার করা হয়, যা প্যাকেজিং আইনের পরিপন্থী। বর্তমানে বোতলজাত কিংবা খোলা দুভাবেই সয়াবিন তেল বাজারজাত করা হচ্ছে। তবে সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত বোতলজাত সয়াবিনের বাইরে বাকি খোলা সয়াবিন পলিপ্যাক মোড়কে বাজারজাত করতে হবে। তাতে বাজার তদারককারী প্রতিষ্ঠান অভিযানে গেলে পণ্যের ওজন, মান, দাম এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে সহজে চিহ্নিত করে অভিযোগ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে। খোলা সয়াবিন তেল খুচরা বাজারে প্যাকেটজাত করে বিক্রি নিশ্চিত করতে শিল্প মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছর চিঠি দিয়েছে। গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে শিল্প সচিবের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে সয়াবিন তেলের যথাযথ মান রক্ষা, সয়াবিন তেলের সঙ্গে পাম তেল মেশানোর প্রবণতা পরিহার, লিটার না কেজি এ ধরনের বিভ্রান্তি দূর করতে খোলা সয়াবিন বাজারজাত করার পরিবর্তে প্যাকেটজাত মোড়কে সরবরাহ নিশ্চিত করতে বলা হয়। এদিকে সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিএসটিআই কর্তৃক ভোজ্যতেলের ড্রাম ব্যবস্থাপনা নিয়মিত মনিটরিং করার লক্ষ্যে গঠিত কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় জানানো হয়- ইতোমধ্যে খোলা সয়াবিন বিক্রি বন্ধ করার যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে তা আর পরিবর্তনের সুযোগ নেই। এ সময় বৃদ্ধি করা হলে সভায় জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষ বাজার মনিটরিং করা সমস্যা হবে। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান জানান, চলতি মে মাসের পর আর খোলা অবস্থায় সয়াবিন বিক্রির সুযোগ থাকছে না। এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। ভোক্তা স্বার্থেই খোলা তেল বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আসছে। আশা করা যায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারী নির্দেশনা মেনে খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ থেকে সরে আসবে।